ছাত্রদল, যুবদলের পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের উপরই বেশি ভরসা ও আস্থা রাখে বিএনপি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়া, রাজনীতিতে পরিচয় না থাকায়, ছাত্র রাজনীতির পর দীর্ঘ গ্যাপের কারণে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। অবশেষে কমিটি গঠনের সাড়ে ৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গ হতে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের।
স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ৩৫২ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির একটি তালিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জমা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান অনুমোদন করলেই যেকোন মুহূর্তে ঘোষণা হতে পারে এই কমিটি।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে মনোনীত করা হয়। তিন বছর মেয়াদে ২০১৯ সালের অক্টোবরের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সকল পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা। এর কিছুদিন পরে ২০২০ সালের জুলাইয়ে শফিউল বারী বাবু ইন্তেকাল করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। একই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর ১৮৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
আংশিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে দিয়ে ১২টি টিম গঠন করে সংগঠনটি। তাদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে ৯৪৯ টি উপজেলা-থানা-পৌর শাখার মধ্যে ৯১৫টিতে নতুন কমিটি করা হয়েছে। বাকীগুলোও খুব শিগগিরই ঘোষণা হয়ে যাবে, আর ৮১টি জেলা কমিটির সবকটিই নতুন করা হয়েছে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করলেও স্বেচ্ছাসেবক দল পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকদফা তাগাদাও দিয়েছেন পদপ্রত্যাশীদের পদায়ন করতে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা তারেক রহমানের কাছে পাঠান। তিনি সেটি পর্যালোচনা করে মার্চে ফেরত দিয়ে কিছু সংশোধনী আনতে বলেন। গত ২৮ মার্চ কমিটির নেতাদের সাথে বৈঠকে তিনি সংক্ষিপ্ত সময় বেধে দিয়ে দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করে পাঠাতে বলেন এবং এক্ষেত্রে কি কি বিষয়, কোন যোগ্যতাকে গুরুত্ব প্রদান করা হবে সেটিও উল্লেখ করেন। সে অনুযায়ী নতুন করে তালিকা প্রণয়ন করে গতকাল সেটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট ঘোষণা করা হয়। নতুন করে আরও ২০৩ জনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। এতে নতুন করে কয়েকজন সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকীয় এবং সদস্য পদ রয়েছে।
কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে যারা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিলে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন তাদেরকেই পদ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আংশিক কমিটির মধ্যেও যারা মিছিল-মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকে বাদ দিয়ে সক্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একইসাথে তিনি শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যারা শুধু পদের রাজনীতি করবে কিন্তু রাজপথে থাকবে না তারা যেন কোনভাবেই সংগঠনে আসতে না পারে সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জমা দিয়েছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে মূল্যায়িত করা হয়েছে। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদেরকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার যে আন্দোলন টেক ব্যাক বাংলাদেশ আন্দোলন সেটি আরও গতিশীল হবে।
এদিকে গত ১৭ এপ্রিল হঠাৎ করে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা ফের নতুন করে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
আলোচনায় যারা: স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে আসার জন্য প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক যেকোন কমিটি হলেও সভাপতি বা আহ্বায়ক পদের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন- বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. গোলাম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। আর সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে- সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সাবেক সভাপতি রাজিব আহসান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন