শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শিশুর নৈতিকতার শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে

লায়লা আরজুমান্দ বানু | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ১২:২০ এএম

সুন্দর সমাজ ও আর্দশ রাষ্ট্র গঠনের জন্য সুনাগরিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুনাগরিক হওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে সমাজের নাগরিকবৃন্দ নৈতিকতার মানে যতটুকু উত্তীর্ণ, সে সমাজে ন্যায়নীতির বাস্তবায়ন ততটা বেশি হয়। অনৈতিক চর্চা সমাজের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টিতে অন্তরায় সৃষ্টি করে।

ইংরেজি গড়ৎধষরঃু, যার অর্থ হলো ভদ্রতা, ন্যায়পরায়ণতা, উত্তম আচরণ। এটি মূলত উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত এবং কর্মের মধ্যকার ভালো-খারাপ, উচিত-অনুচিতের মধ্যে পার্থক্যকারী। নৈতিকতা হলো কোনো মানদণ্ড বা নীতিমালা, যা নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ, ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। আবার এটি এমন এক বিষয়, যা সমগ্র মানুষের জন্য কল্যাণকর, তা থেকেও আসতে পারে। নৈতিকতাকে ‘সঠিকতা’ বা ‘ন্যায্যতা’-ও বলা যায়। নৈতিকতার একটি আদর্শ উদাহরণ হলো, ‘আমাদের উচিত অন্যের সাথে সেভাবেই আচরণ করা, যেমনটা আমরা নিজেরা অন্যের থেকে আশা করব’। অপরদিকে, অনৈতিকতা হলো নৈতিকতারই সম্পূর্ণ বিপরীত; যা অসচেতনতা, অবিশ্বাস, উদাসীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
শিশুকাল থেকে প্রতিটি পরিবারেই শিশুদের জন্য নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। নৈতিক শিক্ষা হলো সে শিক্ষা, যা মানুষকে ভালো ও মন্দ, ন্যায় ও অন্যায়, শুভ ও অশুভের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে তার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যেসকল পরিবারে পিতামাতা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের সন্তান স্বাভাবিকভাবেই শিশুকাল থেকে সেই শিক্ষা তাদের মানসপটে গ্রহণ করে। সুকুমার মানবিক গুণাবলী, শিশুকাল থেকেই পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয় তার। এই বয়সে শিশু যে শিক্ষাটি পেয়ে থাকে, সেটি তার সারাজীবনের পথ চলায় পাথেয় হয় এবং জীবনকে সহজ করে দেয়। আমাদের দেশের আদর্শলিপিতে বহুল প্রচলিত ছড়া ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে’-শিশুর নৈতিকতা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও পারিবারিকভাবে শৈশবকাল থেকেই শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেও নৈতিক শিক্ষা লাভ করে থাকে। শিশুদের যে কোনো অন্যায় আচরণ, মিথ্যা কথা বলা এবং ভুল করলে, তা যথাযথ সংশোধনপূর্বক সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া পিতামাতা ও গুরুজনদের দেয়া অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দায়িত্বরত শিক্ষকদের উচিত শিশুদের কাছে জীবনের চলার পথে সঠিক দিক নির্দেশনা তুলে ধরা। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, সহপাঠীদের প্রতি আন্তরিকতা ও সহযোগিতাসুলভ মনোভাব গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার একক বা যৌথ যে কোনো প্রকারের হতে পারে। একক পরিবার শুধুমাত্র মা-বাবা, ভাই-বোন এবং যৌথ পরিবার বাবা-মা, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুপু নিয়ে হয়ে থাকে। পরিবার থেকেই শিশু তার নৈতিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। যেমন, শিশু যখন তার বাবা-মাকে অন্যদের সাথে ভালো আচরণ বা দুস্থদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করতে দেখে, তখন তা থেকে সে শেখে এবং অনুশীলন করে। শিশুর মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে মূলত পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে থেকে। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সৎভাবে জীবনযাপনের শিক্ষা, সততার শিক্ষা দেওয়া উচিত। তারা যেকোনো ভুল করুক না কেন, সত্য বলায় উৎসাহিত করতে হবে। এজন্য বাড়ির বড়দেরকেও শিশুর সামনে মিথ্যা বলা বা চর্চা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবারের গুরুজনসহ সবাইকে সম্মান করা শেখাতে হবে ছোটবেলা থেকেই। পরিবারে যে গৃহকর্মী, তাকেও সম্মান করতে শেখানো পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব। শিশুর সামনে অন্যদের হেয় করা বা কটাক্ষ করা থেকে বড়দের নিবৃত্ত থাকতে হবে। এতে করে শিশুরা তাদের শৈশবকাল থেকেই বড়দের কাছ থেকে নৈতিক আচরণের শিক্ষা পাবে। প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করা, তাদের সমস্যায় এগিয়ে যাওয়া, তাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকার বিষয়ে শিশুদের মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই বড়রা যা করে, তারা তা শেখে। এজন্য অভিভাবকদের আচরণ হতে হবে মার্জিত, সুন্দর এবং শিক্ষণীয়।
জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে ধৈর্যশীল হওয়ার বিকল্প নেই। শিশুর মধ্যে ধৈর্যধারণ করার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। কোনো কাজে বিফল হলে হতাশ না হয়ে তাকে ধৈর্যশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারে শুধু বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালোবাসা নয়, ছোটবড়, ধনী-গরিব, পশুপাখির প্রতিও ভালোবাসা শেখাতে হবে। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক মনোভাব শৈশবেই গড়ে তুলতে হবে। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই নৈতিকতার বীজ প্রোথিত থাকে। শুধু তার নিজের ধর্ম নয়, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া শেখাতে হবে।
নম্র বা বিনয়ী হওয়া নৈতিকতা শিক্ষার মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নম্র বা বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে, যেন তার মধ্যে অহংকার বোধের জন্ম না নেয়। শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে নম্র ও বিনয়ী আচরণের মধ্য দিয়ে সে সবার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। কোনো সাফল্যে যেন সে অহংকারী হয়ে না ওঠে। এছাড়া শিশুদের মনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে। নিজের দেশের সঠিক ইতিহাস শিশুদের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কেউ কখনো খারাপ বা অনৈতিক কাজে জড়াতে পারবে না।
পিতামাতার উচিত আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে শিশুর কোনো চাহিদা পূরণ না করা। শিশু যেন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে, তেমনি বাবা-মার প্রকৃত আর্থিক সামর্থ্য কতটুকু, তা শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এছাড়া টিভি, মোবাইল, ভিডিও গেমে শিশু যেন আসক্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে পিতা-মাতার সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রিত আচরণও বাঞ্চনীয়। সন্তানের পাশে থেকে তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরতে হবে। পিতামাতাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শৈশবকাল খুব স্বল্প সময়। তাই শৈশবে শিশুর নরম মনে সকল সৎগুণাবলীর সন্নিবেশিত করতে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার, পিআইডি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৫ মার্চ, ২০২২, ৫:২৯ পিএম says : 0
আমাদের দেশ চলে কাফের আইন দিয়ে আল্লাহ যা হারাম করেছে বাংলাদেশের সব কিছু হালাল শিশুরা বাড়িতে যতই আপনারা কোরআন-হাদিসের শিক্ষা দেন কিন্তু কিছুই হবে না কিসের জন্য বাইরে বেরোলেই তো সবকিছু হারাম স্কুলে হারাম কাজ শিখবে কলেজে হারাম কাজ শিখবে ইউনিভার্সিটি হারাম কাজ শিখবে রাস্তায় হারাম কাজ শিখবে সব জায়গায় হারাম কাজ শিখব গাছের গোড়া কেটে মাথায় পানি দিলে কোনো কাজে আসে না
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন