গাজীপুরে এক নারীর ফেসবুকের স্ট্যাটাসের টিকটক স্টোরিতে ব্যঙ্গাত্মক ‘হাঃ হাঃ’ কমেন্টস দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন । এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৪ ব্যক্তি। শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গাজীপুর-নরসিংদী জেলার সীমান্তবর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও চরপাড়া এলাকায় দুই জেলার যুবকদের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ যুবককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের হিসেবে সংঘর্ষে নিহত কিশোর ও যুবকরা হলেন- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও চড়পাড়া এলাকার আলম হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন (২৬), একই গ্রামের মৃত আলম মিয়া ছেলে নাঈম হোসেন (১৮) ও মৃত হিরণ মিয়ার ছেলে রবিন (১৫)। এদের মধ্যে ফারুক রাজ মিস্ত্রি এবং রবিন ও নাঈম স্থানীয় বাজারে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন ।
কাপাসিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) পারভেজ আহমেদ সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার চরআলীনগর এলাকার জাহিদের স্ত্রী মারিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসের টিকটক স্টোরিতে ব্যঙ্গাত্মক ‘হাঃ হাঃ’ রি-অ্যাক্ট দেন একই থানার দক্ষিণগাঁও এলাকার যুবক নাঈম। এনিয়ে জাহিদের আত্মীয় ইয়াসিনের সঙ্গে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নাঈমের ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জেরে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরের নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার দৌলতপুর এলাকার যুবকদের সঙ্গে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও এলাকার যুবকদের মাঝে বিরোধ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এঘটনার পর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় আড়াল জিএল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরছিল কাপাসিয়ার সম্মানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণগাঁও এলাকার নাঈম, রবিন ও ফারুকসহ ক’যুবক ও কিশোর। পথে তারা বাড়ির নিকটবর্তী আলম সরকারের গার্মেন্টসের সংলগ্ন জামে মসজিদের কাছে পৌছলে তাদের গতিরোধ করে ওৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন মারিয়ার ফেসবুকের টিকটক স্টোরিতে ওই রিঅ্যাক্টসহ মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি দেওয়ার কারণ নাঈমের কাছে জানতে চায়। এ নিয়ে তাদের মাঝে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। ঘটনার সময় রবিনের বড় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে তাদের উপর পেছন থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় প্রতিপক্ষের এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে ফারুক, নাঈম, বিংশ উভয় পক্ষের ৭জন আহত হয়। এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে মনোহরদী ও কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এবং দুই যুবককে আটক করেন। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফারুক ও নাঈমকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। গুরুতর আহত রবিনকে ওই হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকালে তিনি মারা যান।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় আহত কাপাসিয়ার মির্জানগর এলাকার ইসমাইলের ছেলে হৃদয় (১৪), মাঈন উদ্দিনের ছেলে ইমরান (১৪) ও আমজাদের ছেলে ফাহিমকে (১৬) গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং চরআলীনগর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে জাহিদকে (২৪) ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কাপাসিয়া থানার ওসি এ এফ এম নাসিম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক দুই যুবকসহ চার যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাপাসিয়া থানায় নিয়ে আসে। আটককৃতরা হলো- বেলায়েত (২৩), ফয়সাল (১৭), শেখ সাহেদ (১৬) ও মারুফ (১৬)। এ ঘটনায় নিহত ফারুক হোসেনের বাবা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জাহিদকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪-৫জনকে আসামী করা হয়েছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন