শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ময়মনসিংহ আরপিসিএলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি, বাড়ছে শোডশেডিং

মো: শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২২, ৮:১২ পিএম

গরমকাল পড়তে না পড়তেই লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়েছে ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দারা। এতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এনিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে ভুক্তভোগী মহলে। তবে এই শোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ি করেছেন ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগ।

তাদের ভাষ্যমতে, ময়মনসিংহ বিভাগেই চাহিদার অনুপাতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে গরমকালজুড়েই চলতে পারে এমন লোডশেডিং। এমনকি গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই লোডশডিংয়ের মাত্র আরও ব্যাপকতর হতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তারা।

এদিকে শোডশেডিংয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে নগরীর ছোট বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান মিন্টু তাঁর ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছেন, দেশের চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এরপরও কেন এত লোডশেডিং ?

তাঁর এই পোষ্টে কমেন্ট করেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে আমজাদ দোলন লিখেছে, বিরতণ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম-দূর্নীতি....। আলাউদ্দিন ইথেন লিখেছেন, অটো আর রিক্সা মিল্লে চুরি করে খাচ্ছে গিল্লা।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরীর গাঙ্গিনাপাড় এলাকার ব্যবসায়িরাও। তারা জানায়, গত সোমবার থেকে এ বছরের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এরপর প্রতিদিনই চলছে লোডশেডিং। ফলে নগরীর প্রায় সব এলাকাতেই দিনে একাধিবার লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে বাসিন্দারা।

একাধিক ব্যবসায়ি জানায়, গত বছর ময়মনসিংহে গরমকালজুড়েই ছিল ব্যাপক লোডশেডিং। এ বছর গরমের শুরুতেই আগের বছরের মতোই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এখন রমজান মাসজুড়ে যদি এই শোডশেডিং চলতে থাকে তাহলে ব্যবসার বারোটা বাজবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

সূত্রমতে, নগরীর গাঙ্গিনাপাড় ময়মনসিংহের সবচেয়ে বেশি বিপণি-বিতান কেন্দ্র। এ ছাড়া নগরীর ছোট বাজার ও বড় বাজার এলাকা ময়মনসিংহের পাইকারি ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্রস্থল। গত বছর লোডশেডিংয়ের কারণে এই ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছিল।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়িরা জানায়, গত বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে মতবিনিময় সভা করেছিলাম। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এবারও সে অবস্থা মেনে নেবার মত নয়।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শংকর সাহা বলেন, করোনায় এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের যেন আর ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী।

একই অবস্থা জেলার সবকয়টি উপজেলায়। নগরীর চেয়ে উপজেলাগুলো শোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি। প্রায় ১৫দিন আগে শুরু হওয়া এ লোডশেডিংয়ে নাখোশ ওইসব এলাকার ভুক্তভোগীরা। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের অধীনে গ্রামগুলোতে এ লোডশেডিং আরও বেশি বলেও জানা গেছে।

বিউবো ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা ছাড়াও বিভাগের বাকি তিন জেলা- নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরেও রয়েছে লোডশেডিং। এর কারণ হিসেবে তারা বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ি করছেন।

তাদের ভাষ্য মতে, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৭৮০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার চাহিদা ৩৬০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে ৬৪০ মেগাওয়াট। এতে ঘাটতি ১৪০ মেগাওয়াট। যে কারণে ময়মনসিংহ জেলা ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাকি তিনটি জেলায় লোডশেডিং হচ্ছে।
ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম। তবে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ ঘাটতি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ঘাটতির নেপথ্যে :
শোডশেডিংয়ের কারণ চিহ্নিত করে ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) থেকে দৈনিক ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তারা ময়মনসিংহ গ্রীডে ৬৫ থেকে ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ দিতে পারছে। তাছাড়া জামালপুর জেলার বেসরকারি মালিকানাধীন সিকদার গ্রুপের ৯৫ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। মূলত এই কারণে দেশের সব স্থানে বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও ময়মনসিংহে ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহের রুরাল পাওয়ার কোম্পানির (আরপিসিএল) প্রধান প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ। তিনি জানান, মূলত গ্যাস নির্ভর আমাদের পাওয়ার প্লান্ট। এতে প্রতিদিন ৪২ এমএমসিএফটি গ্যাস প্রেসারের চাহিদা রযেছে। কিন্তু চাহিদার বিপরিতে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা গ্যাস পাচ্ছি মাত্র ২০ এমএমসিএফটি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

তবে উৎপাদন ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দৈনিক ৩০ এমএমসিএফটি গ্যাস দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ।

তিনি জানান, এই আদেশ বাস্তবায়ন হলে অর্থাৎ আরপিসিএল এ দৈনিক ৩০ এমএমসিএফটি গ্যাস সরবরাহ হলে ১৫৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

এদিকে উৎপাদন ঘাটতির কারণে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) বর্তমানে ক্ষতির মুখে রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ক্ষতির মুখে আছি। টার্গেট অনুযায়ি বিদ্যুৎ বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি জাতীয় সমস্যার কারণে মেনে নিতে হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন