‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ প্রতি বছর ২০শে মার্চ তারিখে সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে থাকে। বছর ব্যাপী মানুষের মধ্যে মুখের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও মুখের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে মানুষের মধ্যে আরও উদ্বোগি হওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য। ফলে মানুরষের মুখের স্বাস্থ্যের কারনে রোগ ভোগের প্রবণতা কমে আসবে। এতে করে পারিবারিক ও জাতীয়ভাবে আমরা অর্থনৈতিক দিক দিয়েও লাভবান হতে পারব।
২০১৩ হতে প্রতি বছর এইদিনে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশন (এফ.ডি.আই) ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ এর ক্যাম্পেইন থিম নির্ধারণ করে “বি প্রাউড অব ইউর মাউথ”। ২০২১ সালে বা প্রথম বছর প্রধান ফোকাস ছিল কিভাবে ওরাল হেলথ্ আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। ২০২২ সালে প্রধান ফোকাস বা কেন্দ্রবিন্দু হলো অনুপ্রেরণার মাধ্যমে সবার মাঝে হাইলাইট বা সবার দৃষ্টিগোচর করা কিভাবে স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের সুখ এবং মঙ্গলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় বলতে গেলে ২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে এর মুল প্রতিপাদ্য বিষয় বি প্রাউড অব ইউর মাউথ ফর ইউর হ্যাপিনেস এন্ড ওয়েলবিং”। ভালো মুখের স্বাস্থ্যের একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে সাধারণ স্বাস্থ্য এবং সার্বিক জীবন-যাত্রার মানের উপর। আর এজন্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার যোগ্য কার্যক্রমে সবার ভূমিকা রাখতে হবে। মানবদেহে মুখ শরীরের আয়না হিসাবে কাজ করে এবং মুখ সাধারণ স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দিয়ে থাকে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর বর্জন করতে হবে এবং ভালো ওরাল হাইজিন বা মুখের স্বাস্থ্যের অভ্যাস গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপ করতে হবে, সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান ঠিক রাখার জন্য।
আপনার মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখলে মাড়ির রোগ থেকে সৃষ্টি হওয়া পেরিওডন্টাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস, ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। রোগ না থাকলে আর্থিক ব্যয় হয় না বলে জীবনের মানও সুন্দর হয়।
মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মাড়ি এবং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা এ ধরণের ক্যান্সার এবং নানাবিধ আলসার থেকে রক্ষা পেতে পারি। মুখের রোগ পেরিওডন্টাইটিসের সাথে নন-এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায় অথবা এ সব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। তাই ২০২২ সালের ¯েøাগান অনুযায়ী স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের বিভিন্ন সিস্টেমিক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে অথবা রোগের প্রকোপ কমিয়ে দিতে পারে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের মঙ্গল এবং সুখ সম্বৃদ্ধি বয়ে আনে। গর্ভকালীন সময়ে মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিতে হবে। গর্ভবতী থাকার সময় মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ঐ শিশু আকার এবং আকৃতিতে ছোট হবে। অথচ গর্ভবতী থাকার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করে মাড়ির যথাযথ যতœ নিলে এধরণের সমস্যা দেখা দিবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভালো স্বাস্থ্য আমাদের সুখ এবং মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো সবার বুঝতে হবে এবং অন্যকে বুঝাতে হবে। সিস্টেমিক রোগের কারণে কিছু ঔষধ সেবন করলে মাড়ি ফুলে যেতে পারে। আবার মুখের অভ্যন্তরে আলসার দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনীয় মুখের এবং মাড়ির চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের যতœ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ফলিক এসিড প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিডের অভাবে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাটা শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রেখে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য কখনই ভালো রাখা সম্ভব নয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে আপনি বিভিন্ন ধরণের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যার কারণে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আপনার দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য মুখের যতœ নিন। মুখ আপনার যতœ নিবে। আপনার মুখ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ০১৮১৭৫২১৮৯৭
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন