অনলাইনে কেনাকাটা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে। করোনা মহামারি একে দ্রুতায়িত করেছে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনকে এখন অপরিহার্য ভাবা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দোকানপাট আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার জায়গায় স্থান নিচ্ছে অনলাইন। অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে ব্যাপকহারে। ক্রেতা মহলে এর জনপ্রিয়তা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশেও অনলাইনে কেনাকাটা একদা শখের বশে বা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও এখন অনলাইন বাজারের পরিধি অনেক বেড়েছে। করোনাকালে এই বাজারই ছিল কেনাকাটার প্রধান মাধ্যম। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, দ্রুত বিকাশশীল এই ব্যবসা খাতটি কিছু প্রতারকপ্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে আস্থাহীনতার ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কর্মাস খাতের সংশ্লিষ্টদের ত্বরিত উদ্যোগ ও ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা অনেকটাই ফিরেছে। শুধু প্রতারকপ্রতিষ্ঠানই নয়, একশ্রেণির ক্রেতার সীমাহীন লোভ কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের পথকে সহজ ও মসৃণ করেছে। অস্বাভাবিক মূল্যহ্রাস ও অফারের ফাঁদে পা দিয়ে তারা কেবল ক্ষতিগ্রস্তই হয়নি, অনলাইন ব্যবসাকেও অনেকখানি ডুবিয়েছে। যা হোক, প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের কর্মকর্তাদের অনেককে আটক করা হয়েছে। হাতিয়ে নেয়া অর্থেরও একটা অংশ গ্রাহকদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কিউকমের ৫১ কোটি টাকা, আলেশামার্টের ২০ কোটি টাকাসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের অর্থ (মোট ৭৩ কোটি টাকা) প্রতারিত গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা এখাতে অস্থিরতা কমাতে ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া অনুকূল পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠায় ই-কর্মাস ব্যবসার নিবন্ধনসহ আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, অনলাইনে ব্যবসা আগামী দিনগুলোতে আরো প্রসার লাভ করবে।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে। বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটা বড় অংশ ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। অনলাইন শপিং, অনলাইন মার্কেটিং ইত্যাদি এরই অংশ। ঝুঁকিহীন, ঝামেলামুক্ত এবং নিরাপদ হওয়ায় অনলাইনে পণ্য কিনাকাটায় মানুষ প্রধান্য দিচ্ছে। প্রযুক্তি ও পদ্ধতির এই আনুকূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত থাকতে পারি না। করোনাকালে আমরা দেখেছি, কীভাবে অনলাইন শপ ও অনলাইন বাজার আমাদের উপকারে এসেছে। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ই-কর্মাস খাতকে ২০২৫ সালে যে জায়গায় চিন্তা করা হয়েছিল, করোনা পরিস্থিতি সেই জায়গায় ৫ বছর আগেই তাকে পৌঁছে দিয়েছে। এখন পাড়ার মুদি দোকান থেকে বড় বড় শপিং মলগুলোও অনলাইনে পণ্য বিক্রী করছে। এ লক্ষণ উৎসাহজনক। ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের সূত্র মতে, দেশে ওয়েবভিত্তিক অনলাইন শপ আছে প্রায় ১৩শ’র মতো। ফেসবুকভিত্তিক আছে ১০ হাজারের বেশি। এসব শপে কাজ করছে কয়েক লাখ মানুষ এবং অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রী হচ্ছে বছরে। বলা বাহুল্য, অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার সম্ভাবনা অপার। পণ্য প্রাপ্তি দ্রুত, নিরাপদ, সহজ ও নিশ্চিত করতে পারলে এর বিকাশ অবধারিত। এইসঙ্গে অবশ্য প্রতারণার আশংকা ও ঠকার ভয় দূর করতে হবে। প্রতারণা ও ঠকার শংকা-ভীতি একেবারে রহিত করা সম্ভব নয়। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা ও পদক্ষেপে কমানো ও দ্রুত প্রতিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। প্রতারণারোধ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় এইখাতে একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠন এবং উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি ব্যবসায়িক পরিচিতি নম্বর নিতে হবে। ফেসবুক ব্যবহার করে যারা ব্যবসা করবে, তাদেরও এই আইডি নিতে হবে। গত বছর জুলাইয়ে জাতীয় ডিজিটাল কর্মাস পলিসি ২০২০ নামে একটি নির্দেশিকাও প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে অর্ডার নেয়া, ডেলিভারি নেয়া এবং অর্থ পরিশোধ করার নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে।
আগে অনলাইনে ব্যবসার কোনো প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগ নিবন্ধন করার ব্যবস্থা ছিল না। ব্যবসার পদ্ধতি সংক্রান্ত কোনো নীতিমালাও ছিল না। ফলে প্রতারণার সুযোগ ছিল এবং কিছু মানুষ সেই প্রতারণার শিকার হয়েছে। প্রতারিত হওয়ার আশংকা যেহেতু রয়েছে বা থাকবে, সুতরাং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে সর্বদা। কোথাও কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতারণা হচ্ছে কিনা, অনিয়ম হচ্ছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। নিয়মিত তদারকি ও মনিটারিং বহাল রাখতে হবে। কোথাও কোনো বিচ্যুতি হলে, ব্যতিক্রম হলে, সঙ্গে সঙ্গে তা রুখতে হবে এবং প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্রেতা সাধারণেরও সাবধান হতে হবে। অস্বাভাবিক অফারে পণ্য কেনা পরিহার করতে হবে। এসর্ম্পকিত যে নির্দেশিকা আছে তা মেনে চলতে হবে। লোভে পাপ পাপে মরণÑ প্রবাদটি স্মরণ রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠান দেখে, জেনে-বুঝে পণ্য খরিদ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঈদের প্রাক্কালে প্রতারণার আশংকা বেশি থাকে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আগেই সতর্ক বার্তা জানিয়ে দিতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, ব্যবস্থা নিতে তৎপর থাকতে হবে। নয়তো, কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব তাকে বহন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন