ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর শাহ সূফী আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী বলেছেন, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় হক্ব দরবারের পীর মাশায়েখ ও হক্কানী আলেম-উলামাদের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। সমগ্র বিশ্ব আজ চরম অশান্তি ও হতাশায় নিমজ্জিত। সারা বিশ্বে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের যৌথ ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ। মুসলিম বিশ্ব পরোক্ষভাবে তাদের গোলামিতে আবদ্ধ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্বেও আলেমদের বিশৃঙ্খলা, ইসলামী দলগুলোর অনৈক্য, পরস্পরের প্রতি হিংসাবিদ্বেষ, সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় হক্কানি ওলামা-মাশায়েখের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
পীর ছাহেব বলেন, ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই দরবার শরীয়তের পরিপন্থী কোন কর্মকা-কে সমর্থন করেনা। যুগ যুগ ধরে আল্লাহ ও তার রাসূলের পথের সন্ধান দিতে অলি আউলিয়াগণ তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করে গেছেন। কোরআন সুন্নাহর আলোকে অলি আউলিয়াগণ জীবন গড়ার উপদেশ দিয়ে গেছেন। একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
বর্তমান ফেতনা ফ্যাসাদের যুগে ঈমান আকিদা রক্ষা করার লক্ষ্যে হক্কানী পীর আউলিয়াদের অনুস্বরণের কোন বিকল্প নেই। বতর্মান প্রেক্ষপটে সমাজের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, হারাম উপার্জন, হিংসা বিদ্ধেষ ও দুর্নীতির কারণে পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বস্তরের আজ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান।
নৈতিক চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে মানব চরিত্রের পরিবর্তন আনতে হবে। আল্লাহর জিকির ছাড়া পৃথিবীর কোথাও শান্তি খুঁেজ পাওয়া যাবে না, আল্লাহর জিকির প্রত্যেকের অন্তরে জারী করতে হবে। অলি-আউলিয়াদের কাজ হচ্ছে পথ হারা ও দিশেহারা মানুষকে আল্লাহর পথের সন্ধান দেওয়া।
তিনি বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দির লক্ষ্যে তরিকত পন্থীদের চারটি কাজ রুটিন মাফিক আদায় করতে হবে। যথা, ফাতেহা শরীফ পাঠ, মোরাকাবা মোশাহেদা, দুরুদ শরীফ ও খতম শরীফ আদায় করা। একাদ্বারে ৪০ দিন পর্যন্ত তরিকতের কাজ করলে চরিত্রের নৈতিক পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। বেশি বেশি করে নবীর (সা.) উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করলে দিল রৌশন ও অন্তরে নূর ফয়দা হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহর ভয়-ভীতির মাধ্যমেই মোত্তাকি ও পরহেজগারী অর্জন করা সম্ভব।
ফান্দাউক দরবার অলি-আউলিয়াদের দরবার, এ দরবারের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত রয়েছে। অলিদের সান্নিধ্য লাভে দরবার শরীফের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতে হবে। তিনি ফান্দাউক দরবার শরীফের আদর্শ মোতাবেক সকলবে চলার জন্য আহ্বান জানান।
গতকাল শুক্রবার ফান্দাউক খেলার মাঠে পীরে কামেলে মোকাম্মেল হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুস সাত্তার নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহ.) ও যুগ শ্রেষ্ঠ পীরে কামেলে মোকাম্মেল মোজাদ্দেদে জামান হযরত শাহ সূফী আলহাজ্ব সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম আল ক্বাদরী চিশতি নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রহ.) দ্বয়ের কেন্দ্রীয় বার্ষিক ইছালে ছওয়াব মাহফিলের ১ম দিন সভাপতির বয়ানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন।
মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের নায়েবে আমীর পীরজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনী এবং মাহফিল পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, পীরজাদা আলহাজ্ব মাও. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী ও পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ বাকের মস্তোফা আল-হোসাইনী এবং মাহফিল উদ্বোধন করেন, হযরত শাহসূফী পীরজাদা বাহাউদ্দিন খোকন।
দুইদিনের ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে দেশের পূর্বাঞ্চল বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও বৃহত্তর কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলা সহ ফান্দাউকের সভায় দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মুরিদান, আশেকান, ও ভক্তবৃন্দ মাহফিলের অংশ গ্রহণ করেন। মাহফিলে দেশ বরণ্যের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ, পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামগণ ওয়াজ করেন।
মাহফিলে গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা ফাতেহা শরীফ, খতমে কোরআন, খতমে বোখারী, মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশের কল্যাণ, এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি কামনা করে পীর সাহেব মোনাজাত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন