২০১৩ সালের ২ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করে নতুন প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক। ব্যাংকটির যাত্রার শুরু থেকে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন এসএম পারভেজ তমাল। তিনি রাশিয়ায় একজন সফল ব্যবসায়ী। যাত্রা শুরুর চার বছর পর ২০১৭ সালে নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে ঢেলে সাজানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়। নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে পদত্যাগে বাধ্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ওই দায়িত্ব নেন এস এম পারভেজ তমাল। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের হারিয়ে যাওয়া ‘ভাবমূর্তি’ ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় করেছিলেন। আর এরপর যা ঘটছে তা ব্যাংকিং খাতে যেন ‘ইতিহাস’।
প্রবাসী এই সফল উদ্যোক্তার দায়িত্ব নেয়ার পর সাফল্যের ধারা বজায় রেখেই এগিয়ে চলছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক। ব্যাংকটির লক্ষ্যক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। ঘরে বসেই মানুষের কর্মসংস্থান এনআরবিসি ব্যাংকের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা নিয়ে যাচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে এনআরবিসি ব্যাংক এখন অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কাছে সাফল্যের অনুকরণীয় মাইলফলক। আর এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের সুদক্ষ নেতৃত্ব এবং পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের ঐক্যমত এবং উন্নয়নমুখী নীতি পরিকল্পনায়। অবশ্য এই সাফল্যের পুরষ্কারও পেয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পূননির্বাচিত হয়েছেন এসএম পারভেজ তমাল। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ সদস্যদের ভোটে গত বৃহষ্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল ইনকিলাবকে বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা সবাই প্রবাসী। এনআরবিসি ব্যাংক পরিবার সরকারের উন্নয়ননীতির সঙ্গে একাত্ব হয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। ব্যাংকের সকল পরিচালকরা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। যে কারনে অল্প সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে ব্যাংকটি।
২০১৩ সালে দেশে কার্যক্রম শুরু করে একসঙ্গে ৯টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকই প্রথম শেয়ারবাজারে এসেছে। মহামারী করোনায় দেশ যখন লকডাউনে। মানুষ ঘরবন্দী। ব্যাংক ও আর্থিকখাতের সেবা যখন সীমিত করে আনা হয়েছিল তখন একটি মাত্র ব্যাংক যারা সারা দেশে শাখা, উপ-শাখা খোলা রেখে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা চালিয়ে রেখেছে। করোনার সময়ে ২৪ ঘন্টা টেলিমেডিসিন সেবা, মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে দেশের মানুষের পাশে ছিল। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশের ব্যাংকগুলো করোনায় যখন বোর্ড সভাসহ স্বাভাবিক ব্যাংকিং সেবা চালাতে পারছিলো না তখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে প্রথম ভার্চুয়ালি বোর্ডসভা চালু করাসহ স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখে তারাই। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের এ ব্যাংকটি প্রযুক্তিনির্ভর সেবার জন্য এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এ জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সব ব্যাংকের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারে ইতিমধ্যে ‘সাউথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতে চালু করা হয় এনআরবিসি প্লানেট। কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা তোলার ব্যবস্থাও করেছে ব্যাংকটি।
আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ সব ব্যাংকেরই প্রধান কাজ। তবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার বাইরে নতুনত্ব এনেছে ব্যাংকটি। সরকারের ইউটিলিটি সেবা আদায়, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়ে সারা দেশে প্রায় ৪ শ’ উপ-শাখা চালু, বিআরটিতে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ব্যাংকিং সেবা একই সঙ্গে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি’র) সঙ্গে মিলে সেবা দিচ্ছে ব্যাংকটি। এভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে পুরো অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছে এনআরবিসি ব্যাংক। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রথম ব্যাংক হিসেবে উপশাখাভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তণ করেছেন এস এম পারভেজ তমাল।
বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নির্দেশ বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া, নতুন প্রজন্মের ব্যাংক হয়েও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ব্যাংকটি। বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক।
২০১৭ সালে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের আকার ছিল ৭ হাজার ৪১২ কোটি। দ্বিগুন বেড়ে ২০২১ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৪ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটি সরকারের কোষাগারে ২০১৭ সালে রাজস্ব দেয় ১১২ কোটি টাকা, যা ২০২১ দিয়েছে ২০২ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়; নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে শুধু এনআরবিসি ব্যাংকের চাকরি করছেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ। গত ২০১৭ সালে যা ছিল মাত্র ৬১৭ জন। এি সময়ে ব্যাংকটিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ। এছাড়া অর্থায়নের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আর্থিক সূচকগুলোতেও অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাংক সূত্র জানায়, বর্তমানে শাখা ও উপশাখা মিলে ব্যাংকের সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা ১০০০টি। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ শাখার সংখ্যা এখন ৯৩টি।
এদিকে এস এম পারভেজ তমাল একজন সিআইপি। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সরকার বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবেও নির্বাচিত করেছেন তাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন