লাগাতার বৃষ্টির অভাবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সুস্থ জনজীবন থেকে রবি আবাদ ও উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। রমজানে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় রোজাদারসহ শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। তাপমাত্রার পারদ ওপরে ওঠার সাথে পেটের পীড়াসহ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। গত প্রায় দু মাসে বরিশালে কোনো বৃষ্টি হয়নি। পুড়তে শুরু করেছে ক্ষেতের ফসল। মার্চে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের শতভাগ কম। গতমাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও এক ফোটাও বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বিভাগ চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটারের স্থলে ১২০ থেকে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা জানালেও মাসের প্রথম ১৮ দিনেও কোনো বৃষ্টি হয়নি।
অপরদিকে দুঃসহ তাপ প্রবাহে গত ৩ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতেই নারী ও শিশুসহ প্রায় ২৪ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। সরকারি হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণকারীর সংখ্যা অন্তত দ্বিগুন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে দশমিক ৪ ডিগ্রী বেশি ছিল। এমনকি সকাল ৬টায় বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের ৩.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি ২৬.৭ ডিগ্রী । দুঃসহ তাপ প্রবাহের সাথে লাগাতর বৃষ্টির অভাবে সেচ সংকটে মাঠে থাকা বোরো এবং আউশ ধান ছাড়াও বিভিন্ন রবি ফসলের ঝুকি ক্রমশ বাড়ছে। বৃষ্টির অভাবে বোরোসহ বিভিন্ন রবি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবারও আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও গত দুমাসে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে বিপুল পরিমান বোরো ধান ও আউশের জমিতে সেচ সংকট দেখা দিচ্ছে। এমনকি এবার দক্ষিণাঞ্চলে এই যাবতকালের সর্বাধিক পরিমাণ জমিতে তরমুজ আবাদ হলেও বৃষ্টির অভাবে অন্যতম এ অর্থকারি ফসলের উৎপাদনও যথেষ্ঠ ব্যাহত হবার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। সারা দেশে এবার যে ৩০ লক্ষাধিক টন তরমুজ উৎপাদনের আশা রয়েছে তার ২০ লাখ টনই হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে।
অপরদিকে চলতি রবি মৌসুমে পৌষের শেষভাগে ঘনকুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা একাধিকবার কোল্ড ইনজুরী’র ক্ষতির শিকার হয়। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’এর প্রভাবেও বোরো বীজতলা এবং গোল আলু ছাড়াও উঠতি আমনের সাথে বিভিন্ন রবি ফসলের ক্ষতির পরিমান ছিল প্রায় ১শ’ কোটি টাকা। এরপরেও এবার রেকর্ড পরিমান বোরো উৎপাদনের কথা দক্ষিণাঞ্চলে। কৃষিবীদদের মতে, লাগাতার অনাবৃষ্টি পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বৃষ্টি বিহীনদুঃসহ গরমে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে বিপর্যয়ের সাথে ফসলের ক্ষতি বাড়ছে। আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় বজ্রবৃষ্টির কথা বলা হলেও দক্ষিণাঞ্চলে গতকাল সোমবারও কাঠফাটা রোদের দুঃসহ গরমে জনজীবনে নভিশ্বাস উঠছিল। ক্ষড়তাপে রোজাদারসহ শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দুর্ভোগ ক্রমশ বর্ণনার বাইরে চলে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন