জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২২-এর খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ায় ব্যাংকগুলোর জাকাত আদায়ের হিসাব নেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও মন্ত্রিসভা তাতে সায় দেয়নি। এছাড়া অবসরের পর গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ানসহ বিভিন্ন সেবার জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা করে সারাজীবন বিশেষ ভাতা পাবেন প্রধান বিচারপতি। এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২২’ এর খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাকাত সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত¡াবধানে একটা জাকাত বোর্ড করা হবে। সেই বোর্ডের প্রয়োজনীয় সমস্যা নিয়ে একটা কমিটি করা হবে তারা বিভিন্নজনের কাছে থেকে জাকাত আদায় করে সুরা তওবায় যে জাকাতের ক্ষেত্র আছে, সেখানে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এটাই আইনের মূলকথা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে আরেকটা প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়েছিল যে সরকার ছাড়াও অনেক ব্যাংক জাকাত আদায় করে, তাদের কাছ থেকে একটা হিসাব নিতে হবে। সেটাতে সরকার এগ্রি করেনি, কে কীভাবে জাকাত আদায় করল, না করল সেটা আমাদের বিষয় না। কারণ জাকাতটা ব্যক্তিগত বিষয়, ব্যক্তিগত ইবাদত। কারো যদি জাকাত দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, সেটা ফরজ এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর নিয়ে জাকাত আদায় করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা অধ্যাদেশ ছিল। এজন্য আইনে পরিণত করা হচ্ছে। এখানে দুই-একটা জিনিস নিয়ে আসা হয়েছে। পেনশনযোগ্য কর্মকাল, অর্থাৎ প্রকৃত কর্মকাল এবং পূর্ণ বেতনে প্রত্যেক ছুটির মেয়াদে ৩০ দিন অথবা প্রকৃতপক্ষে গৃহীত ছুটির পরিমাণ উভয়ের মধ্যে যেটি কম, সেটি অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি বলেন, কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে তার নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমানহারে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন। আর কোনো বিচারক অর্ধ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালীন আমাদের যে সরকারি কর্মচারীদের বিধান আছে, সে অনুযায়ীই উনারা ছুটি প্রাপ্য হবেন। এছাড়া কোনো বিচারক দায়িত্বকালীন আহত হয়ে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি প্রাপ্য হবেন। এক্ষেত্রে ফান্ডামেন্টাল রুলের ১৯৮৩’র বিধানই যথাসম্ভব প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো বিচারক সহিংস ঘটনায় আহত বা নিহত হলে এ বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধান উক্ত বিচারকের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ প্রযোজ্য হবে। আর কোনো বিচারক অবসর গ্রহণকালে ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা পাবেন, যেটা সরকারি কর্মচারীরা পায়। এটা সুপ্রিম কোর্টের জাজদের বেলায় ছিল না। এখন যদি উনাদের ছুটি পাওনা থাকে, তাহলে উনারাও পাবেন। আইনের খসড়ায় নতুন কী আছে এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একটা আছে। কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহ সহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম রেসিডেন্স রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা অবসরত্তোর বিশেষ ভাতা পাবেন।
তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস প্রস্তাব করা হয়েছে যে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে একটা সার্টেইন পিরিয়ড পর্যন্ত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেওয়া। এটা ক্যাবিনেট আলোচনা করে বলেছে যে, এটা আইনের মধ্যে থাকার দরকার নেই। এটা সরকার মনে করলে এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে তাদের দিতে পারবে, এটা আইনে আনা যাবে না। কারণ অন্যান্য কোনো দেশের আইনে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে অবসরের পর নিরাপত্তা কতদিন দিতে হবে, সেটা নেই। সেজন্য সরকার মনে করে যে, যদি কারো ক্ষেত্রে সেন্সিভিটি থাকে, সেক্ষেত্রে সরকার নির্বাহী আদেশ দিয়ে তাকে একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে।
ডিজিটাল সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতের বিবেচনায় নেওয়ার বিধান রেখে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সাক্ষ্য আইনের ওই খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলা হয়। গত কোভিডের পর থেকে অনলাইনে মামলা মোকদ্দমা চলছিল। এর ফলে সাক্ষী-প্রমাণ সবই অনলাইনে আসছিল। কিন্তু আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টে আবার এ রকম ডিজিটাল এভিডেন্সের সরাসরি কোনো বিধান ছিল না। কেউ যদি মামলায় হেরে যেত, সে যদি আবার আপিল করে উপরের কোর্টে, সেক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা হওয়ার সুযোগ ছিল। এটা অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এজন্য তারা এটা নিয়ে এসেছেন। এখন থেকে ডিজিটাল যে এভিডেন্স, সেগুলোও গ্রহণ করা হবে।
সচিব বলেন, কেউ যাতে ভুয়া বা জাল সাক্ষ্যপ্রমাণ ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করতে না পারে, আদালত যদি মনে করে যে কোথাও আপত্তিজনক কিছু আছে, অথবা কেউ যদি আপত্তি তুলে, তাহলে ওই সাক্ষ্য-প্রমাণের ফরেনসিক পরীক্ষা করা যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা খুব ট্রিকি জিনিস, এ জন্য কেবিনেট বলেছে, আবারও আমাদের কাছে নিয়ে আসুক, আমরা দেখে দেব। তিনি বলেন, পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন,-২০২২ এর খসড়ার অনুদোন দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন