নানামুখি জটিলতা কাটিয়ে প্রায় পৌনে ৬শ কোটি টাকা ব্যায়ে দুটি ভিন্ন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা/মোংলা মহাসড়কের বরিশাল মহানগরী অংশ সহ ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে। তবে এ জন্য বরিশাল জিরো পয়েন্ট থেকে ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটির উন্নয়নে ৩১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্পটির ব্যায় প্রায় সোয়া ৫শ কোটিতে উন্নীত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি প্রকল্পটি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করায় এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন সম্ভব দ্রুততম সময়ে ভ’মি হুকুম দখল সম্পন্ন করলে ২০২৪-এর মধ্যেই ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটি ১২ ফুট হার্ডসেল্ডার সহ ৩৪ ফুট প্রসস্ত করে মান উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
বিদ্যমান ক্যারেজওয়ের মান উন্নয়ন সহ মহাসড়কটির জন্য অনুমোদিত প্রকল্পটি গত অর্থ বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ভ’মি অধিগ্রন না করেই বিদ্যমান মহাসড়কটি প্রশস্ত করণ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে গিয়ে নানামুখি জটিলতায় তা আটকে যায়। ফলে পুরো প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পরে। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের এ প্রকল্পটির আওতায় বরিশালের ১৩.৩৬ কিলোমিটার, ভোলাতে ১৬.৪৭ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুরে প্রায় ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রসস্ত করণ সহ মান উন্নয়নের কথা রয়েছে। এখন ভূমি অধিগ্রহন সহ প্রকল্পটির সংশোধিত ব্যায় দাড়িয়েছে প্রায় ৫২০ কোটি টাকা।
অপরদিকে বরিশালÑফরিদপুর ঢাকা মহাসড়কের বরিশাল মহানগরীর প্রবেসদ্বার ‘গড়িয়ার পাড়’ এলাকা থেকে মহানগরী হয়ে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার অংশের উন্নয়নেও ৫৫ কোটি টাকার একটি ভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আগামী মার্চে। বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তর দিয়ে বহমান এ মহাসড়কটির উন্নয়নে দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের ‘প্রিওডিক ম্যান্টেনেন্স প্রজেক্ট’এর আওতায় দুটি প্যাকেজে ১৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মহাসড়কের এ অংশের ডিভাইডারের দু পাশে মূল ক্যারেজওয়ে দুই লেন করে ৪ লেনের আদলে ৪৮ থেকে ৫৫ ফুট পর্যন্ত প্রসস্ত করার পাশাপাশি পরিপূর্ণ ওভার-লে করা হবে। পাশাপাশি মহাসড়কটির এ অংশে সব ধরনের সড়কÑসংকেত ব্যবস্থা সহ সড়কের ওপর মার্কিং করে যানবাহনের চলাচল নিরাপদ ও নির্বিঘœ করা হচ্ছে। এরফলে বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তর দিয়ে চলে যাওয়া জাতীয় মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল অনেকটাই নির্বিঘœ ও নিরাপদ হবে বলে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
অপরদিকে বরিশালÑভোলাÑলক্ষ্মীপুর মহাসড়কটির মানোন্নয়নে ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ তৈরীর সময় যথাযথ সমিক্ষা সহ বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ না করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। মূল ডিপিপি’তে ভ’মি অধিগ্রহনের বিষয়টি অন্তভর্’ক্ত না থাকায় ডিপিপি সংশোধন করে সড়ক অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরন করতে হয়েছে। ভ’মি অধিগ্রহন সহ কয়েকটি কালভার্ট প্রসস্ত করতেও প্রকল্প ব্যায় ৩১২ কোটি থেকে এখন প্রায় ৫শ ২০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে ।
এ মহাসড়কটির মাধ্যমেই চট্টগ্রাম,বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্বম বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান। উপক’লীয় এ জাতীয় মহাসড়টির কারণে উল্লেখিত ৩টি বিভাগের মধ্যে দুরত্ব প্রায় ৩০Ñ৪০ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়া ছাড়াও চট্টগ্রামÑঢাকা মহাসড়কটির ওপর যানবাহনের চাপও হ্রাস পাবার কথা।
দুবছর আগে কার্যাদেশ দেয়ার পরেও মহাসড়কটির বরিশাল সড়ক বিভাগের ১৪ কিলোমিটারের বেশীরভাগ অংশে ব্যাক্তি মালিকানার জমিতে নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরুই করতে পারেনি। এখন মহাসড়কটির বরিশাল অংশে প্রায় ২৫.৪২ হেক্টর জমি হুকুম দখলে প্রায় ১৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সহ প্রকল্প ব্যয় ৫২০ কোটিতে উন্নীত হল।
অপরদিকে, ভোলা সড়ক বিভাগের আওতাধীন ১৬.৪৭ কিলোমিটার মহাসড়কটি নির্মানকালে এর দু পাশে যেসব গাছ লাগান হয়েছিল, প্রসস্তকরন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তার একটি বড় অংশই কাটা পড়েছে। সরকারী নীতিমালার অলোকে এসব গাছ অপসারন করে মহাসড়কটি প্রসস্ত করার উদোগে নেয়া হলেও একটি এনজিও’র আবেদনে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হলেও তা দুরিভুত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর প্রান্তের ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়নে তেমন কোন সমস্যা না থাকায় সেখানে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। মহাসড়কটির বরিশাল অংশে যেখানে সড়ক বিভাগের নিজস্ব জমি রয়েছে, সেখানে নির্মান প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে ।
তবে ডিপিপি অনুমোদনের পরেও সব আইনগত বিধি বিধান অনুসরন করে ভ’মি অধিগ্রহনে অন্তত ছয় মাস থেকে ১বছর সময় প্রয়োজন হতে পাড়ে বলে মনে করছে ওয়াকিবাহাল মহল। ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের আগে পুরো প্রকল্পটির বাসন্তাবায়ন নাও হতে পরে। তবে সড়ক অধিদপ্তর ২০২৪-এর জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চচ্ছে।
এব্যাপারে প্রকল্প পরিচলক ও বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি সব জটিলতা কাটিয়ে যত দ্রত সম্ভব বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কটির মান উন্নয়ন সহ সার্বিক প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে’। পাশাপাশি বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তরে জাতীয় মহাসড়কটি উন্নয়ন কাজও আগামী মার্চের মধ্যে শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন