মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খোকসায় উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ

আ.লীগ সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, প্রকৌশলী ও শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থে উন্নয়ন কাজ না করে আত্মসাতের অভিযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৬টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও ওই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে তদন্তে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকার থেকে উপজেলার ৮৭টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে মাটি ভরাটসহ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অর্থ দিয়ে কোন কাজ না করে একে অপরের যোগসাজসে এ টাকা তুলে আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কয়েকদিন আগে এক চিঠির মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা মামলা করার নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় কার্যালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রধান কার্যালয়। অভিযুক্তরা হলেন খোকসা উপজেলার ৮০নং মাছুয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকর্ণ কুমার বিশ্বাস, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাবুল আখতার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর খোকসার উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারি শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ বেলাল। ২৬নং বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাছুরা পারভীন, সভাপতি ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস, ৭২নং মাদানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার বিশ্বাস, সভাপতি মহিমা রঞ্জন মৈত্র, ৩০নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুল হক, সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বামনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, সভাপতি মোকলেচুর রহমান, রাজিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন, সভাপতি খাইরুল ইসলাম। ৬টি অভিযোগ পত্রেই উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারি শিক্ষা অফিসারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে উপজেলার ৮৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৩ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ আসে। বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কাজ না করেই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি, শিক্ষক সমিতির নেতা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাকারিয়া তদন্ত করেন এবং বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে এসব স্কুলে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য যেসব সংষ্কার কাজ হওয়ার কথা ছিলো তার কিছুই হয়নি বলে জানতে পারেন। তদন্ত শেষে মামলার দুর্নীতির বিষয়টি জানিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। দুর্নীতির বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার পর মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কয়েক দিন আগে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে মামলা রজু করার পাশাপাশি তদন্তকারি কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে খোকসার এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায় দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু হানিফ দুদক কর্মকর্তাকে ম্যানেজের কথা বলে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৫০০ করে চাঁদা তোলেন। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিরাও জানতেন এবং ম্যানেজ করার পক্ষে মত দেন। তবে দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে না পারলেও আবু হানিফ সে অর্থ আর ফেরত দেননি। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবলু আখতারসহ অন্য স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা, প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা প্রকৌশলীরা সবাই এ অর্থের ভাগ পান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধানের স্বাক্ষরে এ অর্থ উত্তোলন হয় বলে জানা গেছে। তবে তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি। বিধান আছে উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলী মিলে প্রত্যয়নপত্র দিবেন। তবে খোকসার ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছে। কাজ হয়েছে কিনা পরিদর্শন না করেই প্রত্যেক স্কুলকে কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন, কিভাবে কাজ বাস্তবায়ন হবে তার একটি প্ল্যানিং করে দেওয়া আমাদের কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু জানা নেই। কাজ করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের। খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, শিক্ষক নেতা আবু হানিফ সকল অপকর্মের হোতা। আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। শিক্ষক নেতা আবু হানিফ বলেন, দুদক প্রতিটি স্কুলে সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করেছে। কে কতটুকু কাজ করেছে তা তারা যাচাই করেন। এরপর হয়তো মামলা হয়েছে। তাদের ম্যানেজ করার নামে টাকা তোলার যে অভিযোগ উঠেছে তার কোন সত্যতা নেই। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নাজনীন আলম বলেন, মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। চিঠি পেলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন