সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : মন্ত্রিসভায় কুমিল্লাকে বিভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্তের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লাকে বিভাগে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বছরের ৪ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু ঘোষণার একুশ মাসেও কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মধ্যদিয়ে ১৯৬০ সালে জেলার মর্যাদা পায় কুমিল্লা। আশির দশক থেকেই কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবী জোরালো হয়ে ওঠে। ওইসময় কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আজকের কুমিল্লা সদরের এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার। ওই সময় থেকেই বৃহত্তর কুমিল্লার কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর নোয়াখালী, ফেনি, ল²ীপুর জেলার সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুমিল্লা বিভাগের দাবী নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ দাবীকে জোরালো করতে গণফোরাম ও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা গণদাবী পরিষদ নামে একটি সংগঠনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিন মাস বছর গড়ায়। বিভাগের দাবীতে ওই ছয় জেলার মানুষ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে কুমিল্লার কোন এমপি, মন্ত্রী জাতীয় সংসদে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লার সদর আসনে প্রায় ৪০ বছর পর আকম বাহাউদ্দিন বাহার আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মহান জাতীয় সংসদে কুমিল্লাকে বিভাগ করার যৌক্তিকতাসহ কুমিল্লার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তিনি মহান জাতীয় সংসদের একাধিক অধিবেশনে কুমিল্লাকে বিভাগ করার দাবী তুলে বক্তব্য রেখে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
অবশেষে ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নোয়াখালী, ফেনি, ও ল²ীপুর জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দেন । ওই সিদ্ধান্তের প্রায় একমাস দশদিন পর একই বছরের ৪ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ছয়টি জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। বিভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজও চলতে থাকে। কুমিল্লা বিভাগ হবে এমন আনন্দের জায়গায় চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কুমিল্লার সাথে থাকলেও হঠাৎ বেঁকে বসে নোয়াখালী অঞ্চল। তারা নিজেরাই এখন বিভাগ দাবী করে বসেছে। বিভাগের দাবী নিয়ে কুমিল্লা থেকে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন বৃহত্তর নোয়াখালীর জনগণও এ দাবীর প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এসেছিল। কিন্তু মন্ত্রী সভায় সিদ্ধান্ত ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর পাল্টা বিভাগের দাবী নিয়ে নোয়াখালী অঞ্চল ঘুরে বসে। ফলে বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতায় রূপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় একুশ মাসে এসে দাঁড়ায়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০১৫ সালের ১৩ জুন কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন হলে কুমিল্লা বিভাগের নাম কুমিল্লাই থাকবে। কুমিল্লা নামেই আমরা গর্ববোধ করি। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।’ এবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লায় জাতীয় যুব সম্মেলনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘কুমিল্লা বিভাগ হবে। বৃহত্তর নোয়াখালী আমাদের সাথেই থাকবে। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
কুমিল্লা বিভাগ প্রসঙ্গে একই অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সদরের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছিলেন, মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আমি কুমিল্লার জনপ্রতিনিধি হিসেবে কুমিল্লার মানুষের দাবীগুলো উত্থাপন করি। কুমিল্লাকে বিভাগ করার দাবী আমিই প্রথম মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ কুমিল্লা সবদিক থেকে এগিয়ে। রেমিটেন্সে শীর্ষ, খাদ্যশস্য ও মৎস্য উৎপাদনে সেরা জায়গায় রয়েছে। ত্রিশ বছর বিভাগের আন্দোলন করছি। অথচ সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ হচ্ছে। এতোদিন কুমিল্লায় নেতৃত্বের দুর্বলতা ছিল। আজকে পরিকল্পনামন্ত্রীকে সাথে নিয়ে আমরা সেই দুবর্লতার উত্তরণ ঘটিয়ে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়েই কুমিল্লা বিভাগের বাস্তবায়ন চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন