শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবাব সিরাজউদ্দৌলা শাহাদতবার্ষিকী সংখ্যা

ইউরেশিয়াতে একক আধিপত্য ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল

একবিংশ শতাব্দীর আধিপত্য যুদ্ধ ২

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২২, ১২:১৮ এএম

ন্যাটোর সম্প্রসারণ কেন্দ্রস্থল থেকে আটলান্টিক এবং ভ‚মধ্যসাগরীয় উপক‚ল বরাবর তার সীমানাকে আরও দূরে বিস্তৃত করেছে এবং বৃহত্তর রাশিয়ার সীমানা দেশটির কাছাকাছি কয়েকশ মাইলে মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এটি তার মূল ভূখন্ডকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং মস্কোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা নিজেদের শত্রæ বেষ্টিত দেখছে তার এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে।

পুতিন ২০০৭ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেন, ‘আমি মনে করি এটা স্পষ্ট যে, ন্যাটো সম্প্রসারণের সাথে জোটটির আধুনিকীকরণ বা ইউরোপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোন সম্পর্ক নেই। বরং, এটি একটি মারাত্মক উস্কানির প্রদর্শনী, যা পারস্পরিক বিশ্বাসের মাত্রা হ্রাস করে। এবং আমাদের জিজ্ঞাসা করার অধিকার আছে: এই সম্প্রসারণের অভিসন্ধি কার বিরুদ্ধে?’ যাইহোক, ২০০৮ সালে দুই প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রস্ফুটিত করেছিল।

সর্বোপরি, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে একটি ৬ শ’ মাইল সীমানা রয়েছে। তাই রাশিয়ার আশঙ্কা যে, ইউক্রেন যদি কখনও ন্যাটোতে যোগ দেয়, পশ্চিমারা রাশিয়ার সীমান্তে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সহ শক্তিশালী অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে। রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করার ঠিক আগে ২১ ফেব্রæয়ারী পুতিন একটি অগ্নিগর্ভ ভাষণে বলেন, ‘পশ্চিমারা ইউক্রেনের ভ‚খÐকে একটি ভবিষ্যত মঞ্চ, ভবিষ্যত যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে অন্বেষণ করেছে, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাক করা হয়েছে। যদি ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসাবে কাজ করবে।’

পুতিন এবং তার শীর্ষ নিরাপত্তা সহযোগীদের জন্য ইউক্রেন আক্রমণ প্রাথমিকভাবে এ ধরনের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে রোধ করার পাশাপাশি, রাশিয়ার সীমানাগুলিকে তার নিজের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রস্থল থেকে দ‚রে সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এবং এভাবে ইউরোপীয় যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটির কৌশলগত সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তবে, রাশিয়ান সামরিক বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য সাধারণ ইউক্রেনীয়দের সংকল্প এবং রামিয়ার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো বিষয়গুলি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ অবস্থানে পৌছে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই মাত্রার যেকোন ভ‚-রাজনৈতিক আক্রমণে এই ধরনের কঠিন ঝুঁকি রয়েছে।

ওয়াশিংটনও এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ক্রুর ভ‚-রাজনৈতিক হিসাব দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং এর ফলে প্রায়ই রাশিয়ার মতো প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। কাঁচামাল এবং বিদেশী বাজারগুলির উপর উল্লেখযোগ্য নির্ভরতা সহ একটি প্রধান বাণিজ্য জাতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে কিউবা, হাওয়াই এবং ফিলিপাইন সহ বিশ্বব্যাপী কৌশলগত দ্বীপগুলি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এবং সেগুলির দখল সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করেছে। সেই অনুসন্ধান আজও অব্যাহত রয়েছে এবং বাইডেন প্রশাসন ওকিনাওয়া, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ বা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।

ইংরেজ ভ‚গোলবিদ স্যার হ্যালফোর্ড ম্যাকিন্ডার (১৮৬১-১৯৪৭) বলেছিলেন যে, সম্মিলিত ইউরেশীয় মহাদেশ বৈশ্বিক সম্পদ, মূলধন এবং জনবলের এত বড় অংশের অধিকারী যে, যে জাতি এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে, তারা কার্যত বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এর থেকে এই যুক্তিটি অনুসরণ করে গ্রেট ব্রিটেনের মতো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে এবং রূপকভাবে বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরেশিয়ার প্রান্তে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি বজায় রাখতে হয়েছে এবং যেকোনো একক ইউরেশীয় শক্তিকে অন্য সকলের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন থেকে প্রতিহত করতে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সূত্র : ট্রুথ আউট। (চলবে)

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
MD Zinat Rayhan Limon ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
আমেরিকার অবস্থান সুদৃঢ় বা অস্ত্র বিক্রি বাড়ানো, যাই বলেন না কেন? তার সুস্পষ্ট বলি হলো ইউক্রেন। ১.রাশিয়াকে যুদ্ধ বাধাতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল অনেকদিন ধরে।কারন রাশিয়া যুদ্ধ জড়ালে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করা যাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে।কারন রাশিয়ার কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে যার ফলে তাকে যুদ্ধের মাধ্যমে পঙ্গু করতে গেলে নিজেদেরও ক্ষতি হবে ভয়াবহ রকমের। ২.আমেরিকা ও পশ্চিম জোট তাদের মোড়লগিড়ি বজায় রাখার জন্য তাদের কাটা রাশিয়া ও চীনকে ঘায়েল করতে চায়।এইজন্য ইউক্রেন,তাইওয়ানকে দাবার ঘুটি হিসাবে ব্যাবহার করতেছে।
Total Reply(0)
Ramesh Biswas ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
আমি বলতে চাই, যুদ্ধ মানে খতি যুদ্ধ মানে অগুনিত মৃত্যু। তাই যে কোনো ভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। সবার আগে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। এই যুদ্ধে কে জিতবে কে হারবে। সেটা বড় কথা নয়। আগে মানুষের জীবন মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জরুরি।
Total Reply(0)
Umayer Zaman ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
ইউক্রেনের পরাজয় ঘটলে ইউরোপে আমেরিকার প্রভাব কমে রাশিয়া ও চিনের প্রভাব বেড়ে যাবে। পশ্চিমা-আমেরিকা এবং রাশিয়া-চিনের মধ্যে ক্ষমতার সমতা তৈরি হবে। তার মধ্য থেকেই বিশ্ব বেছে নিবে নতুন নেতৃত্ব। হয় আমেরিকা ও পশ্চিমাদের এমন কোন উদ্যোগ নিতে হবে যার কারণে বিশ্ব তার দিকে ঝুকতে বাধ্য হয় নতুবা রাশিয়া-চিনের দিকে নতুন বিশ্ব ঝুকে যাবে।
Total Reply(0)
মাসুম বিল্লাহ বাগেরহাট ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২৪ এএম says : 0
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আমেরিকান নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিপক্ষে চীন-রাশিয়ার পাল্টা প্রভাব তৈরির সুচনা বলে আমি মনে করি। যুদ্ধে বাংলাদেশ উভয় সংকট থাকার পেছনে আমি মনে করি আন্তর্জাতিক রাজনীতি বড় কারণ!
Total Reply(0)
Jakir Al Faruki ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২৪ এএম says : 0
ন্যাটোকে রাশিয়ার দরজায় নেওয়ার ধারণা ছিলো ভুল। তবে রাশিয়ার স্বৈরশাসক পুতিনের, এর মধ্যদিয়ে পতন হবে, সাথে বিশ্বব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার একক ক্ষমতা কারো নেই সেটাও প্রমাণিত। এখন হবে বহুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন