শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জানুয়ারিতে রেকর্ড লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন জাকির। বাড়ি বগুড়ায়। হঠাৎ ফোন আসে ছোট ভাইয়ের। জানান, বাবা অসুস্থ, শহরের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। টাকা যা ছিল খরচ হয়ে গেছে, এখন আরও টাকা লাগবে। সঙ্গে সঙ্গে জাকির কাছের মোবাইল এজেন্টের দোকানে গিয়ে বললেন, ভাই দ্রুত তিন হাজার টাকা এ নাম্বারে পাঠান। কয়েক মিনিট পর ছোট ভাই ফোন করে জানালেন টাকা পেয়েছেন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে এখন নির্দিষ্ট কোনো সময়ে নয়, বরং দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই অর্থ লেনদেন করতে পারছেন মানুষ। অথচ ১০ বছর আগে এমন ঘটনা ছিল স্বপ্নের মতো। এখন সেই স্বপ্ন পূরণ করছে বিকাশ, রকেট ও এম ক্যাশ, শিওর ক্যাশ, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো। তাৎক্ষণিক শহর কিংবা গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিপ্লব ঘটেছে।
এই ধারাবাহিকতায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে লেনদেন হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৯৩ টাকা। যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকরা। যা এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মাসে এত লেনদেন এর আগে কখনও হয়নি। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গ্রাহক ১১ কোটি ছাড়িয়েছে
স¤প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট ও গ্রাহকের সংখ্যাও। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। জানুয়ারি শেষে সেটা বেড়ে হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৩০২। গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৬ কোটি ৩২ লাখ ও শহরের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৭ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৮১ হাজার ও নারী গ্রাহক প্রায় ৫ কোটি ৮ লাখ ৪৯ হাজার। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ২১৩।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অন্যান্য সেবা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ২২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা; উত্তোলন করা হয়েছে (ক্যাশ আউট) ১৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২০ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন