ঘাট স্বল্পতা এবং লক্কর, ঝক্কর মার্কা স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। এবার ঈদের আগে এ দু’টি নৌরুটে ফেরি না বাড়ালে চরম ভোগান্তিতে পড়ার আশংকা করছেন এসব পথে চলাচলকারী যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীরা। উক্ত নৌরুটগুলোতে ফেরি সার্ভিসের উন্নতি এবং যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে আরো ফেরি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন তারা।
রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭টি জেলার সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুট। এ দু’টি নৌরুটে যাত্রী এবং যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে সারা বছরই যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ লেগেই আছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ২টি কে-টাইপ (ছোট) ও ১টি ডাম্ব মোট ৩টি ফেরি রয়েছে। এসব ফেরি লোড-আনলোডের জন্য আরিচায় ২টি এবং কাজিরহাটে মাত্র ১টি ঘাট রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এতে ফেরি লোড-আনলোডে সময় বেশি লাগছে। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে নতুন করে ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকে যাত্রী এবং যানবাহন দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু ঘাট এবং ফেরি বাড়ানো হয়নি। ফলে ঘাট সংকট ও স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে এ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় এ নৌরুটে কমপক্ষে চারটি ফেরি ও দুই পারে ২টি করে মোট চারটি ঘাট নির্মাণ করা দরকার বলে জানিয়েছেন ফেরি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে ২৩টি ফেরি চলাচল করত। এর মধ্যে ডুবে যাওয়া রো-রো ফেরি আমানত শাহ উদ্ধারের পর একেবারে চলাচেলর অনুপযোগী ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ অক্টোবর রো-রো ফেরি শাহ আলী এবং গত প্রায় এক মাস আগে রো-রো ফেরি গোলাম মওলা এবং ছোট ফেরি শাপলা শালুককে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। মেরামত শেষে উক্ত ফেরিগুলো অদ্যবধিও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌবহরে যুক্ত হয়নি। ঈদের আগে আসবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
এ নৌরুটে ১৯টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি রো-রো (বড়), ৫টি ইউটিলিটি, ২টি ডাম্ব এবং ১টি ছোট ফেরি। এসব ফেরির অধিকাংশই দীর্ঘ দিনের পুরাতন ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা হওয়ায় প্রতিদিনই দু’চারটি ফেরি মেরামতে থাকছে। গত শনিবার থেকে চন্দ্র মল্লিকা ও বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান নামের ২টি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে। বর্তমানে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে।
এসব ফেরি লোড-আনলোডের জন্য পাটুরিয়াতে ৫টি ঘাটের মধ্যে ৪টি ঘাট সচল রয়েছে। পন্টুন সমস্যার কারণে ২ নং ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ওপারে দৌলতদিয়ায় ৭টি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে ৪টি। বাকী তিনটি ঘাটের ২টি ঘাট গত ২০১৯ সালে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ২ নং ঘাটটি বেশি খাড়া হওয়ায় ওখানে ফেরি ভীড়ানো সম্ভব হয় না বলে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ওই ঘাটটি।
এভাবে ঘাট ও ফেরি সংকট অব্যাহত থাকায় এমনিতেই সারা বছরই ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ফেরি সার্ভিস। ফলে ঘাটগুলোতে দফায় দফায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীদেরকে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যানবাহনের চাপ একটু বেশি থাকে। এছাড়া ঈদ-পার্বনসহ বিশেষ ছুটির দিনে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় এ দু’টি ঘাটে। এসময় এসব ফেরি দিয়ে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিম শিম খেতে হচ্ছে ফেরি কর্তৃপক্ষকে। এ পরিস্থিতিতে ঘাট ও ফেরি না বাড়ালে আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ফেরি কর্তৃপক্ষ।
রাজবাড়ীগামী যাত্রী নিরমল সাহা বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে যাতায়াত করি। সারাবছরই এ দুটি ঘাটে কোনো না কোনো সমস্যা লেগেই থাকে। অন্যান্যে সময়ের চেয়ে উৎসবগুলোতে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সকলের সমন্বয়ে এ সমস্যার সামাধান চান তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, বর্তমানে ১৯টি ফেরি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে চলাচল করছে। ঈদের আগে আরো দু’টি ইউটিলিটি ফেরি আসবে। এর সাথে আরো ২টি রো-রো ফেরি আসলে ভাল হতো। গোলাম মওলা খুব শ্রীগ্রই মেরামত শেষে এ নৌবহরে যোগ দিবে। মেরামতে থাকা ফেরিগুলো এ নৌবহরে যুক্ত হলে কোনো সমস্যা হবে না।
এছাড়া এবার ঈদের ৫ দিন আগে এবং ৫ দিন পরে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সময় শুধু যাত্রীবাহী যানাবহন এবং পঁচনশীল দ্রব্য বোঝাই ট্রাক পারাপার করা হবে। আশা করি সব ঠিকঠাক থাকলে ঈদে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন