শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩১ এএম

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা প্রধানত সমুদ্র সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগাতে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। দেশের সমুদ্র সম্পদ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময়ে বঙ্গোপসাগরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এবার তারা সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলোও তুলে ধরেছেন। গত বুধবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে একুশে পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম এ বিষয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ‘সমুদ্র অর্থনীতি: বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে প্রফেসর মইনুল ইসলাম ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের পরিচালক, সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালকসহ এ বিষয়ে অ্যাকাডেমিক বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। প্রধান বক্তা প্রফেসর মইনুল ইসলাম প্রস্তাবিত সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাব্য কার্যক্রমকে ঘিরে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও মৎস্য সম্পদ আহরণের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবন্ধকতার একটি খন্ডচিত্রও তার বক্তব্যে উঠে আসে। মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি হওয়ার পর প্রায় এক দশক পার হয়ে গেলেও সম্ভাব্য ব্লকগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না হওয়ার পেছনে কারা দায়ী তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি যথাশীঘ্র সম্পদ আহরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন বক্তরা।

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি। রায়ে মিয়নমারের সাথে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের ১২টি এবং ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ ১০টির সবকটিই পেয়েছে বাংলাদেশ। সে সময়ে এই বিজয়কে বাংলাদেশের পক্ষে বিশাল সমুদ্র বিজয় হিসেবে দেখানো হলেও বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ইতিমধ্যে মিয়ানমার ও ভারত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করলেও বাংলাদেশ এখনো কিছুই করতে পারেনি। ইতিমধ্যে দেশের পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর রিজার্ভ শেষ হয়ে এসেছে। তেল, গ্যাস ও এলএনজি আমদানিতে বছরে শত শত কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে দেশের আবাসিক গ্যাস লাইনে সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখায় এ খাতে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প কারখানায় সংযোগ বন্ধ থাকার করণে উৎপাদন ও শিল্পবাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের ব্লকগুলো থেকে চার ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে, যা এখন চীনে রফতানি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময় বঙ্গোপসাগরের ব্লু ইকোনমির সুফল থেকে দেশকে বঞ্চিত রাখার পেছনের শক্তিকে চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি।অহেতুক সময় ক্ষেপণ ও সিদ্ধান্তহীনতার আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা হিসেবে ভারতকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৪ সালে দেয়া আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০সালে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কয়েক হাজার কিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের অর্থনৈতিক এলাকার অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছে। আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকেও আইনগত সহায়তা দিয়েছে বলে জানা যায়। যেখানে মিয়ানমার ও ভারত বিরোধ নিস্পত্তি হওয়ার আগেই বিতর্কিত ব্লকগুলোতে তেলগ্যাস অনুসন্ধান শুরু করেছিল, সেখানে বিরোধ নিস্পত্তির এক দশক পরও কেন আমরা সমুদ্র সম্পদ আহরণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারলাম না তার যথাযথ অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শ সমুদ্র সম্পদ বা ব্লু ইকোনমির বিশাল সম্ভাবনার কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও বিবেচনাবোধে প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার ছাপ স্পষ্ট। তবে শুধু সম্ভাবনা নিয়ে বসে থাকলেই হবে না। সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিশেষজ্ঞরা যে সব পরামর্শ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে পারে বলে আমরা মনে করি। প্রফেসর মইনুল ইসলামের মত ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ টীম ও টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। দেশীয় সম্পদের সম্ভাবনা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে বিদেশ নির্ভরতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া মনোপলি বন্ধ করতে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস ও মৎস্য সম্পদ আহরণের মত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় বিষয়গুলোর সাথে ভ’রাজনৈতিক বিরোধ-বিতর্ক পরিহার করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পদের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন