সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘প্রথম দফা’ ভোট আজ

‘ডানপন্থী’ চরমপন্থার বিরুদ্ধে সতর্কতা ম্যাখোঁর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ প্রথম দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন দুটো ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়াই করছেন। তিনি ‘ডানপন্থী চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করেছেন। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১২ জন। তাদের মধ্যে আটজন পুরুষ এবং চারজন নারী। প্রধান ছ’জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনজন দক্ষিণপন্থী এবং দু’জন বামপন্থী ফরাসি রাজনীতিক। এমানুয়েল ম্যাখোঁকে দেখা হয় একজন মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি রিপাবলিক অন দ্য মুভ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার প্রতি দক্ষিণ ও বাম উভয় শিবিরের ভোটারদের সমর্থন রয়েছে। মারিন লা পেন এবং এরিক জিম্যো তারা দু’জনেই অতি-দক্ষিণপন্থী। তাদের মধ্যে মি. জিম্যোকে দেখা হয় সবচেয়ে বেশি কট্টরপন্থী হিসেবে। ভ্যালেরি পেক্রেস দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকানদের প্রার্থী হয়েছেন।

পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর আলোচনায় নেই। সোশালিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থন কমে গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাম শিবিরের এ বিভাজনের কারণে এমানুয়েল ম্যাখোঁ লাভবান হতে পারেন, যদিও ডানপন্থীরা অভিযোগ করছেন যে, মি. ম্যাখোঁ তাদের নীতি অনুসরণ করছেন। ইউক্রেনের যুদ্ধ নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ধরনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। তবে ভোটারদের কাছে প্রধান ইস্যু জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়া।

ধারণা করা হচ্ছে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ দিনের ব্যবধানে। যদি কোনো একজন প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে যে দু’জন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তারা পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রথম দফার নির্বাচনে কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজ প্রথম রাউন্ডের এ ভোট হবে আর দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট ২৪ এপ্রিল। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হবেন তিনিই ১৩ মে ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

এদিকেক গত ছ’মাস ধরে যেসব সমীক্ষা চালানো হচ্ছে তাতে এগিয়ে আছেন এমানুয়েল ম্যাখোঁ। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর তিনি আরো এগিয়ে যান, কিন্তু পরে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তার ব্যবধান কমতে থাকে। বাকি প্রার্থীদের তুলনায় বেশ ভালভাবেই এগিয়ে আছেন মারিন লা পেন। অন্যদিকে অতি-দক্ষিণপন্থী এরিক জিম্যোর প্রতি সমর্থন কমে যেতে থাকে। মি. জিম্যো একবার বলেছিলেন যে, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে শ্রদ্ধা করেন।

নির্বাচনী প্রচারণার আগের দিকে ইউক্রেনের যুদ্ধই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পায়। তবে সম্প্রতি যেসব জনমত সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মানুষের জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি একমাত্র প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরেই রয়েছে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অবসর ভাতা, পরিবেশ এবং অভিবাসন।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায় যা দেশটির গত অর্ধ-শতাব্দীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে তাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ফ্রান্সের অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের ওপরেই এর প্রভাব পড়েছে। ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪%। ইউরোজোনের দেশগুলোর গড় হারের তুলনায় এই হার সামান্য উপরে।

ওদিকে ফ্রান্সের মুসলমানদের ভোট বয়কট করা উচিত নাকি বাম দিকে একটি সুযোগ নেওয়া উচিত তা নিয়ে মুসলমানরা বিভ্রান্ত। তাদের অনেকেই জানেন না বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কী করতে হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ সাময়িকভাবে রাজনৈতিক কথোপকথনকে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি দৈনন্দিন আবেশ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, আমাদের বিরতি দেওয়ার এবং বিবেচনা করার সুযোগ দিয়েছে - একবারের জন্য - ভোটারদের দীর্ঘমেয়াদী বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা, যেমন আবহাওয়া পরিবর্তন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য।

কিন্তু সাসপেন্স স্থায়ী হয়নি: নতুন জরিপগুলো দেখায় যে ফ্রান্সে সবচেয়ে ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি রয়ে গেছে, এবং এর প্রোগ্রামটি মূলত অভিবাসন এবং মুসলমানদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ম্যাখোঁর শাসনামলে পাঁচ বছর ধরে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হওয়া মুসলিমদের বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গত বছর থেকে কিছু পরিবর্তন হয়েছে: বর্ণবাদ আর লুকানো নেই। রাজনীতিবিদরা আর ভান করেন না। সরকার আর মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করে না, কারণ এটি সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে উগ্র-ডান ট্রপসকে বৈধতা দেয়।

যেহেতু বর্ণবাদী এবং ষড়যন্ত্রমূলক ‘মহান প্রতিস্থাপন’ তত্ত্বটি মূলধারার রাজনীতিবিদদের দ্বারা আলোচনা করা হয়েছে এবং রাষ্ট্র উদ্বাস্তুদের ওপর একটি বর্ণবাদী এবং জাতিগতভাবে নির্বাচনী নীতি প্রয়োগ করে, এ দৌড়ে কোনো ভোটারকে ‘প্রজাতন্ত্রী মূল্যবোধ’ ঝুঁকিতে রয়েছে তা নিয়ে আর বোকা বানানো যাবে না। এবং সংখ্যালঘুদের ওপর এই ব্যাপক নিপীড়ন যতটা ক্ষতিকর এবং সুশীল সমাজের গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং পরিবারের জন্য ধ্বংসাত্মক, বিতর্কমূলক পরিবর্তন একটি ইতিবাচক বিকাশ, কারণ এটি রাজনৈতিক খেলাকে স্পষ্ট করে।
এ গেমটিতে একজন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ রয়েছেন, যিনি অত্যন্ত ডানপন্থীদের বিরোধিতা করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, শুধুমাত্র পুলিশের সহিংসতাকে ক্ষমা করে পদ্ধতিগতভাবে তার এজেন্ডা প্রয়োগ করার জন্য; ধ্বংসাত্মক অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি সমর্থন; ভিন্নমত প্রকাশ করতে সাহস করে এমন কোনো সুশীল সমাজ গোষ্ঠীকে হুমকি দেওয়া এবং হয়রানি করা; এবং মুসলিমদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা গ্রহণ করতে অস্বীকারকারী সমস্ত মুসলিম সংগঠনকে ধ্বংস ও বিভক্ত করা। সর্বদা, ফ্রান্স আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বাধীনতার মশাল বাহক হিসাবে জাহির করে, সামান্য সাফল্যের সাথে।

ম্যাখোঁন দেশের কোভিড-১৯-পরবর্তী রাজনৈতিক স্মৃতিভ্রষ্টতা এবং অসুখী জনসাধারণের নির্বাচনী বিচ্ছিন্নতার ওপর বাজি ধরছেন বলে মনে হচ্ছে, যার লক্ষ্য হল কম মন্দ হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হবেন। তারপরে একজন বামপন্থী প্রার্থী, জঁ-লুক মেলেনচন, যিনি একটি গতিশীল প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং নির্বাচনে ভাল পারফর্ম করছেন, তার সমর্থন ১৫ শতাংশেরও বেশি এবং এখনও, তিনি পুতিন এবং আসাদ সরকারের প্রতি তার অতীত সমর্থন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সংগ্রাম করেছেন। সূত্র : বিবিসি নিউজ, মিডল ইস্ট আই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন