বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ ছারছীনা পীর সাহেবের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ছারছীনার মরহুম পীর সাহেব মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ সাহেব এরশাদ সাহেবের শাসনামলে যখন তিনি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে ভেঙ্গে দিয়ে তখনকার একজন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে সভাপতি করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গঠন করলেন। তখন আমাদেরকে ৫১ জনকে নিয়ে এরশাদ সাহেবের বাসভবনে গেলেন তিনি। সেখানে তিনি রীতিমতো তাকে এই বিষয়ে ধমক দেন। সেখানে তার নিরাপত্তা প্রহরীরা এগিয়ে আসলে এরশাদ সাহেব তাদের বারণ করে বলতে থাকেন ইনি আমার বাবার মতো। আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সদর ঘাটে ছারছীনা দরবার শরীফের খানকাহ ছিলো, তখন কাজী জাফর সাহেব প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। তখন তার কাছে গেলেন ছারছীনা পীর সাহেব হুজুর। মুফতি ওয়াক্কাস সাহেবকে হুজুর বলতে লাগলেন, এখন তো পতাকা লাগানো গাড়িতে ঘুরেন, এক সময় রিকশাও পাবেন না আলেমদের সাথে ফেসাদ করার জন্যে, পরবর্তীতে এমনটাই ঘটেছিল সেই প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্যে।
আজ শনিবার (৫ মার্চ) দুপুরে ছাগলনাইয়া পৌরসভার বাগানবাড়ীর খানকায়ে ছালেহিয়া মোহেব্বীয়া দীনিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজীর সম্মানে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন, আল্লাহর ওলীদের দৃষ্টি অনেক প্রকট,তারা অনেক দুর দেখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামিয়া আহমদিয়া মাদ্রাসায় ১৯৯১ সালে আমি প্রথম গিয়েছিলাম মাওলানা জালাল উদ্দিন আল কাদেরী সাহেব ছিলেন তখন অত্র মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। সেখানেও একটি দরবার কেন্দ্রীক তারা মাদ্রাসাটিকে গড়ে তুলেছেন। তাদের সেই আক্বিদাহ, তাদের সেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পতাকাকে প্রসারিত করতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমরা জমিয়াতুল মোদার্রেছীন যারা করি তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দরবারের সাথে জড়িত আছি। ১৯৮৩,৮৪,৮৫ সালে তিনবার মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান সাহেবের সাথে হজ্বের সফরে সঙ্গী হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বাগদাদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি বলেন আমি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিবের দায়িত্ব ২০০৩ সালে নিয়েছিলাম। তখনি আমাকে মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান সাহেব নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বপ্রথম ছারছীনা দরবার শরিফে গিয়ে জেয়ারত করে কার্যক্রম শুরু করার। আমি যথারীতি তার হুকুম মান্য করে জেয়ারত শেষেই জমিয়তের কাজ শুরু করি। আমাদের বর্তমানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছারছীনা দরবার শরীফের গদিনশীন পীর সাহেব শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ সাহেব আমাকে বলেন এক জায়গায় যেতে হবে। অতঃপর তার নির্দেশে পটুয়াখালীর দ্বীনিয়া মাদ্রাসায় আমার সফর অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে, মাদ্রাসার শিক্ষার সাথে, মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের সাথে, এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত প্রতিষ্ঠার জন্য ছারছীনা দরবার শরীফের যে সম্পর্ক অথবা যে অবদান তা অতুলনীয়। এছাড়াও সেখানকার হুজুরদের মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের প্রতি যে আন্তরিকতা, দ্বীনি এলেম প্রচার-প্রসারের জন্য তার যে অবদান তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে দীনিয়া মাদ্রাসার সাথে জড়িত থেকে যারা সহযোগিতা করছেন প্রতিনিয়ত তারা শুধু মাদ্রাসাকেই সহযোগিতা করছেন না বরং এটা আমাদের ধর্ম, দ্বীন ইসলামকে সহযোগিতা করা আর একটি সুন্দর সমাজব্যবস্থা গঠনে সহযোগিতা করা।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে ও আমাদের ছারছীনার পীর সাহেব হুজুরের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ফুলতলী পীর সাহেব হুজুরের সঙ্গে নির্দলীয়ভাবে আমরা আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।
উক্ত কমপ্লেক্সের সভাপতি, পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বাংলাদেশ নিউজ এ্যজেন্সির (বিএনএ) সম্পাদক, বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মজুমদারের সভাপতিত্বে ও কমপ্লেক্সের পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও মুদীর মাওলানা মুফতি মোঃ সাকিব মাহমুদ এর পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্ট্যাডি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসার ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ ছিদ্দিকী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন