মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পণ্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলা এই অপসংস্কৃতি চলে আসছে। অতি মুনাফালোভী ও অসৎ ব্যবসায়ীরা এ সময়টিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষের পকেট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। এবারও রোজা সামনে রেখে ইফতারি পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবধরণের পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই দাম বৃদ্ধি কয়েক মাস ধরে চললেও রোজাকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে রোজা রাখাকে কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। সাধারণত নিত্য ভোগ্যপণ্যের সাথে রোজাদাররা ইফতার ও সেহরীতে সাধ্যমতো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে। এবার তাদের এই আয়োজনকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বেগুন, শসা, ছোলা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, লেবু, খেজুর, পুদিনা পাতাসহ যত ধরনের ইফতার সামগ্রী রয়েছে তার সবকিছুর দামই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। দোকানিরাও বলে দিচ্ছে, আরও দাম বাড়বে। ক্রেতাদের অসহায় হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকছে না। অন্যদিকে, দেশে চাহিদার তুলনায় গরুর গোশত ১০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকলেও তার দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে। এজন্য কসাই সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হচ্ছে।

মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে রোজার সময় ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। রোজাদারদের খুশি করাকে তাদের এবাদতের অংশ মনে করে। শুধু মুসলিম বিশ্বই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে জিনিসপত্রের দামের বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেই কেবল ব্যতিক্রম। রোজা ও ঈদকে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার মৌসুম হিসেবে বেছে নেয়। তাদের এমন মনোভাব থাকে, এক মাসে সারা বছরের ব্যবসা করে ফেলবে। এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে, এতে সরকারেরও কোনো বিকার নেই। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে বলছেন, জিনিসপত্রের দাম কমেছে এবং সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই কর্তাব্যক্তি ও মন্ত্রী-এমপিরা বাজারে যান কিনা? বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের দাম যাচাই করেন কিনা? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করেন কিনা? যদি জিজ্ঞেস করতেন তাহলে বুঝতে পারতেন, জিনিপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তা রয়েছে কিনা। মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, এমন কথা বলা হয়। এসব পণ্যের বাম্পার ফলনের কথাও শোনা যায়। এসব তথ্য সত্য। প্রতি বছর ধান, চাল, শাক-সবজি, পেঁয়াজ, বেগুন, লেবু ইত্যাদি পণ্যের বাম্পার ফলন হয়। তারপরও দাম কমে না। বরং বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সম্প্রতি বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রতিবাদে কৃষকরা বিক্ষোভ করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাহলে, এ পণ্যটির দাম কমছে না কেন? শুধু পেঁয়াজই নয়, গবাধীপশুতেও দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ গোশতের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গরুর গোশত মাসে একবেলা খাওয়ার মতো অবস্থা সাধারণ মানুষের নেই। এমনকি মধ্যবিত্তেরও সাধ্যের বাইরে গোশতের দাম চলে গেছে। বাম্পার ফলন, উদ্বৃত্ত থাকার পরও পণ্যের দাম কেন বৃদ্ধি পাবে? পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদ থাকার পরও কেন আমদানি করতে হবে? বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধানতম কারণ হচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নির্মূল করতে পারলেই জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। সরকার এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। কেবল হুমকি-ধমকি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। তাতে কোনো কাজ হয় না। মনে করা স্বাভাবিক, সরকার অসাধু এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের অস্বীকারের কারণে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া এবং প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্য-বিবৃতি জনগণের পক্ষে না গিয়ে অসাধু সিন্ডিকেটের পক্ষে যাচ্ছে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে খেয়াল-খুশি মতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। সরকারের উচিৎ রোজায় যাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা স্বচ্ছন্দে রোজা পালন করতে পারে, এদিকে দৃষ্টি দেয়া। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সাথে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত তাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা। বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বা বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যবস্থা না নিয়ে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির মূলে গিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Lokman Hossai ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:০৪ এএম says : 0
যে কয় টাকা বেতন পাই প্রতিমাসে ধার করে চলা লাগে যেভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে সাধারণ মানুষ হিসাবে বড় কষ্টে আছি সংসার নিয়ে
Total Reply(0)
Akanda Alamgir ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:০৫ এএম says : 0
আমাদের দেশটা কি ইউরোপ নাকি? যদি তাদের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের বেতন-ভাতা ইউরোপের দেশগুলোর মত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। আমাদের দেশে এখনও একজন সরকারি চাকরিজীবীর মাসিক বেতন ৮,২৫০/- (সর্বসাকুল্যে প্রায় ১৫,০০০/-) কি করে হয়? বিবেচনা করলে উপকৃত হবো।
Total Reply(0)
Ranjon Sarker ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:১০ এএম says : 0
একজন মধ্যবিত্তের কষ্টগুলো কেবল একজন মধ্যবিত্ত বুঝতে পারে, একশ্রেণীর মানুষ যখন দ্বিধায় থাকে যে আজ তারা রেস্টুরেন্টে খাবে না বাড়িতে খাবে। তখন অন্যদিকে একজনের বাড়িতে ডাল ভাত জোটাতে হিমশিম খাই, কি নিদারুন অদ্ভুত কষ্টদায়ক নিয়ম এই পৃথিবীর।
Total Reply(0)
Liza Hossain ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:১৩ এএম says : 0
জনগণ না খেয়ে মারা যাক সমস্যা নেই। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলেও সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে ওদের ভুড়ি বৃদ্ধি যে হচ্ছে তাতে কোন ভুল নেই। আল্লাহ এদের হেদায়েত নসিব করুন।
Total Reply(0)
Abir Sutradhar ২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:১৩ এএম says : 0
দ্রব্যমূল্যের সাথে সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এটা সত্য। কিন্তু সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের অভাব রয়েছে। আনুমানিক,, দেশের ১০% লোকের কাছে ৯০% সম্পদ মজুদ আছে৷ আর বাকি ৯০% মানুষের কাছে ১০% সম্পদ। সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন না হলে ভবিষ্যতে গরীব মানুষগুলো আরো গরীব হবে এবং স্বচ্ছল পরিবারগুলো আরো স্বচ্ছল হবে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন