রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে লুটপাট

সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা বাঁধ নির্মাণের ১২১ কোটি টাকার হদিস নেই ষ দিরাই-শাল্লায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অসময়ে সুনামগঞ্জে একের পর এক হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় কৃষক । গতকাল দুপুরের দিকে শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নদী ভরে গিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। হাওরের ফসল রক্ষায় এলাকাবাসি প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বাঁধটি মেরামত করতে না পারলে প্রায় ৩০০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে যাবে ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, পিআইসি ও কিছু সরকারি অসাধু কর্মকর্তার কারণে হাওরের বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ফাটল দেখা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধে সরকারের দেওয়া ১২১ কোটি টাকা কোথায় গেলো। এখন কেন প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষককে ডাকেন হাওরের বাঁধ রক্ষা করার জন্য। এই বছরের হাওর রক্ষা বাঁধের লুটপাট ২০১৭ সালকেও ছাড়িয়ে গেছে। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে লুটপাটের বিষয়ে সব অনিয়ম-দুর্নীতির গণতদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে কৃষক সংগঠনের নেতারাসহ জেলার বিভিন্ন হাওরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃৃষকরা অংশ নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা হাওর ডুবির জন্য বাঁধ তদারকিতে থাকা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন। নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধের কাজ না করে বাঁধ নির্মাণ অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পাহাড়ি ঢলের চাপে দুর্বল বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। বাঁধের কাজে গাফিলতি ও অনিয়মকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। পরে হাওর ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেতারা।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার কার্যকরী সভাপতি অলিউর রহমান বকুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, চিত্তরঞ্জন তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশাসহ প্রমুখ।

এদিকে সুনামগঞ্জে উজানের নদ-নদীতে পানি কিছুটা কমলেও ভাটির নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢলের চাপে ঝুঁকির মুখে রয়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ । গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার তিনটি বাঁধ ভেঙে প্রায় ২২৫ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায় ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ওই তিনটি বাঁধের মধ্যে শাল্লা উপজেলার দুটি তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিইসি) কাজের বাইরে। ধর্মপাশা উপজেলার বাঁধটি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ওই এলাকায় পরিদর্শনে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে কৃষকরা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, মেঘালয়ে বা তৎসংলগ্ন সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে।

সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমাসহ সীমান্ত নদী যাদুকাটা, চলতি, পাটলাই নদীর পানি অল্প কমছে। কিন্তু এই পানি পুরাতন সুরমাসহ হাওরের ভাটির নদ-নদীতে মিশে চাপ সৃষ্টি করায় সেসব নদীতে পানি বাড়ছে। যার ফলে দিরাই, শাল্লা ও ধর্মপাশাসহ বিভিন্ন উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের ধাক্কা এসব অস্থায়ী বাঁধ সামলাতে পারছে না। তবে প্রশাসন ও পাউবো এসব বাঁধে প্রকল্পের লোকজনসহ স্থানীয় কৃষকদেরকে ও স্বেচ্ছাশ্রম কাজ করার আহ্বান জানান। জেলায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আলাদা কোনো কার্যালয় নেই। পাউবো কার্যালয় এ সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গতকাল দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। আর যাদুকাটা নদীর পানি ৯১ সেন্টিমিটার এবং পুরাতন সুরমা ১৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জহুরুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে কাচা বাঁধগুলোর নিচ দিয়ে ছোট ছোট গর্ত, যা চোরাই লিক হিসেবে পরিচিত, সেগুলো ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষকদের নিয়ে সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই পিআইসির লোকজনকে তদারকিতে রেখেছি। কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Harunur Rashid ৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৫০ এএম says : 0
Looks like heading toward Sri Lanka like situation if these thugs are not stop from stealing public fund. It is a shame we called our self 92% Muslim population.
Total Reply(0)
jack ali ৭ এপ্রিল, ২০২২, ১:৩৮ পিএম says : 0
আজকে আমরা দেশ স্বাধীন করলাম 50 বছর হল কিন্তু এই মানবতা বিরোধী শাসকরা দেশটাকে একদম ধংস করে ফেলেছে আমরা যারা সাধারন মানুষ আমরা প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে আছি এদের অত্যাচারের জন্য ও আল্লাহ আমাদেরকে ওদের হাত থেকে বাঁচাও এবং তুমি এই দুনিয়ার মালিক তোমার আইন দিয়ে আমাদের দেশ চালায় তাহলে আমরা একটু সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন