শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবাব সিরাজউদ্দৌলা শাহাদতবার্ষিকী সংখ্যা

ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

পাশেই ফুট ওভার ব্রিজ। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে দুয়েক মিনিট সময় বাঁচাতে তারা ব্রিজ ব্যবহার না করে যানবাহনের সামনেই দৌঁড়ে পার হয় সড়ক। দু’পাশ থেকে উচ্চগতিতে আসা গাড়ির দিকে যেন তাকানোর সময় নেই। ঝুঁকি নিয়ে রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে লাফিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ রকম দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়ক চার লেন হওয়ার পর গাড়ির গতিও বেড়ে গেছে। এতে দূরের যাত্রীরা উপকৃত হলেও ঝুঁকি বেড়েছে মহাসড়ক সংলগ্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ও সড়কের পাশে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের। সড়ক পারাপারে তাড়াহুড়ার কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রতিটি বাসষ্ট্যান্ড ছাড়াও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন করেছে। কিন্তু সামনে ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ছাড়া বেশির ভাগই ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে। এছাড়াও মহাসড়কে বড় গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে লেগুনা ও সেফ লাইন, মিনি মাইক্রো নামে ৬ শতাধিক গাড়ি এ মহাসড়কে চলাচল করে। এখানকার প্রায় ৫ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বেশির ভাগই অদক্ষ। যার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লার পদুয়া বাজার এলাকায় এক পথচারী রাস্তার দক্ষিণ পাশ থেকে রোড ডিভাইডারের উপর লাফিয়ে উঠছে আবার গাড়ি আসতে দেখে অপেক্ষা করছে। পরে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার উত্তর পাশে আসেন। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারের বিষয়ে ওই পথচারী বলেন, আমি সচেতন ব্যক্তি।

ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে মাধাইয়া মুক্তিযোদ্ধা কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফুট ওভারব্রিজটি আমাদের কলেজ গেট থেকে কয়েক শ’ হাত পূর্বে। সেখানে পৌঁছানোর আগেই আমরা কলেজের সামনে দিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছি।

এ বিষয়ে চান্দিনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব এক্সিডেন্টস এর চেয়ারম্যন কাজী রাশেদ বলেন, প্রতিদিন বহু লোক ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রোড ডিভাইডার অতিক্রম করে রাস্তা পার হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা অংশে গত বছরের দুর্ঘটনার তথ্য অনুযায়ী এবার দ্বিগুণ বেড়েছে। হাইওয়ে পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ৭ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছোট-বড় ১৮৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় পথচারী, চালক ও চালকের সহকারীসহ ৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে তিনশতাধিকের বেশি। দুর্ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছে। কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, মহাসড়কের সীতাকুন্ড অংশে চালকের ওভারস্পিড, ওভারটেক ও ওভারলোডের কারণে ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে অধিকাংশ চালকের দুর্বলতা। এ ছাড়া চালকের পরিবর্তে তার সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানোর ফলেও ঘটছে দুর্ঘটনা। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যদি মহাসড়কের ফুট ওভারব্রিজগুলো দিয়ে পথচারীরা রাস্তা পার হতেন তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর মীরসরাই সদর, বড়দারোগাহাট, নিজামপুর কলেজ, বারইয়ারহাট ও ধুমঘাটে পাঁচটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বারইয়ারহাট ট্রাফিক মোড়ে। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে এখানে চলতি বছরে ৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এছাড়া বড়দারোগাহাট, নিজামপুর, মীরসরাই সদরেও সড়ক পার হওয়ার সময় অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

বারইয়ারহাট পৌর বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, বারইয়ারহাট যে জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ হয়েছে সেখানে মানুষ যায় না। ফেনী থেকে আসা যাত্রীরা গাড়ি থেকে নামে বাজারের উত্তর পাশে। চট্টগ্রাম সিটি থেকে যাত্রীরা নামে ট্রাফিক মোড়ে। এরপর একটু হেঁটে গিয়ে কেউ ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চান না।
ব্যবসায়ী শাহআলম সৈকত বলেন, সড়ক দিয়ে মানুষ পারাপারের পথ যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করবে। বেসরকারি চাকরিজীবী বশির আহমেদের দাবি, অনেক বয়স্ক নারী-পুরুষ ও রোগী ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া ব্রিজের সিঁড়িগুলো বেশি খাঁড়া হওয়ায় মানুষ উঠা-নামা করতে হাঁপিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেলা ট্রাফিক ইনসপেক্টর আশরাফুল ইসলাম বলেন, বারইয়ারহাটে নির্মিত ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন শতকরা পাঁচজন পথচারী। বাকি সব মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয়। কিছুদিন আগে রাস্তা পার হওয়ার সময় এক বৃদ্ধা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। তাকে যখন উদ্ধার করছিলাম তখনও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। বিশেষ করে বারইয়ারহাট ট্রাফিক মোড় খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর ফুট ওভারব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। যাদের জন্য নির্মাণ হয়েছে তারা ব্যবহার না করা দুঃখজনক। সড়কের মাঝে আইল্যান্ডের ফাঁকা অংশগুলো বন্ধ করা যায় কিনা সে বিষয়েও আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন