স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে (এনটিপি) সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) বিভাগে অন্তর্ভুক্তকরণের পরিকল্পনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এতে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কৌশল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. আশরাফ উদ্দিন, ইউএসএআইডির সিনিয়র যক্ষ্মা উপদেষ্টা চার্লস লারম্যান, জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির গেøাবাল ফান্ড ও এমডিআর-টিবির উপদেষ্টা ডা. মো. আব্দুল হামিদ সেলিম, ব্র্যাকের টিবি, ম্যালেরিয়া অ্যান্ড ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়কারী ডা. মো. মজিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট ডা. মো. মাসুদ রানা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শহীদ মো. সাদিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ৫৭ শতাংশ য²া রোগী শনাক্ত হলেও এখনো ৪৩ শতাংশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না। দেশে মোট য²া রোগীর মধ্যে শিশু য²া শনাক্তের হার মাত্র ৪ শতাংশ। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর-টিবি শনাক্তের হার ২০ শতাংশ। প্রায় ৮০ শতাংশ এমডিআর-টিবি এখনো শনাক্তকরণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রবন্ধের তথ্য তুলে ধরে ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে য²ার মৃত্যুর হার ২০১৫ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। এ লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে হলে জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এখন যে গতিশীলতায় কাজ করছে, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) বিভাগে একে অন্তর্ভুক্ত করলে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, য²া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে আরো সফল করতে সরকার হাওর, চর ও পাহাড় এই তিনটি অঞ্চলকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দুর্গম অঞ্চলে আলাদা কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি বলেন, য²া চিকিৎসায় সাফল্য এলেও সমস্যাও একেবারে কম নয়। তাই য²াকে আগের রূপেই রাখার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানে ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, য²ার ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক সাফল্য এলেও এখনো নগরে নতুন য²ারোগীর হার বেশি। কারণ, গ্রাম থেকে শহরে লোকজনের আসা-যাওয়ার কারণে এখানে কাজ করা কঠিন। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের অংশীদার হিসেবে বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মা রোগীর আক্রান্তের হার ২২৫ জন এবং মারা যাচ্ছে ৪৫ জন। এনটিপির ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট য²া রোগী ২ লাখ ৬ হাজার ৯১৬ জন। অনুষ্ঠানে বক্তারা এই কর্মসূচিকে বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নিতে গেøাবাল ফান্ডের পাশাপাশি সরকারের সহায়তা বাড়ানো ও এনটিপিতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিযুক্ত করার সুপারিশ তুলে ধরেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন