শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

হাওরের বাঁধ ভেঙে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভারতের চেরা পুঞ্জিতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভাঙনের কারণ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমাদের তিনটি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ফসলের ক্ষেত্রে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া যাদের কারণে বাঁধ ভেঙে গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিতে পারছি, এখনকার মতো এতে প্রকল্প কখনই নেওয়া হয়নি। সুনামগঞ্জের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্প ৫০ কোটির উপর হলে সমীক্ষার প্রয়োজন আছে। সুনামগঞ্জের জন্য প্রকল্প নিয়েছি ৪৯৪ কোটি টাকার। নদী খননের ১৫৪৭ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। একনেকে পাস হলে নভেম্বরে কাজ শুরু করব। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। আগামী বছর থেকে এ সমস্যা হবে না। আগে এমন সমস্যা হয়নি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১ থেকে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ২০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অথচ সারা বছর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫ হাজার মিলিমিটার। হঠাৎ বৃষ্টিপাত ও নদীতে বেশি মাত্রায় পলি জমায় বাঁধের ওপর প্রভাব পড়ে। হাওরে কি পরিমাণ ফসল ক্ষতি হয়েছে সেটি জানার জন্য কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ জানা সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফ করা হবে এবং তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। ৪৮টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাওরে ১১০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এদিকে হাওর অঞ্চলে বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ার ঘটনায় ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে, ভেসে যাচ্ছে স্বপ্নের ফসলবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে, ভেসে যাচ্ছে স্বপ্নের ফসল।
তিনি বলেন, নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদী ভাঙন হয়ে যায়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যে বসবাস করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওরে যাবো এবং কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা জানতে পারবো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বাবস্থায় সক্রিয় আছি। আমরা চাই না ফসলের হানি হোক।
বার বার বাঁধ ভাঙার অভিযোগ আসে কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয় না এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন ৮ জন প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। এটা তো আর্মি না যে, একজন লোককে রিটায়ার্ড করে দেওয়া যায়। নিয়মের বাইরে কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না। দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই ৮ জনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি। আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য, সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য।
এম এনামুল হক শামীম বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কৃষকদের কৃষি ঋণ মওকুফের কথা সরকার ভাবছে। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করছি। এর মধ্যে কোনো গাফিলতি থাকলে, সেটা খুঁজে বের করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরসমূহের বোরো ফসল আগাম বন্যা হতে রক্ষার্থে তদারকি ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধসমূহের মেরামত কাজ বাস্তবায়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলাভিত্তিক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলায় বাপাউবোর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে স্বাভাবিক থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা) এবং মেঘালয় প্রদেশের স্থানসমূহে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১২০৯ মিলিমিটার। প্রতি বছর আগাম বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকি, এবারও ছিলাম। অনেকে বলেছে কাজ দেরিতে হয়েছে। কাজ দেরির কারণ আমরা ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ফেব্রুয়ারিতে শেষ করি। কিন্তু পানি জমে থাকায় সময়মতো কাজ শেষ করতে পারিনি। জানুয়ারিতে শুরু করেছিলাম, কাজটি শেষ পর্যায়ে ছিল। ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, হাওরে আমি নিজে গিয়েছি। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে আমি বলতে চাই এক্ষেত্রে কারো কোনো গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জানিয়ে উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে তিন জায়গায় যথাক্রমে ৫০, ৫০ ও ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটা জায়গায় বন্ধ করতে পেরেছিলাম এবং আরেকটা জায়গায় পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার। আরেকটা মেরামতের কাজ চলছে। আমরা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। হাওর আন্দোলনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি, তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে কাজ করছি। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ভাঙন ছিল সাড়ে নয় হাজার হেক্টর, এখন সেটা সাড়ে তিন হাজার হেক্টরে এসেছে।
সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ১৮-১৯ সালে স্টাডি করে দেখেছি কোন জায়গা দিয়ে পানি গড়ায়। যেখানে প্রতিবছর কাটা হয় এবং ভরাট করা হয় সেখানে। সেখানে জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। সেখানে নৌ চলাচল হবে। যখন খোলার প্রয়োজন হবে তখন খুলে দেব আর যখন বন্ধ করা দরকার তখন বন্ধ করে দেব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১৩ পিএম says : 0
আজ স্বাধীনতার 50 বছর হলো দেশের যারাই সরকার আছে শুধু চাপাবাজি করে কথায় কথায় পুরো বিমান নিয়ে বিদেশে ভ্রমণ করে তারা কি ইউরোপে যায় নাই কত-শতবার গেছে ইউরোপে কি বাংলাদেশের মত ভাঙা রাস্তা কোন প্রদেশে বছরের-পর-বছর করে থাকে কোন মানুষকে রাস্তায় থাকে সবাইকে বিল্ডিং দেয়া হয় সবাইকে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয় যত ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সব দেয়া হয় আর আমাদের দেশে যত ধরনের নাগরিকদের বাঁশ দেওয়া হয় সেটা লিখতে গেলে পুরা একটা বই হয়ে যাবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন