শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সাপাহারে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৩ এএম

আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সারা দেশে পরিচতি নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় এবার বিদেশি ফল স্ট্রবেরি চাষ করে কৃষক ইব্রাহিম কৃষি ক্ষেত্রে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী হাঁপানিয়া বিরামপুর গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন জানান, তিনি গত ২০২০ সালের দিকে পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় বেড়াতে গিয়ে প্রথম মাঠে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি ফল চাষ দেখেন।
সেখান থেকে ফিরে এসে তার ছোট ভাইদের সাথে পরামর্শ করে স্ট্রবেরি ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের পাশেই প্রায় দুই বিঘা জমি স্থানীয় এক জোতদারের নিকট থেকে তিনি ইজারা নেন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ এলাকা থেকে স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ করে ওই জমিতে রোপন করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম বার তেমন ভাল ফলাফল তিনি অর্জন করতে পারেননি।
কোন মতে সেবার তার জমির খরচ উঠেছিল। হতাশ না হয়ে তিনি আবারো স্ট্রবেরি ফল চাষাবাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নিজে স্ট্রবেরির চারা উৎপাদন ও সংরক্ষণ করেন। স্ট্রবেরি চাষাবাদের উপযোগী বেলে দোয়াস আড়াই বিঘা জমি ১৭ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ইজারা নিয়ে গত অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে ওই জমিতে প্রায় ১২ হাজার চারা রোপন করেন। অল্পদিনেই স্ট্রবেরি গাছে মাঠ ভরে যায়। এবারে তিনি স্ট্রবেরি চাষে সফলতার মুখ দেখেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি জানান প্রতিদিন ২০০/২৫০ কেজি স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহের পর তা পরিবারের সবাই মিলে কার্টুনে প্রসেস করেন। সাপাহার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দুরপাল্লার বাসে করে সেই কার্টুন ভর্তি স্ট্রবেরি রাজধানীর কাওরান বাজারে ফলের আড়তগুলোতে সরবরাহ দেয়া হয়। তিনি বলেন বরেন্দ্র এলাকার কড়া মাটিতে উৎপাদিত স্ট্রবেরি অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীর বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ফল এক হাজার থেকে চৌদ্দশ টাকা পর্যন্ত তিনি পাইকারী বাজারে বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তার প্রতি বিঘা জমির জন্য শ্রমিক,কিটনাশক, সেচ ও নেটিংসহ যাবতীয় খরচ বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সব খরচ বাদ দিয়ে তার আড়াই বিঘা জমি থেকে এবার প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা মুনাফা আসবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা পেলে আগামী মৌসুমে পূর্ণভবা নদীর পশ্চিম তীরে বিশাল আকারে স্ট্রবেরির প্রজেক্ট গ্রহণ করবেন। তিনি স্ট্রবেরি ছাড়াও বেশ কয়েক বিঘা আম্রপালী,বারী-৪, আম ও উন্নত জাতের মাল্টা বাগান তৈরি করেছেন। তিনি অতি অল্পদিনেই ফল চাষের মাধ্যমে দারিদ্রতা জয় করে ছোট ৪ ভাই ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। মিশ্র ফল চাষি ইব্রাহিমের সফলতা দেখে অনুপ্রানিত হয়ে গোয়ালা ইউনিয়নের অনেকে স্ট্রবেরি চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।
এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন স্ট্রবেরি রসালো ও পুষ্টিকর ফল। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর স্ট্রবেরির চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন