বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম নগরীর ৭৫ ভাগ ভবন ধসে পড়তে পারে বাপা’র মতবিনিময়ে তথ্য প্রকাশ

প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার প্রচÐ ভূমিকম্প সংঘটিত হলে তাতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে শতকরা ৭৫ ভাগ ভবন ধসে পড়তে পারে। ছয় মাত্রার ভূমিকম্পের (মাঝারি-উঁচু) ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে ৬১ শতাংশ ভবন। বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণেই এই ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানহীন অথবা অল্পস্বল্প মানসম্পন্ন বাসস্থান ও স্থাপনা নির্মাণ, নিম্নমানের অবকাঠামো চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের ফলাফলকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের উদ্যোগে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও আমাদের করণীয় ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট আলোচকগণ এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। অনিয়ন্ত্রিত বাসস্থান নির্মাণ, শিল্পায়ন ও লাগামহীন অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চট্টগ্রাম শহরের ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। ভূকম্পন এলাকার মানচিত্রে ঝুঁকির দিক থেকে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাঝে-মধ্যে ছোট বা মাঝারি ধরনের ভূকম্পন অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কাকে বৃদ্ধি করে তোলে।
জিয়া স্মৃতি জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সিকান্দার খান। বাপার সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবু নোমানের সঞ্চালনায় এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল। প্রধান আলোচক ছিলেন বাপা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন। এতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ডেপুটি এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর মো. কামাল উদ্দিন ভূমিকম্প থেকে আত্মরক্ষার উপায় সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেন।
মতবিনিময়ে অংশ নেন প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ, অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরীয়া, স্থপতি বিধান বড়ুয়া, স্থপতি সুভাস বড়ুয়া, জেসমিন সুলতানা পারু, অধ্যাপক হামিদুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ইউনুচ হাসান, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সিদ্দিকুল ইসলাম, মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
বাপার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল বলেন, ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ডেপুটি এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর মো. কামাল উদ্দিন জানান, আগুন লাগলে সর্বোচ্চ ১৬০ ফুট উঁচু পর্যন্ত কাজ করার সরঞ্জাম ফায়ার সার্ভিসের কাছে আছে। এছাড়া কোর কাটার আছে মাত্র একটি। তিনি জানান, সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্যমতে (সিডিএমপি) রিখটার স্কেলে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬১ ভাগ ভবন ভেঙে পড়তে পারে। রাতে সংঘটিত একটি ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে এবং প্রায় ৭ হাজার মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিতে হবে। এক লাখেরও বেশি মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য মেডিকেল সেবা দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি জানান, এ ধরনের ভূমিকম্পে প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ ভগ্ন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়তে পারে। যাদের খুঁজে বের করে উদ্ধার করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দেবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চিহ্নিত খোলা জায়গাসমূহে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং আহত মানুষের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে বড় ধরনের ভূমিকম্পে দুর্বল ভবনে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালও ভেঙে পড়তে পারে।
ড. অলক পাল বলেন, ভূমিকম্পের পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রায় অসম্ভব হওয়ায় অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একে মোকাবেলা করা প্রয়োজন। নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাসমূহ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সমন্বয় সাধন করতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্য, ত্রাণ, আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, পানি সরবরাহ, নগর সেবা ও নিরাপত্তা প্রদানসহ অন্যান্য বিষয় তদারক করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শহরে মৃত্যু ও রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো, ধ্বংসাবশেষ সরানো, নাগরিক সুবিধাসমূহ পুনরায় চালু করা, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার জরুরি অংশ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সশস্ত্র বাহিনী, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা দপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনায় প্রথম ও প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে বলা হয়, ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। এরমধ্যে রয়েছে, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিভিন্ন স্থাপনার নকশা পুনর্মূল্যায়ন, ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ, স্কুল নিরাপত্তা ও উদ্ধার তৎপরতা, কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি ও যোগাযোগের উপাদানসমূহ উন্নত ও দায়িত্ব বন্টন করা।
মতবিনিময় সভায় ভূমিকম্প মোকাবেলায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে রয়েছে, বিভিন্ন আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি এজেন্সি, কমিউনিটি, সরকারি এজেন্সি, কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় স্থাপন, সহনীয়, সক্ষম শহরের পরিকল্পনা ও প্রচারণা, অধিক সক্ষমতা অর্জন (অবকাঠামোগত, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার, প্রশিক্ষিত জনবল, কমিউনিটি সতর্কতা বৃদ্ধি (মিডিয়া, তথ্যচিত্র), উন্নত নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা এবং ভূমিকম্প ও এর সম্ভাব্য ফলাফলের ওপর অধিকহারে গবেষণা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন