শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মানবিক ব্যাংক এনআরবিসি

চার বছরে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ ব্যাংকিং খাতে উপশাখা ও পার্টনারশিপ ব্যাংকিং নতুন ধারা চালু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:৪৮ এএম, ২০ মার্চ, ২০২২

দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি)। ২০১৩ সালের এপ্রিলে যাত্রা শুরু। মাত্র চার বছরেই নানা অনিয়মে ধুকতে থাকে ব্যাংকটি। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় পরিচালনা পরিষদকে ২০১৭ সালের ডিসম্বরে ঢেলে সাজানো হয়। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলী পদত্যাগ করার পর ওই বছর ১০ ডিসেম্বর এ দায়িত্ব নেন এসএম পারভেজ তমাল। দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকটির হারিয়ে যাওয়া ‘ভাবমূর্তি’ ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন পারভেজ তমাল। আর এরপর ব্যাংকে যা হয়েছে তা এক অর্থে ইতিহাস। ধুকতে থাকা চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকটি মাত্র ৪ বছরেই অন্যান্য ব্যাংকের কাছে সাফল্যের অনুকরণীয় মাইলফলক। পারভেজ তমালের দক্ষ নেতৃত্বে এবং পরিচালনা পরিষদের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ব্যাংকটিতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। আর্থিক সূচকগুলোতেও দ্রæত উন্নতি এসেছে।
২০১৭ সালে এনআরবিসির ব্যালেন্সশিটের আকার ছিল ৭ হাজার ৪১২ কোটি। দ্বিগুন বেড়ে ২০২১ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৪ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটি সরকারের কোষাগারে ২০১৭ সালে রাজস্ব দেয় ১১২ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে প্রায় দ্বিগুন ২০২ কোটি টাকা।

সূত্র মতে, গ্রাহকদের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে সেবাকার্যক্রম পরিচালনা করায় আর্থিক সূচকগুলোতেও এসেছে সাফল্য। ২০২১ সাল শেষে আমানতের পরিমান ২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৯ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশেরও বেশি। রেমিট্যান্স সংগ্রহ ১৮৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আমদানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০২১ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ৪৯ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য। আর রফতানি আয় সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে দাড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকটির লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। পাশাপাশি ঘরে বসেই মানুষের কর্মসংস্থান। এজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা নিয়ে যাচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে শুধু এনআরবিসি ব্যাংকের চাকরি করছেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ। গত ২০১৭ সালে যা ছিল মাত্র ৬১৭ জন। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ। একই সঙ্গে অর্থায়নের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ শতাংশই নারী। ফলে নারীদের অংশগ্রহণমূলক নের্তৃত্ব নিশ্চিতে কাজ করছে এনআরবিসি ব্যাংক।

এদিকে করোনাকালেও ব্যাংকটির আমানত প্রবৃদ্ধির হার ছিল রেকর্ড পরিমাণ। করোনার শুরুতে দেশ যখন লকডাউনে, ব্যাংকগুলো তাদের সেবা সীমিত পরিসরে নিয়ে আসে। তখনও সারাদেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে এনআরবিসি ব্যাংক দেশের সকল শাখায় ব্যাংকিং সেবা চালু রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এমনকি করোনায় যখন অন্যান্য ব্যাংকগুলো কর্মকর্তাদের বেতন-বোনাস কমিয়ে দিয়েছিল, তখনও এনআরবিসি ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন-বোনাসসহ পদোন্নতি স্বাভাবিক রেখেছিল।

উন্নয়নমুখী ও মানবিক কর্মকাÐের মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছরে এনআরবিসি ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা ও সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যা সম্ভব হয়েছে ব্যাংকের সকল পরিচালকরা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায়। এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা সবাই প্রবাসী। উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সমাজ গঠনে ব্যাংকিং করা। এনআরবিসি ব্যাংকই প্রথম ১২ বছর পর পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়ে অন্য ব্যাংকগুলোকে পথ দেখিয়েছে। উদ্যোক্তাদের নির্দেশনা অনুসারে সঠিকভাবে ব্যাংকটির পরিচালনা করছেন ব্যাংকটির এমডি গোলাম আউলিয়া।
বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ব্যাংকটি। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে।

সূত্র মতে, সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে বর্তমানে শাখা ও উপশাখা মিলে ব্যাংকের সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৫০টি। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ শাখার সংখ্যা বর্তমানে ৯৩টি। দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রথম ব্যাংক হিসেবে উপশাখাভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। এছাড়া, বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এনআরবিসি ব্যাংক বিআরটিএ’র ফি আদায়ের পাশাপাশি জমি রেজিস্ট্রেশনের ফিও আদায় করছে। এছাড়া, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক (ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) কার্যক্রমে সাফল্য দেখিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। বর্তমানে ৫৭৬টি এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে বিভিন্ন ধরণের আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৬ জন সেবা নিচ্ছে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে এনআরবিসি ব্যাংক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে।

জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, আমরা চাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঘরে বসে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এজন্য আমরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছি। গ্রামীণ কর্মসংস্থান, নতুন উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের গ্রামকে শহরায়ন কর্মসূচিকে সফল করতে চেষ্টা করছি। গ্রামের মানুষকে সুদের জালে না আটকিয়ে সর্বনি¤œ সুদে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করতে কাজ করছি। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজ লাগিয়ে স্বল্প ব্যয়ে সব মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম আউলিয়া বলেন, ব্যাংকিংখাতে নতুনত্ব আনতে পরিচালনা পরিষদের কার্যকরী নীতিমালার আলোকে উপশাখা ব্যাংকিং ও পার্টনারশিপ ব্যাংকিং নতুন ধারণা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার মানুষদেরকে সেবা দিচ্ছি। গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নের যুগোপযোগী বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী। ইতিমধ্যে ১১ হাজার গ্রাহককে ৪০৮ কোটি টাকার এই ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ২০০ জনকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪৫টি জেলার মানুষ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে সবজেলায় এই ঋণ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার প্রশিক্ষিত তরুণকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় যুবকদের ৪ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন