শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফসল রক্ষায় কৃষকের লড়াই

সুনামগঞ্জে ছোটবড় ১৫৪টি হাওর নদ-নদীতে বাড়ছে পানি দিরাই-তাহিরপুরে হাওরের বাঁধ ভেঙেছে নেত্রকোনায় কির্তনখোলা বাঁধ হুমকিরমুখে

মো. হাসান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় টাঙ্গুয়ার হাওর, দেখার হাওর, মাটিয়ান হাওর শনির হাওর, চন্দ্রসোনার তালসহ ছোট বড় ১৫৪টি হাওর। হওরের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার একটি প্রচলিত প্রবাদে হচ্ছে ‘মৎস পাথর ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ’। সেই সুনামগঞ্জের হাওরে ফের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আবারও ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ঝুঁঁকিতে রয়েছে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, ছাতক ও জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরের বোরো ফসল।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন দিন ধরে উজানের ঢলে হাওর এলাকায় পানি বেড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁঁকিপূর্ণ অংশে চাপ সৃষ্টি করছে। এ কারণে তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীর তীর উপচে শুরুতে গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশে পানি প্রবেশ করে। পরে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের পাশের বাঁধ পানির চাপে ভেঙে যায়। এতে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ও মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর এবং দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বোরো ধান তলিয়ে যায়।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের ২৭ নম্বর পিআইসি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বর্ধিত গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। গত রোববার বিকেল ৪টার দিকে বাঁধ ভেঙে যায়। এর আগে একই দিন সকাল ৮টায় ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বাঁধের ওপর দিয়ে গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ করে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে গুরমা হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৬০ হেক্টর ফসলি জমি তুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার সকাল থেকে ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বাঁধ দিয়ে বর্ধিত গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ করা শুরু হয়। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বর্ধিত গুরমা হাওরে তাহিরপুর উপজেলা অংশে প্রায় ৬০ হেক্টর জমি রয়েছে। বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করার ফলে হাওরের জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সকালে ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ধিত গুরমার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ২৭ নম্বর প্রকল্পটি দেবে গিয়ে পানি ঢুকেছে হাওরে। হাওরের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর বলেন, পাটলাই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। অবশেষে রোববার বিকেলে পানির প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে যায়।
অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সোমবার ১৮ এপ্রিলএর মধ্যে মাত্র ৫১ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আগাম বন্যার কারণে বাধ ভেঙে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ২৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, সকাল থেকে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত কমে যাবে। গতকাল উজানে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে, তবে পানি দ্রুতই কমে যাবে। এদিকে সুনামগঞ্জের পানি নেত্রকোনার হাওরে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের সব বাঁধ ঝুঁঁকিপূর্ণ। পানির চাপে বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই দ্রুত হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, হাওরের বাঁধগুলোতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা হচ্ছে। কারণ নদীর তীর উপচে হাওরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার জানান, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাঁধ ভেঙে আবারও হাওর প্লাবিত হয়েছে। এতে হাওরের প্রায় এক হাজার ৫০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। উপজেলার জগদল ইউনিয়নের সাতবিলা রেগুলেটর সংলগ্ন হুরামন্দিরা হাওরের ৪২ নম্বর পিআইসির বাঁধ ভেঙে গত রোববার দিবাগত রাত ১০টার দিকে পানি প্রবেশ করে হাওর প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের ১.৩৪৭ কিলোমিটার অংশের বাঁধ ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামতের জন্য সরকার ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ২১৭ টাকা ৭৭ পয়সা বরাদ্দ দিয়েছে। উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বহমান কামারখালী নদীর পাড়ের ওই হাওর রক্ষা বাঁধটি ভেঙে হাওরে পানি ঢোকার খবর পেয়ে এলাকাবাসী সর্বাত্মক চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি।

দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দিরাইয়ের হাওরে প্রায় ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। এ পর্যন্ত হাওরের ২৭ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাহিদ আহমেদ জানান, হুরামন্দিরায় প্রায় এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, হাওরটিতে অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। যার অন্তত ৭০ শতাংশ কাটা হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ.টি.এম. মোনায়েম হোসেন জানান, গত রোববার রাতে দিরাইয়ের আরও একটি হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে দিরাইয়ের নদীগুলোতে বিপদ সীমার ৫.০৭ মিটার উপরে অবস্থান করছে। তবে নদীতে এখনও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে রোববার রাত দেড়টায় উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর হাওরের বাঁধ রক্ষায় আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকিং করে মাটিয়াপুর বাঁধে উরা-কুদাল নিয়ে যাওয়ার আহ্বানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ঘুম থেকে উঠে হাওরের ধান রক্ষার জন্য বাঁধে গিয়ে মাটি কেটে আসেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাঁধটি ভালো রয়েছে।

নেত্রকোণা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, নেত্রকোণায় দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কির্তনখলা বাঁধ ঝুঁঁকির মুখে পড়েছে। নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার ধনু নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় কৃষকরা দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কির্তনখলা, গোমাইল ও চরহাইসদা বাঁধ হুমকির মুখে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এসব বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নেত্রকোণার কোন বাঁধ ভেঙে কৃষকের ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। আশা করি কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী জানান, মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ি হাওর উপজেলায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধানের আবাদ করা হয়েছে। বন্যার হাত থেকে বাঁচতে ৮০ ভাগ ধান পাকলেই কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আমরাও কৃষকদেরকে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি। এপর্যন্ত হাওরে ৫৫ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। হাওরের বাঁধের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করছে। পানি আর না বাড়লে কৃষকরা তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

অবৈধভাবে করোনা টেস্টের সার্টিফিকেট বিক্রয়কারীকে বাঁচাতে তৎপর হাসপাতাল প্রশাসন
অপরাধ করেও তিনি হিরো!
বরখাস্ত কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আইনজীবীকেই হাসপাতালের আইন উপদেষ্টা নিয়োগ
হাসান সোহেল
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ছাড়া ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার কেলেঙ্কারীতে ২০২০ সালের ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়, তার মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। এখনো সাহেদ জেলহাজতে। একইভাবে জালিয়াতি করার অভিযোগে একই বছরের ১২ জুলাই জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবরিনা চৌধুরী গ্রেফতার হন। যখন করোনাভাইরাস নিয়ে দেশ হিমসিম খাচ্ছিল, তখন তারা মানবতার সেবা না করে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। অবশ্য শাস্তি হিসেবে প্রায় ২ বছর হলো এখনো জেলে আছেন দু’জনই।

সাহেদ বা সাবরিনা পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠান খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের চেষ্টা করে এখনো জেল খাটছেন। অথচ সরকারি চাকরি করে একইভাবে বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে শিশু হাসপাতালের চাইল্ড হেলথ্ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আরটিপিসিআর ল্যাবে ফ্রি টেস্ট করিয়ে অবৈধভাবে ৫ হাজার টাকা আদায় করে চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেও হাসপাতালের একটি অসাধু চক্র তাকে বাঁচাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

বরখাস্ত হওয়ার দীর্ঘদিন পরও শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি কিংকর ঘোষকে। এমনকি কিংকর ঘোষের ব্যক্তিগত আইনজীবীকেই আবার শিশু হাসপাতালের আইন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর কিংকর ঘোষ সংক্ষুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট পিটিশন করলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমারকে মামলার দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও মামলার রায়ের দিন রাস্তায় জানযট অজুহাত দেখিয়ে রায়ের সময় উপস্থিত হতে পারেননি বলে হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছেন।
শিশু হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের মতে, সবকিছু সাজানো নাটক। কিংকর ঘোষকে বাঁচানোর জন্যই একটি অসাধু চক্র তাকে দিয়ে রিট করিয়ে আদালতে যথোপযুক্ত প্রমাণাদি দাখিল না করে কিংকর ঘোষের পক্ষে রায় নেয়ার পায়তারা করছে। যদিও শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কিংকর ঘোষকে বাঁচানোর সুযোগ নেই। সে অপরাধ করেছে, যা প্রমাণিত। হাসপাতাল মামলার রায়ের বিপক্ষে আপিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যেভাবেই হোক কিংকর ঘোষের আইনজীবীকেই হাসপাতালের আইন উপদেষ্টা করা হয়েছে। কিভাবে এটা হলো আমি জানিনা। বোর্ড নিয়েছে।

সূত্র মতে, পদ্মা মেডিক্যাল, জিকেজিসহ বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে শিশু হাসপাতালের আওতাধীন চাইল্ড হেলথ্ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আরটিপিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে অবৈধভাবে ৫ হাজার টাকা আদায় করতো কিংকর ঘোষসহ শিশু হাসপাতালের একটি চক্র। শিশু হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবের টেস্টের দায়িত্বে ছিলেন রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ।

এই চক্রের হোতা হিসেবেও কাজ করেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের এই রোগতত্ত্ববিদ। তবে চক্রটি শুধু পদ্মা মেডিক্যাল সেন্টারই নয়, বহুল আলোচিত করোনা টেস্ট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জিকেজি গ্রুপেরও নমুনা পরীক্ষা করিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ বাণিজ্য করেছেন। যদিও করোনা টেস্টের নামে বড় অঙ্কের বাণিজ্য করা কিংকর ঘোষ বরখাস্ত হলেও ধরাছোয়ার বাইরে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা।

দৈনিক ইনকিলাবের অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে আসলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক তদন্ত কমিটি তদন্ত করে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত করা হয় কিংকর ঘোষকে। তবে তাকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছে হাসপাতালের একটি অসাধু চক্র। এই ধারাবাহিকতায় কিংকর ঘোষ চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট পিটিশন দায়ের করে। যার নম্বর ৮২৮৮/২০২১০। মামলাটি হাইকোর্টে এনেক্স ভবনের ৩৩ নং কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত ছিলেন হাসপাতালের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার এ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত অ্যাটর্নী জেনারেল পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ায় হাসপাতালের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আর তাই বেশ কিছুদিন আইন উপদেষ্টার পদ শূন্য ছিল। এ্যাডভোকেট রবিউল হাসানকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টকে আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী মামলার সকল ডকুমেন্টস বর্তমান আইন উপদেষ্টার বরাবরে প্রেরণ করা হয়।

অথচ রবিউল হাসান এ মামলার ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে অন্য ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে এ্যাডভোকেটকে আব্দুর রাজ্জাক রাজুকে দায়িত্ব দেন। গত ৫ এপ্রিল রীট পিটিশনের রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করা ছিল। কিন্তু হাসপাতালের একটি অসাধু চক্র কিংকর ঘোষকে বাঁচাতে আদালতে উপস্থিত না হয়ে আদালতের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন না করে কিংকর ঘোষের পক্ষে রায় নেয়ার চেষ্টা করে।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা শিশু হাসপাতালে আবারও চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ‘করোনা টেস্টে তুঘলকি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে। এরপর নড়েচড়ে বসে ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রশাসন। প্রথমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনিয়মের বিষয়ে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। জবাব প্রশাসনের নিকট গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে করোনা পরীক্ষার অনিয়মে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে সঠিকভাবে প্রতীয়মান হয়। পরে কমিটির প্রতিবেদন গত ২০২১ সালের ৬ মার্চ শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ৩৭৮ তম সভায় উপস্থাপন করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে বোর্ড আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়। পরে আত্মপক্ষ সমর্থনের জবাব ব্যবস্থাপনা বোর্ড গত ১১ মে ৩৭৯ তম সভায় উপস্থাপন করে। এ সভায় বোর্ড আরও অধিকতর তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব তানজিয়া সুলতানাকে দায়িত্ব দিয়ে ১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনেও আর্থিক অনিয়মের সত্যতা প্রমাণসহ প্রচলিত চাকরি বিধানের লঙ্ঘনের অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যা ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ৩৮১তম সভায় উপস্থাপন করা হলে বোর্ড কিংকর ঘোষকে ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের চাকরি হতে বরখাস্ত করে।

কিংকর ঘোষ : শিশু হাসপাতালে যার নিয়োগই সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে। ২০১৮ সালের ৬ মে বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে নোট অনুমোদনপূর্বক পরিচালক ও উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) একই বছরের ১৫ মে অবৈধভাবে ৭ম গ্রেডে এ্যাডহক ভিত্তিতে এক বছরের জন্য নিযোগ দেয়। প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তাকে এভাবে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ পরিচালকের নেই। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ই শুধু অনিয়ম নয়; এই পদে চাকরি নিয়েও রয়েছে সমস্যা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মূলত: এই পদটি ছিল চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ। তৎকালীন পরিচালক বড় অঙ্কের বাণিজ্যের মাধ্যমে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ৭ম গ্রেডে তাকে নিয়োগ দেয়। এছাড়াও কিংকর ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তার সাবেক কর্মস্থল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের জয়পুরহাট কেন্দ্র থেকে অনিয়মের কারণে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। সে সব তথ্যও ইনকিলাবের হাতে রয়েছে।
কিংকর ঘোষের মামলায় হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত না হওয়া এবং কিংকর ঘোষের পক্ষে রায় নেয়ার প্রচেষ্টার বিষয়ে শিশু হাসপাতালের বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শহিদুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি তদারকি করছেন হাসপাতাল পরিচালক। তাই তার সঙ্গে কথা বললে সঠিক বিষয়টি জানা যাবে। বিষয়টি পরবর্তীতে বোর্ডে আসলে তিনি জানবেন বলে উল্লেখ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
নওরিন ১৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:২৭ এএম says : 0
লড়াইয়ে যদি কৃষকরা হেরে যায়, তাহলে এর ফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন