বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চট্টগ্রামে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাসে ইসলামি সংস্কৃতির আবহ

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঘরে ঘরে ইবাদত, বন্দেগি। মসজিদে সব বয়সের মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তারাবিহ থেকে শুরু করে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে বিপুল মুসল্লির উপস্থিতি। অফিস, আদালত, মার্কেট বিপণি কেন্দ্র সবখানে জামাতে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা। যাপিত জীবনে এক অন্যরকম পরিবর্তন। পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতে বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। পৌনে এক কোটি মানুষের এই মহানগরীতে এখন ইসলামি সংস্কৃতির আবহ।

তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট, নগরজুড়ে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুুঁড়িতে দুর্ভোগ বিড়ম্বনারও মুখোমুখি হচ্ছেন রোজাদারেরা। টানা দুই বছর করোনা লকডাউনে পবিত্র মাহে রমজানে অনেক কিছুর ছন্দপতন ঘটে। এবার সে অবস্থা নেই। অনেকটা করোনামুক্ত পরিবেশে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসকে স্বাগত জানিয়েছে চট্টগ্রামবাসী। প্রতিবছর মাহে রমজানে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এক ইসলামী সংস্কৃতির আবহ সৃষ্টি হয়। সব বয়সের মানুষ পবিত্র সিয়াম সাধনার পাশাপাশি মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হন।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিটি মসজিদে আয়োজন করা হয়েছে খতমে তারাবি। তাতে মুসল্লির উপচেপড়া ভিড় জমছে। মসজিদ ছাড়িয়ে জামাতের কাতার আশপাশের ফুটপাত, সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। তারাবির নামাজের সময় নগরজুড়ে যানবাহন চলাচল কমে যায়। বন্ধ থাকে বেশিরভাগ দোকানপাট। হোটেল, রেস্তোঁরা বরাবরের মত দিনের বেলা বন্ধ রয়েছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয় সর্বত্র। হোটেল, রেস্তোঁরাগুলোতে হরেক পদের ইফতারের আয়োজন রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের গরুর গোশত থেকে শুরু করে সব ধরনের মজাদার খাবার মিলছে। অভিজাত রেস্তোঁরার পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন মোড় ও পয়েন্টে বাসায় তৈরি ইফতার সামগ্রি বিক্রি হচ্ছে। জোহরের পর পসরা সাজিয়ে বসছেন মৌসুমি বিক্রেতারা। রোজাদারেরা চাহিদা এবং সামর্থ্যানুযায়ী ইফতারি কিনে নিচ্ছেন। নামকরা ইফতারির দোকানগুলোতে গতকাল রীতিমত ভিড় জমে যায়। অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন পছন্দের ইফতার সামগ্রি কিনতে। এতে সড়কে যানজট লেগে যায়। এ নিয়ে পথচারীদের তীর্যক মন্তব্য করতেও শোনা যায়। যেখানে সাধারণ ইফতার সামগ্রি কিনতে বেশিরভাগ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে এমন বিলাসিতার দৃশ্য রমজানের সংযমের সাথে বেমানান বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

ইফতারির পাশপাশি বরফ, ফলমূল, ফিরনিসহ হরেক রকম খাবার বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পসরায়। প্রতিবেশীর ঘরে ইফতার পাঠানোর রেওয়াজ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়েছে ঘরে ঘরে ইফতারি বিলি-বণ্টন। পাড়া-মহল্লার মসজিদে মুসল্লিদের জন্য ইফতারি নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজও খুব পুরনো। এর পাশাপাশি ফকির, মিসকিন ও অসহায় মানুষদের মাঝে ইফতার সামগ্রি বিতরণও চলছে নগরীতে। প্রতিবছরের মত এবারও নগরীর বেশিরভাগ মসজিদে মুসল্লিদের জন্য ইফতারির আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নানা শ্রেণি পেশার রোজাদাররা এক কাতারে সামিল হয়ে দোয়া-দরূদ পড়ছেন।

মাগরিবের আজান দেয়ার সাথে সাথে শরিক হচ্ছেন ইফতারে। স্ব স্ব মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনায় চলে এ গণইফতারির আয়োজন। চট্টগ্রামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা তাতে সহযোগিতা করছেন। পবিত্র মাহে রমজান সামনে রেখে এবারও নগরী এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার ও সেহেরি সামগ্রি বিতরণ অব্যাহত রেখেছে মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমের উদ্যোগে টানা তিন দশক ধরে চলছে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। এর পাশাপাশি অনেকেই রমজানে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা কিছুটা হলেও স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
রমজানের আগ থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সরকারের উদ্যোগে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমে আসলেও এখনও তা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে শ্রমজীবী এবং দিনমজুর মানুষ কঠিন সঙ্কটে পড়েছে। তবে পবিত্র রমজানে তাদের ঘরেও আয়োজনের কমতি নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার সেহেরি সামগ্রি দিয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদতে মশগুল হচ্ছেন অনেক হতদরিদ্র মানুষ। বস্তির ঝুপড়ি ঘর, দরিদ্রের জীর্ণ কুঠিরে পবিত্র রমজানের এক পবিত্র আবহ। মহানগরীতে মানুষের কর্মব্যস্ততায় নতুনত্ব এসেছে। পবিত্র রমজানে অফিস সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। সেহেরির পর ফজরের নামাজ আদায় এরপর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে মানুষ ছুটছে কর্মস্থলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এবার খোলা রয়েছে। গৃহিণীরা সন্তানদের স্কুলের জন্য তৈরি করে দিচ্ছেন। ছোটদের স্কুলও খোলা। ফলে তাদের জন্য সকালে নাশতা এবং স্কুলের টিফিন তৈরি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় গৃহিণীরা। কর্মজীবী মায়েদের দুর্ভোগ একটু বেশি। সকালে অফিস শুরুর সময়ে গতকাল নগরীতে যানজট হয়েছে। ছিল গণপরিবহনের সঙ্কট। তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামীদের দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। এ সুযোগে গণপরিবহন ভাড়াও বেড়েছে। চৈত্র দিনের খরতাপ উপেক্ষা করে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছেছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের চেষ্টার কমতি ছিল না। তবে বেশিরভাগ সড়কে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা তিনপালায় দায়িত্ব পালন করছেন। সড়কেই তাদের ইফতার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবুও যানজটের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর প্রতিটি সড়কে ধুলা-বালুর যন্ত্রণা। গতকাল দুপুরের পর নগরীর প্রধান সড়কের বন্দরটিলা, ইপিজেড, আগ্রাবাদসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ছিটানো হয়েছে। তাতে ধুলা-বালুর উৎপাত কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সড়কগুলোতে এমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। হাটবাজারে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রথম রমজানে বাজার করতে অনেকেই ছোটেন নগরীর বড় বড় হাটবাজারগুলোতে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ থাকলেও দাম চড়া। এ নিয়ে ক্রেতা, বিক্রেতাদের সাথে কথা কাটাকাটিও করতে দেখা যায়।

এদিকে রমজানে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার জসংযোগ কর্মকর্তা কাজী নূরজাহান শিলা জানান, মহানগরীতে পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় খোলা হয়েছে চারটি কন্ট্রোল রুম। গ্রাহকদের যে কোন অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহানগরী এবং জেলাকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। কোথাও কোন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে তাৎক্ষণিক তা সারাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং পর্যাপ্ত জনবল প্রস্তুত রয়েছে। নগর পুলিশের পক্ষ থেকেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বিশেষ করে যানজট সহনীয় রাখতে নানা তৎপরতা চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন