রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুড়িল ফ্লাইওভারে চাপা পড়েছে মীমের স্বপ্ন

পাশেই পড়েছিল স্কুটি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় বেশ উৎসাহের সঙ্গেই ছুটির দিন ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। উত্তরা থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অল্প দূরত্বও আর পাড়ি দেওয়া হলো না মায়শা মমতাজ মিমের (২২)। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মিম রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লাইওভারেই পড়ে ছিলেন। পাশেই পড়ে ছিল তার স্কুটি।
খিলক্ষেত থানার এসআই মিজানুর রহমান জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিম স্কুটি চালিয়ে উত্তরার বাসা থেকে রওনা হয়েছিলেন। কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার পর মাঝামাঝি জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাসের ধাক্কায় না অন্য কোনোভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

মিমের মামা হাবিবুর রহমান চুন্নু জানান, ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্যই গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিল মেয়েটা। কীভাবে দুর্ঘটনায় পড়ল, এখনও জানতে পারেননি বলেও জানান তিনি। মৌচাক আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ মামুনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মিম। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়।

খিলক্ষেত থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আহম্মেদ বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ৯৯৯ নম্বরে তারা একটি কল পান। সেই কলে বলা হয়, একটি মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের ৩০০ ফিট নামার পথে পড়ে আছেন। তার পাশে একটি স্কুটি পড়ে আছে।
খিলক্ষেত থানার ওসি বলেন, কল পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা মাইশাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মাইশাকে সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি ছাব্বীর আহম্মেদ বলেন, দুর্ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে পুলিশ খুঁজে পায়নি। তবে দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি জায়গার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, একটি কাভার্ড ভ্যান মাইশার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। ওই কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা বা চাপায় মাইশা নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কাভার্ড ভ্যানটি শনাক্ত করা গেছে। নম্বর পাওয়া গেছে। এখন এ নম্বর ধরে কাভার্ড ভ্যানটিকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।

এদিকে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শর্মি হোসেন মিমের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সির ডাক্তারের ফোন পেলাম। ইংরেজি বিভাগের আন্ডারগ্রাজুয়েটের ছাত্রী মায়শা মমতাজ মিম কুড়িলের সামনে বাইক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। ডাক্তার জানালেন হাসপাতালে তার লাশ নিয়ে গিয়েছেন একজন গরিব রাজমিস্ত্রি। আহা, কত গাড়ি, বাইক, বাস হয়তো পাশ দিয়েই চলে গেছে। কারো সময় হয়নি থামার।

তিনি আরও লিখেছেন, হাসপাতালে আনার পর তার ব্যাগে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। আমার নম্বর ডাক্তার পেয়েছেন আমার আরেক ছাত্রীর কাছ থেকে। জিজ্ঞাসা করলেন মেয়েটার বাবা-মা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব কিনা। আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টর অফিসকে জানালাম। উনারাও খবর পেয়েছেন। তারা বাবা এখন কুর্মিটোলার পথে। মেয়ের মৃত্যুসংবাদ এখনো জানানো হয়নি তাকে। কি নিদারুণ বিস্ময় অপেক্ষা করছে ভদ্রলোকের জন্য!

শর্মী হোসাইন ওই পোস্টে লিখেছেন, আজ আমাদের বিভাগে একটা ইভেন্টে আসার জন্য মেয়েটা রওনা হয়েছিল। দুই বছর অনলাইনে ক্লাস করা বাচ্চা মেয়েটা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব এক্সট্রাকারিকুলার অনুষ্ঠানে খুব আনন্দ নিয়ে যুক্ত হয়েছিল-- কিছু কাজ শিখবে, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা দেবে, রাতে কিছু ছবি পোষ্ট করবে। এইই তো। শেষ হয়ে গেল সব।

তিনি লিখেন, শহরের সড়কগুলো কেন এরকম তরুণখেকো হয়ে উঠলো জানেন? কেন রাস্তায় স্পিড লিমিট দিতে পারিনি আমরা? কেন একটা নূন্যতম নিরাপদ সড়ক বানাতে পারিনি আমরা? নিজেকে এই প্রশ্ন গুলো করেন প্লিজ। ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, মনে পড়ছে ২০১৮ সালে এই কুড়িলেই যে ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই মেয়েটির নামও ছিল মিম, তার বাবা ছিলেন একজন বাসচালক।

অপরদিকে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী একটি গাড়ির ধাক্কায় মো. সোহাগ নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহাগের বাবা জহিরুল ইসলাম ও মা শাপলা বেগম বলেন, আমরা দুজন মাটির কাজ করি। গত বৃহস্পতিবার মাটির কাজে বাসার বাইরে ছিলাম। ছেলেমেয়ে সবাই বাসায় ছিল। গতকাল সকালে বাসায় এসে শুনতে পাই ছেলে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। পরে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে এসে ছেলেকে মৃত দেখতে পাই। তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর থানায়। বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর মানিকনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। সোহাগ স্থানীয় স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অবগত করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Serajul Oopp ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৩৯ এএম says : 0
ওয়ান বাই ওয়ান বাই রুট চাই এক্সিডেন্ট কম হবে আল্লাহর রহম
Total Reply(0)
Salim Reza Haroon ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪১ এএম says : 0
May Almighty Allah grant her Jannatul Ferdous.Ameen
Total Reply(0)
Bilkis Manjoor ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪১ এএম says : 0
ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-লিল্লাহি রাজিউন।
Total Reply(0)
Moinul Alam ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪১ এএম says : 0
জীবন কত সস্তা এই দেশে। এমন একদিন হয় না রাস্তায় প্রান ঝড়ে না। অথচ সরকার এ ব্যপারে নীরব।
Total Reply(0)
Sazzad Hossain ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪২ এএম says : 0
দুঃখজনক। আবারো আন্দোলন হবে, আবারো ফুটওভার ব্রীজের আশ্বাস মিলবে। তারপর আবারো আরেকটি হত‍্যা হবে।
Total Reply(0)
Masum Rana ২ এপ্রিল, ২০২২, ৮:৪২ এএম says : 0
যার গেছে কেবল সেই বুঝে কত যন্ত্রণা। বাকিরা নিরব নির্বিকার। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মুল কারন হচ্ছে আইনের প্রয়োগ না থাকা। আর কিছুই না।
Total Reply(0)
Anamul hasan ২ এপ্রিল, ২০২২, ১:০৪ পিএম says : 0
ধন্যবাদ সবাইকে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন