শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

দল ও সরকারকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। সংশোধিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-এর ২-ক’তে বলা হয়েছে : ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’ সংবিধানের এই বিধানটি সম্পর্কে অতীতে অনেক আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিধানটি সংবিধানে বহাল রাখা হয়েছে। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হবে, এটাই স্বাভাবিক। বহু দেশেই ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। অনেক দেশে অন্যান্য ধর্মকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে কোথাও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আমাদের দেশে একশ্রেণীর তথাকথিত বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শুরু থেকেই এ ব্যাপারে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেছেন। কূট-তর্ক হাজির করে সাংবিধানিক এই বিধানটি বাতিল করার চেষ্টা করেছেন। সব কিছু বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক দর্শনের কথাই যদি ধর্তব্যে আনা যায়, তাহলেও বলা যাবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম গণতন্ত্রসম্মত। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হলেও অন্যান্য ধর্মকে খাটো করা হয়নি। অন্য সব ধর্মকে শান্তিতে পালন করার বিধান দেয়া হয়েছে, এবং সর্বশেষ সংশোধনীতে অপরাপর ধর্মকেও সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে। যা বিশ্বে নজিরবিহীন। অতএব, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ বিস্ময়কর হলেও বলতে হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক মাটি খুঁড়ে বের করে সেই পুরনো বস্তাপচা বিতর্ক সামনে এনেছেন। রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় আলোচ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে তিনি সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকটা আস্ফালন করে বলেছেন, ‘আমি বিভিন্ন জায়গায় বলেছি, বিবিসিতে বলেছি, আমি কখনো বিশ্বাস করি না ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত। এটা আমাদের কৌশল। আমরা সুযোগ ও সময় পেলে ইনশাআল্লাহ এটাকে সংবিধান থেকে তুলে দেবো।’
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়া এবং হালে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া ড. আবদুর রাজ্জাক হঠাৎই রাষ্ট্রধর্মের ওপর এমন কুপিত হলেন কেন, সেটা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়ায় তিনি অনেকটাই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় তিনি এখন উজ্জীবিত হয়েছেন। দলে এবং সরকারে আরো একটু কল্কে পাওয়ার জন্যই হয়তো তিনি রাষ্ট্রধর্মকে নিশানা বানিয়েছেন। যে কোনো বিষয়ে যে কোনো ব্যক্তির ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে তার মত যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের সঙ্গে না মেলে তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকেই তার মেনে নেয়া বা শ্রদ্ধা করা উচিত। ড. আবদুর রাজ্জাক সেই ঐতিহ্যবোধের পরিচয় দিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তিনি তার দল ও দলীয় নেতাদের পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, আওয়ামীলীগ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখেছে কি ‘কৌশল’ হিসেবে? দল বা তার নেতৃবৃন্দ কি অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছেন? সময় ও সুযোগ পেলেই সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেবেন? বস্তুত, তিনি একথা বলে তার দল ও নেতৃবৃন্দকে জনগণের দৃষ্টিতে কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তা কি অনুধাবন করতে পেরেছেন? এ প্রশ্নও সঙ্গত, তার এ বক্তব্যে কি আওয়ামীলীগ ও সরকারের অভিমতের প্রতিফলন ঘটেছে বা রয়েছে? বিষয়টি খোলাসা হওয়া দরকার।
ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হলে ব্যাপকভাবে তা জনসমর্থন লাভ করে। তথাকথিত বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ক্ষীণস্বরে এর প্রতিবাদ করলেও জনগণের হর্ষনিনাদের নিচে সেই ক্ষীণস্বর চাপা পড়ে যায়। মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। অনেকেই মনে করেছিলেন, মহাজোট সরকার হয়তো সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিয়ে দেবে। বাস্তবে দেখা গেলো, বিশেষ সংসদীয় কমিটি রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখেই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশ মোতাবেক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন হয়েছে, রাষ্ট্রধর্ম আরো পরিমার্জিত আকারে যৌক্তিক ও সুন্দর অবয়বে বহাল আছে। এ থেকে বলা যায়, এই বিষয়ে আওয়ামীলীগসহ মহাজোটভুক্ত দলগুলোর সবারই পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে। এখন তা ড. আবদুর রাজ্জাকের ভাষায় কৌশল হতে যাবে কেন? এও সকলেরই জানা, সেই ১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর পর রাষ্ট্রধর্মের বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। ২৮ বছর পর সেই রিটের নিষ্পত্তি হয়েছে গত বছর মার্চে। বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। উচ্চ আদালতের এই রায় বা সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার আর কোনো অবকাশ থাকতে পারে না। আমরা আশা করতে চাই, যেহেতু ড. আবদুর রাজ্জাক এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দিয়েছেন, কাজেই আওয়ামীলীগ ও সরকারের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়া হবে। দল ও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণকে বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করানো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কর্তব্য।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন