শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চাঁদাবাজি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই

| প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর ফুটপাথ, দোকানপাট ও মার্কেটে চাঁদাবাজি এখন জোরদার। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন চাঁদাবাজচক্র ফুটপাথ, অস্থায়ী-স্থায়ী কাঁচাবাজার, ছোট-বড় দোকান, বিপনি বিতান এমনকি ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করছে। এসব চাঁদা সরকারি দলের নেতাকর্মী, দুর্নীতিবাজ পুলিশ, গডফাদার, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীদের পকেটে যাচ্ছে। চাঁদা আদায়কারীদের বলা হয় লাইনম্যান। এরা চাঁদাবাজদের পক্ষে চাঁদা আদায় করে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, রাজধানীতে চাঁদা আদায়ের কাজে নিয়োজিত আছে এমন গ্রুপের সংখ্যা দুই শতাধিক, সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় শত। এবার ফুটপাথ, বাজার ও দোকানপাট থেকে অন্তত দৈনিক ১০ কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, চাঁদাবাজরা ইতোমধ্যেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা শারীরীক উপস্থিতি ছাড়াও চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার ইত্যাদিও ব্যবহার করছে। ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রকাশ্য গুলি করে হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত বোধ করছে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনের এক শ্রেণির নেতাকর্মী। তারা নানা অসিলা ও উপলক্ষে চাঁদা আদায় করছে। ব্যবসায়ীদের মতে, চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করার উপায় নেই। কখনো কখনো চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলে। অভিযানে গ্রেফতারও হয় অনেক চাঁদাবাজ। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। এসে যথারীতি চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়।

চাঁদাবাজি আমাদের দেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আসলে এটা বিনাপুঁজির অতি লাভজনক এক ব্যবসা। সঙ্গতকারণেই ক্ষমতাসীন দল, তার সহযোগী কিংবা অঙ্গ সংগঠনের এক শ্রেণির নেতাকর্মী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। এ জন্য প্রয়োজনে ঝুঁকি নিতেও তারা পিছপা হয় না। বলা হয়, যেখানে চাঁদাবাজি সেখানেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এর বাইরে পুলিশের এক শ্রেণির সদস্য ও কর্মকর্তা চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত। পরিবহন মালিক- শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী কিংবা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। শীর্ষসন্ত্রাসী ও গডফাদারদের নামেও চাঁদাবাজি চলে। ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীই যেহেতু চাঁদাবাজদের টার্গেট, সুতরাং চাঁদার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে পণ্যমূল্যের ওপর। চাঁদা দেয় ব্যবসায়ীরা। এজন্য তাদের অবশ্য কোনো আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় না। তারা দেয় চাঁদার সঙ্গে পণ্যের মূল্য সমন্বয় করে একটা দাম নির্ধারণ করে এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে তা আদায় করে। কার্যত পণ্যের আসল ও বাড়তি মূল্য ক্রেতাসাধারণকেই দিতে হয়। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটা বড় কারণ যে চাঁদাবাজি, এখন সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করেন। দেখা যায়, অনেক সময় উৎপাদক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। আবার ভোক্তা পর্যায়ে বিশেষ করে রাজধানীর বাজারে সেই পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য গুনতে হয় ক্রেতাদের। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায়, রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ট্রাকভাড়া ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু রাজশাহীর আমচত্বর, বেলপুকুরিয়া, নাটোর বাইপাস, এলেঙ্গা বাইপাস, টাঙ্গাইল বাইপাস, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে হয় দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। এই বাড়তি টাকা কাদের পকেট থেকে যায়, তা নতুন করে উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। আবার উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পৌঁছাতে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। এগুলো হচ্ছে, স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় মজুতদার, স্থানীয় খুচরাবাজার, ব্যবসায়ী, পাইকারী ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় বাজার, আড়তদার, প্রক্রিয়াজাতকারী ইত্যাদি। এই প্রতিটি ধাপেই পণ্য মূল্য বাড়ে এবং এর সবই শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে চাপে। আলু, টমাটো, বেগুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি বেচে যেখানে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে না, সেখানে রাজধানীর ক্রেতাকে ওইসব পণ্য প্রতিকেজি যথাক্রমে ২৫ টাকা, ৩৫ টাকা, ৫০ টাকা টাকা, ৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এরপরও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছেই। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যশ্রেণির মানুষও এখন পণ্যমূল্যে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তারা লজ্জা-শরম ভেঙ্গে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিয়েও পার পাচ্ছে না। খবর বেরিয়েছে, অনেকই খাদ্যের পরিমাণ কমিয়েছে, দু’ বেলার জায়গায় একবেলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। কম খাদ্য গ্রহণের কারণে তাদের পুষ্টিহীন, দুর্বল ও রোগব্যাধীর শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত। পণ্য থাকলে কোনো লাভ নেই, সেই পণ্য কেনার ক্ষমতা মানুষের থাকতে হবে। এটাই আসল। অতীতে এ দেশে যেসব দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তার অন্যতম কারণ ছিল মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া বা না থাকা। শ্রীলংকার এখনকার অবস্থা মর্মান্তিক। তেমন অবস্থা আমাদের দেশে দেখা দিতে পারে কিনা, প্রশ্ন উঠেছে। এটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। যেকোনো কিছু যেকোনো সময় ঘটতে পারে। পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে স্থিতিশীল করা এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ। আর এ জন্য সকল প্রকার চাঁদাবাজি রহিত করা আবশ্যক। তাতে পণ্যমূল্য অনেকটাই কমে আসবে। এইসঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর কারসাজি ডেড স্টপ করতে হবে। পুলিশের অভিযানে কিংবা ব্যবসায়ীদের আশ্বাসে আশ্বস্থ হওয়ার কোনো কারণ আমরা দেখি না। কারণ, পুলিশের কিছু লোক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সিন্ডিকেটবাজ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা জানেন। মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস রাখছে। আশা করছে, তিনিই চাঁদাবাজি নিরোধ করতে পারেন। কীভাবে, সেটাও তারই ভালো জানা আছে। প্রধানমন্ত্রী এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন, আমরাও সেটা প্রত্যাশা করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ashraful Islam ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৭ এএম says : 0
পঁচে গেছে বাংলাদেশ।পঁচে গেছে মানুষের বিবেক মানবিকতাবোধ।এই সংকটময় পরিস্থিতি তাদের আরো হিংস্র করে তুলেছে।আইন বলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাছাড়া তো ক্ষমতার অপব্যবহার আছেই।
Total Reply(0)
জয়নুল আবেদীন ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৯ এএম says : 0
সারাদেশেই এটা চলছে প্রশাসনের সহযোগিতায়.. সরকারদলীয় লোকজন এতে জড়িত।
Total Reply(0)
Shishir Rozario ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের সব জেলাতেই চাঁদাবাজি চলছে আর থানা পুলিশ ও কিছু নেতারা এই কাজ গুলো করে। থানায় গেলে বলে আমাদের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। এটা পুলিশ এর পুরাতন কৌশল সুতরাং সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
Total Reply(0)
jack ali ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৫২ এএম says : 0
যারা চাঁদাবাজের প্রধান তাদের কাছে বিচার চাই এটা কিভাবে এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার
Total Reply(0)
jack ali ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চলে চাঁদাবাজ বলতে বাংলাদেশের কোন জিনিস থাকতো না কেননা এদের শাস্তি এত কঠিন সেটা কল্পনা করা যায় না হাতের বাম পাশ পায়ের ডান পা কেটে দিতে হবে এটাই হচ্ছে শরীয়তের বিচার
Total Reply(0)
jack ali ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৫৪ এএম says : 0
চাঁদাবাজি গর্হিত অপরাধ। প্রভাবশালী চক্র জোরপূর্বক কাউকে নিজ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। ডাকাতি ও দস্যুতার সঙ্গে এর মিল আছে। ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি হারাম ও কবিরা গুনাহ। চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই ওই গুনাহর সমান অংশীদার। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরো না এবং এ উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা কোরো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮) রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১৬৭৫৬) চাঁদাবাজি করার জন্য সাধারণত ভয়ভীতি দেখানো হয়, ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয় এবং জমিনে ফ্যাসাদ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়। এসব কাজ সম্পাদনকারীদের চারটি শাস্তির যেকোনো একটি শাস্তি দিতে হবে। হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসি দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অন্য দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দি করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ ও রাসুলের বিধি-বিধানের ওপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে তাদের হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসি দেওয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অন্য দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দি করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এটা তাদের জন্য পার্থিব ভীষণ অপমান আর পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে...। ’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৩৩) পাশাপাশি মানুষের হূত অধিকার তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে, সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয় তার ভাইয়ের পক্ষে তার কাছ থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে, তাহলে তার (মজলুম) ভাইয়ের গুনাহ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৫) চাঁদা উত্তোলনকারী, ভোগকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরাসরি জালিম অথবা জালিমের সহযোগী। ইহকাল ও পরকালে তারা কঠিন শাস্তির উপযোগী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে বেড়ায়। বস্তুত তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৪২) রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মৌসুমি চাঁদাবাজরা। সরকারদলীয় বড় ভাই অথবা স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফুটপাথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অস্থায়ী হাট-বাজার, ইফতারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে এ টাকা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলেই চালানো হচ্ছে অত্যাচার। অথবা দোকানই উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। এমন ঘটনা অহরহ ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভোগান্তির ভয়ে থানা পুলিশকে জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা। তবে সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে বেশ কিছু চাঁদাবাজ হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়ায় আসার আলো দেখছেন ভুক্তভোগী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি এসব চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য না থাকলে নিত্য পণ্যের দাম অনেক কমে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েকভাবে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সরকারদলীয় উচ্চ পর্যায়ের নেতা অথবা স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফুটপাথ অথবা রাস্তার একাংশ জায়গা ইজারা নিয়ে থাকে উঠতি বয়সী মৌসুমি চাঁদাবাজরা। এরপর ওই ফুটপাথ অথবা রাস্তায় বসানো হয় অস্থায়ী বাজার। সেখানে প্রথমে দোকানের পজিশন বিক্রি হয় কয়েক লাখ টাকায়। এরপর সাপ্তাহিক, মাসিক ও দিনহারে কয়েক খাতে চাঁদা দিতে হয় ওই ব্যবসায়ীদের। আবার কোনো এলাকায় আগে থেকে গড়ে ওঠা নানা পণ্যের দোকান অথবা অস্থায়ী হাট-বাজার থেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চাঁদা আদায় করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এমন বাজার ও দোকান থেকে চাঁদা আদায়কারী চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩ একটি দল। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা চাঁদার টাকা। ভুক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ফুটপাথ ও রাস্তার একাংশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব অস্থায়ী বাজার। এর মধ্যে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ব্যুরো ভবনের সামনের নতুন রাস্তায় প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে অস্থায়ী বাজার। অস্থায়ী হলেও এ বাজারে পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই। নানা পণ্যের কয়েক শ’ দোকান নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। আগারগাঁও মিরপুর ৬০ ফিট রাস্তার কিছু কিছু এলাকায়ও বসে অস্থায়ী বাজার। আবার খিলগাঁও তালতলা, মেরাদিয়া, বনশ্রী এলাকায় দিনব্যাপী চলে অস্থায়ী বাজার। এর মধ্যে মেরাদিয়া বাজার প্রতি বুধবার সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। এ ছাড়াও ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর, মতিঝিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেছনেসহ বিভিন্ন স্থানে বসে অস্থায়ী বাজার। যেখান থেকে মাসে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন