গত দু’টি রোজার মাস ভয়াল কোভিড-১৯ প্রকোপে কেটেছে আমাদের। কিন্ত এবার এই এপ্রিলের আবহাওয়ার ধরণ অনুযায়ী প্রচন্ড রোদ্র আর খড়ায় হয়ত রোজাদারদের এই সময়টা কাটাতে হবে। আশার কথা হলো ঘরবন্দি জীবন এবার রমজানে কাটাতে হবে না। ধর্মপ্রাণ মুসুলমান ও রোজাদার ব্যক্তিরা এ মাসটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। সব কিছু মিলিয়ে এবার রমজানে রোজাদারদের জন্য কিছুটা কষ্টদায়ক হতে পারে। তবুও রোজাতো রাখেতেই হবে। রোজায় অনেকের ত্বক ম্লান ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়, যা খুবই কমন বিষয়। রোজায় সারা দিন পানি না পান করার কারনে ত্বকের আদ্রতা কমে গিয়ে ত্বক প্রাণহীন ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই রোজায় সেহরী ও ইফতারের সময় বেশি করে লেবু বা ফলের শরবত খাওয়া প্রয়োজন। এ সময় অর্থ কষ্টে থাকা লোকগুলো রোজা রেখেও ভালো কিছু খাবার বা দামী খাবার খেতে পারে না। এতে আফসোস করার কিছু নাই একটু প্লান করে কমদামেও আপনি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার পেতে পারেন। যেমন-পেয়ারা, কলা, লেবুর সরবত, বেলের সরবত, দই-চিড়া, একটা- দুটা খেজুর ইত্যাদী কিন্ত বাহারী খাবার বা ভাঁজাপোড়া খাবারের চেয়ে বেশী উপকারী ও তৃপ্তিদায়ক। অন্যদিকে বেশী বেশী মাছ, মাংস, পোলাও, কাবাব বা মিস্টি জাতীয় খাবার আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এসব খাওয়ার ফলে অনেকের পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যায়, সাথে পেট ব্যথা শুরু হয়। আবার ত্বকে ব্রণের উপদ্রব বেড়ে যায়। এই সময়ে ত্বকের একটু যত্ন নিলে ত্বক থাকবে সতেজ ও সজীব। অনেক কর্মজীবিরা কাজের জন্য বা কর্ম পালনের জন্য জীবনের তাগিদে প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যেই বাইরে বের হর, পুরুষের পাশাপাশি কর্মজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়। তাই যারা রোজা থাকা অবস্থায় কিছুটা সময় পাবেন তারা ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য রাসায়নিক কসমেটিক সামগ্রীর চেয়ে বেছে নিতে পারেন প্রাকৃতিক উপায়। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক এই সময়ে আপনার ত্বকের যত্নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। টমেটো, শসা, পেঁপে, কলা, লেবুর রস আর বরফ কুচি দিয়ে আপনি তৈরি করতে পারেন এই সকল প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক। নিম্নের টিপস গুলো আপনার ত্বককে করতে পারে লাবণ্যময়।
১. রমজানে নিয়মিত ত্বককে পরিষ্কার রাখতে ১ টেবিল চামচ পাকা পেঁপে ভালোভাবে চটকে নিয়ে তার সঙ্গে এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো গলায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট ম্যাসাজ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. পানিশূন্য ত্বকে নিয়মিত কাঠবাদাম বাটা, ঠান্ডা দুধ এবং গোলাপ জল দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এটি শুষ্ক পানিশূন্য ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বককে রাখবে ঝলমলে।
৩. সপ্তাহে ৩ দিন ১ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের গুঁড়ো ও ১ টেবিল চামচ চন্দন কাঠের গুঁড়োর সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকের ব্রণ দূর কারার পাশাপাশি ব্রণের দাগ দূর করবে।
৪. যাদের ত্বক বেশি শুষ্ক তারা টমেটো, কলা, শশা একসঙ্গে মিলিয়ে প্যাক তৈরি করে ইফতারের ঘণ্টাখানেক পর ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
যাদের ত্বক শুষ্ক তারা নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক সজীব হবে।
যাদের ত্বক সাধারণ বা তৈলাক্ত তারা ওয়াটার বেইজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এছাড়া যাদের ত্বক শুষ্ক তারা অবশ্যই রমজান মাসে সব রকমের টোনার জাতীয় প্রসাধনী এড়িয়ে চলবেন। টোনার জাতীয় প্রসাধনী ত্বককে আরো শুষ্ক করে তোলে।
রমজানে শরীরে পানিশূন্যতার অভাবে অনেকের ঠোঁট ফেটে যায়। যাদের ঠোঁট ফেটে যায় তারা রাতে ঘুমাবার আগে ঠোঁটে ভালো করে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমাবেন। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচবার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ভালো রাখতে ইফতারিতে ভাঁজাপোড়া জাতীয় খাবার কম খেয়ে ঘরে তৈরি জুস খাবেন। আর সেহরীর খাবার খেয়ে একটু বেশি পানি পান করবেন। তাতে সারাদিনের পানির ঘাটতি লাঘব হবে। রোজায় আপনি ভালো থাকুন এবং সময়ের অভাবে বা রাস্তার জ্যামের কারনে আমার নিয়মিত রোগিরা যারা সেন্টারে আসতে না পারেন এই সময়ে বেশি জরুরি হলে ফোনে যোগাযোগ করে সেবা নিন। পরিশেষে সবাই সুস্থ্য ও ভালো থাকুন এই কামনা করি।
ডা. জেসমীন আক্তার লীনা
সহকারি অধ্যাপক
চর্ম, যৌন ও আল্যার্জি রোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।
সেল-০১৭২০১২১৯৮২।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন