বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

রমজানে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩৩ এএম

রমজান মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা দিনের বেলা উপবাস পালন করে থাকেন। রমজানে প্রাপ্ত বয়স্কদের রোজা পালন বাধ্যতামূলক। কিন্তু অসুস্থ বা অন্যান্য ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা হলো, ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, পঞ্চেন্দ্রিয়ের দ্বারা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। এ মাসে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় খাদ্যভ্যাসে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়। রোজা শুধু আত্মশুদ্ধির মাসই নয়, আত্মনিয়ন্ত্রণেরও। এ সময়ে খাবার-দাবারে আনতে হবে বিশেষ পরিবর্তন। ঐতিহাসিকভাবে সেহরি ও ইফতারে যে-সব খাবার গ্রহণ করা হয়, সেগুলোর সবই যে, যথাযথ তা কিন্তু নয়। সঙ্গে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে কিছুটা বিপাকে ফেলে দেয়। রোজা রাখার পর সারাদিনের খাবার একসঙ্গে খেতে হবে এরকম মানসিকতা থেকেও বিপত্তি দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের কথা হচ্ছে, ভুলে গেলে চলবে না, পাকস্থলির একটি নির্দিষ্ট আয়তন ও খাবার ধারনের ক্ষমতা রয়েছে। শরীর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে রোজার সময় বিপাকক্রিয়ার হার কমিয়ে দেয় এবং শরীরে জমাকৃত চর্বি ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহৃত হয়।

সেহরির খাবার: রোজায় দীর্ঘ উপবাস থাকতে হয় বলে সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা গ্রহণ করা উচিত। ওই জটিল শর্করা ধীরগতিতে হজম হয় এবং হজম হতে প্রায় আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে দিনে ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। জটিল শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজ জাতীয় খাবার, অপরিশোধিত বা ননরিফাইনড আটা এবং ঢেকি ছাঁটা চাল। সেহরিতে ভাতই হতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। রুচি অনুযায়ী রুটি, পরোটা, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এ সময় মাংস ও ডিম খাওয়া সুবিধাজনক। ঘন ডাল খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ছোট-বড় সবার জন্য এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ, খাবারে চাহিদামতো আমিষ না থাকলে উপবাসের সময় শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে। সেহরির খাবার গ্রহণের অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যগত দিক রয়েছে। কারণ, যদি সেহরিতে যথাযথ খাবার না খান, তা হলে অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দিবে। সেহরি না করলে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হয় বলে ক্লান্তি আসে।

সেহরির পর অনেকেই চা পান করে থাকেন। চা অনেক উপকারী, একথাও প্রায় সবার জানা। কিন্তু সেহরির পর চা পান থেকে বিরত থাকা উচিত ভিন্ন কারণে। গবেষকরা বলছেন, চায়ের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। এই ক্যাফেইন প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীরে খনিজ লবণ ও পানিস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। বরং সেহরির পর কলা খাওয়া যেতে পারে।

ইফতার: যে-সব খাবার হজমে কম সময় নেয়, এ ধরনের খাবার ইফতারে গ্রহণ করা উচিত। পরিশোধিত শর্করা দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তুলে। ইফতারে খেতে হবে শরবত বা ডাবের পানি , কাঁচা ছোলা, কম তেলে ভাজা ছোলা, পেঁয়াজ, বেগুন অথবা আলুর চপ বা ফল। যেদিন খিচুড়ি খাওয়া হবে সেদিন বেসনের বা ডালের তৈরি ভাজা খাবার বাদ দিতে পারেন। আবার, নুডলস অথবা ফ্রাইড রাইছ খেলেও এসব বাদ দেওয়া ভাল। ইফতারের কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি দিয়ে খাওয়া যায়। এটা হজমে যেমন সহায়ক, তেমনই ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি এতে দূর হবে। খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তÍ বা ফাইবার, শর্করা ,পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে দু-তিনটা খেজুরই শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে দিতে পারে। রোজায় ভাজাপোড়া খাবার প্রায় সবারই প্রিয়। কিন্তু এ জাতীয় ইফতার গ্রহণের ফলে অনেক রোজাদার শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেন। ভাজাপোড়া খাবার, অতি মশলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই রোজা রেখে অবশেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে একসঙ্গে এসব খাবার গ্রহণের ফলে বদহজম, বুকজ্বালা এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। ইফতারের পর ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শরীরে সারাদিনের পানিস্বল্পতা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত।

সন্ধ্যারাতের খাবার : রোজার সময় সন্ধারাতের খাবারের গুরুত্ব তেমন থাকে না। তারপরও কেউ যদি খেতে চান, তা হলে যেন খাবার গুরুপাক বেশি হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ইফতারে ডালের তৈরি খাবার বেশি হওয়ায় এ সময় ডাল বাদ দেওয়া যেতে পারে। হাল্কা মশলায় রান্না করা মাছ ও সব্জি থাকলে ভাল। ইফতার ও সেহরিতে অনেক সময় সব্জি খাওয়াটা বাদ পড়ে যায়। সন্ধ্যারাতেই সব্জি খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এ সব খাবারে ছোট মাছও রাখা যেতে পারে।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক- কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন