অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোয়ান ফ্রিসেল বলেছেন, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে স্বাভাবিক নিয়মে ইউরোপের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকবে না। ওই সময়ে ক্রেতা ধরে রাখতে বাংলাদেশকে এখন থেকেই কৌশল ঠিক করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি : বাণিজ্যিক কৌশলে উদ্ভাবন গুরুত্ব’ শীর্ষক ওই সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিঞ্জ। বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির এর সঞ্চালনায় সেমিনারে বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, ক্রেতা প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। ডেনিম পণ্য ও এর সম্ভাবনাকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে রাজধানীতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো। দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয়েছে। আজ বুধবার শেষ হচ্ছে এই প্রদর্শনী। বাংলাদেশ ছাড়াও ১৪টি দেশের ডেনিম কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন মান ও ডিজাইনের ডেনিম কাপড় প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটি প্রদর্শনীর পঞ্চম আসর। প্রদর্শনীতে বিশ্বের প্রায় পাঁচ হাজার ডেনিম বিশেষজ্ঞ ও দর্শনার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, স্পেন, বেলজিয়াম, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম এবং চীন। এসব দেশ থেকে ডেনিম পণ্যের ক্রেতা, ব্র্যান্ড প্রতিনিধি, সিইও, সোর্সিং ম্যানেজার, ডেনিম পণ্য নির্মাতা, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ডেনিম প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বাতিল হলে বাংলাদেশকে প্রযোজ্য ট্যারিফ পরিশোধ করে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে হবে। এ সময় বায়াররা যেখানে সুবিধা পাবে, সেখান থেকে পোশাক ক্রয় করবে। ওই সময়ে ক্রেতা ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস কৌশলে এগুতে হবে। এ কৌশল ঠিক করতে আলোচনা শুরু করতে হবে। উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপের ২৭টি দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়ে আসছে। এটি জিএসপি নামে পরিচিত। কিন্তু মধ্য আয়ের দেশ হলে বাংলাদেশ এ সুবিধা পাবে না। তখন অন্যান্য এলডিসি এ সুবিধা পাবে। ফলে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। আলোচনায় জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিঞ্জ বলেন, কেবল উদ্ভাবন নয়, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সে মনযোগ দিতে হবে। কর্মপরিবেশবিহীন কারখানা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় টিকে থাকতে পারবে না। অন্যদিকে কারখানার পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড ২০১৮ সালের পর থাকছে না। ওই সময়ের জন্য টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। সময় এসেছে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার।
এ সময় বক্তারা গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের পাশাপাশি ক্রেতা বিশ্ববাজারে ক্রেতা ধরে রাখতে আকর্ষণীয়, ফ্যাশন বৈচিত্র্যসম্পন্ন পোশাক তৈরির উপর গুরুত্ব দেন। এ জন্য উদ্ভাবনী দক্ষতা বাড়াতে কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেন বাংলাদেশে আইএলও’র প্রকল্প পরিচালক টুমো পুটিনেন। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু, বাংলাদেশে পিভিএইচ এর কান্ট্রি ম্যানেজার নাজিব সাঈদ। ডেনিম এক্সপো’র আয়োজক মোস্তাফিক উদ্দিন বলেন, এ প্রদর্শনী শুরু করার পর থেকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ডেনিম পণ্য পরিচিতি পাচ্ছে। রপ্তানি বাড়ছে। ডেনিমের নতুন নতুন কারখানা স্থাপন হচ্ছে। এবারের প্রদর্শনীতেই ৯ বিভিন্ন দেশের ৯ হাজারের বেশি দর্শণার্থী অংশ নিচ্ছেন। প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ডেনিম এক্সপার্ট নামের একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রদর্শনীর মূল থিম হচ্ছে প্রাকৃতিক ডেনিম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন