মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার

প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিকুর রহমান নগরী

ইসলামে বিধর্মী তথা অমুসলিমদের জন্য ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আব্দুল্লাহ মামুন আরিফ বলেন, ইসলামী রাষ্ট্রের ছায়াতলে যেসব অমুসলিম বাস করে, তাদের জন্য ইসলাম বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসলিম পরিভাষায় তাদের বলা হয় ‘জিম্মি’। ‘জিম্মি’ শব্দের অর্থ ‘চুক্তি’ ওয়াদা। এ শব্দটি জানিয়ে দেয় যে, এদের জন্য আল্লাহর এবং তার রাসূলের একটা ওয়াদা রয়েছে। মুসলিম জামাত সে ওয়াদা পালনে বাধ্য। আর তা হচ্ছে এই যে, তারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারবে। আধুনিক ব্যাখ্যায় এরা ইসলামী রাষ্ট্রের অধিবাসী নাগরিক। প্রথম দিন থেকেই মুসলিম সমাজ এ সময় পর্যন্ত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমদের জন্য যে অধিকার, অমুসলিমদের জন্যও সেই অধিকার। তাদের যা দায়-দায়িত্ব এদেরও দায়-দায়িত্ব তা-ই। তবে শুধু আক্বিদা, বিশ্বাস ও দ্বীন-সংক্রান্ত ব্যাপারাদিতে তাদের সাথে কোন মিল বা সামঞ্জস্য নেই। কেননা ইসলাম তাদেরকে তাদের দ্বীন ধর্মের উপর বহাল থাকার পূর্ণ আযাদি দিয়েছে। জিম্মিদের সম্পর্কে নবী করিম সা. খুব কঠোর ভাষায় মুসলমানদের নসীহত করেছেন এবং সেই নসীহতের বিরোধিতা বা লংঘন হতে আল্লাহর অসন্তোষ অবধারিত বলে জানিয়েছেন। হাদিসে নবী করিমের কথা উদ্ধৃত হয়েছে ‘যে লোক কোন জিম্মিকে কষ্ট বা জ্বালা-যন্ত্রণা দিল, সে যেন আমাকে কষ্ট ও জ্বালা-যন্ত্রণা দিল। আর যে লোক আমাকে জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট দিল, সে মহান আল্লাহকে কষ্ট দিল।’ ‘যে লোক কোন জিম্মিকে কষ্ট দিল, আমি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী। আর আমি যার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী, তার বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন আমি মামলা লড়বো।’ (আবু দাউদ) যে লোক কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে কিংবা তার হক নষ্ট করবে অথবা শক্তি-সামর্থ্যরে অধিক বোঝা তার ওপর চাপাবে কিংবা তার ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া তার কোন জিনিস নিয়ে নেবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে মামলা লড়ব।’ রাসূলে করিম (সা.)-এর খলীফাগণ এসব অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় সব সময় সচেতন-সতর্ক থাকতেন। ইসলামের ফিকাহবিদগণ মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এসব অধিকার ও মর্যাদার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। মালিকী মাযহাবের ফিকাহবিদ শিহাবুদ্দীন আল-কিরাফী বলেছেন : জিম্মিদের সাথে কৃত চুক্তি আমাদের ওপর তাদের কতিপয় অধিকার ওয়াজিব করে দিয়েছে। কেননা তারা আমাদের প্রতিবেশী হয়ে আমাদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার অধীন এসে গেছে। আল্লাহ, রাসূল ও দ্বীন-ইসলাম তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। কাজেই যে লোক তাদের ওপর কোন রকমের বাড়াবাড়ি করবে সামান্য মাত্রায় হলেও তা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং দ্বীন-ইসলামের দেয়া নিরাপত্তা বিনষ্ট করার অপরাধে অপরাধী হবে। তাদের খারাপ কথা বলা, তাদের মধ্য থেকে কারো গিবত করা বা তাদের কোন রূপ কষ্ট জ্বালা দেয়া অথবা এ ধরনের কাজে সহযোগিতা করা ইত্যাদি সবই নিরাপত্তা বিনষ্টের দিক। যাহেরী মাযহাবের ফিকাহবিদ ইবনে হাযম রাহ. বলেছেন, ‘যেসব লোক জিম্মি, তাদের ওপর যদি কেউ আক্রমণ করতে আসে, তাহলে তাদের পক্ষ হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হওয়া ও তাদের জন্য মৃত্যুবরণ করা আমাদের কর্তব্য।’ তবেই আমরা আল্লাহ ও রাসূলের নিরাপত্তা দেয়া লোকদের সংরক্ষণ করতে সচেষ্ট হবো। কেননা এমতাবস্থায় তাদের অসহায় ও সহজ শিকার হতে দেয়া নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পালনের পক্ষে বড্ড ক্ষতিকারক হবে।
অমুসলমানের কাছে সাহায্য চাওয়া : বিশিষ্ট গবেষক আব্দুল্লাহ মামুন বলেছেন যে, মুসলিম অমুসলিমের কাছে দ্বীনী ব্যাপারাদি ছাড়া চিকিৎসা, শিল্প, কৃষি প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক বিষয়াদিতে সাহায্য চাইতে পারে, তাতে কোন দোষ নেই। শাসন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষ সকলের জন্যই এ অনুমতি রয়েছে। তবে একথা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ যেমন এসব ক্ষেত্রেই মুসলমানদের স্বনির্ভরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা একান্তই কর্তব্য। নবী করিম সা. নিজে অমুসলিমের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজে ও ক্ষেত্রে মজুরির বিনিময়ে সাহায্য নিয়েছেন, কাজ করিয়েছেন। হিজরত করার সময় পথ দেখানোর উদ্দেশে তিনি মক্কার মুশরিক আবদুল্লাহ ইবনে আরীকতের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। আলেমগণ বলেন, কেউ কাফির হলে যে কোন বিষয়েই তাকে বিশ্বাস করা যাবে না, এমন কথা জরুরি নয়। মদিনার পথে মক্কা ত্যাগ করার মতো কাজে পথ দেখিয়ে সাহায্য করার জন্য একজন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করায় এ পর্যায়ের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সহজেই দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, মুসলমানের নেতার পক্ষে অমুসলিমের কাছে সাহায্য চাওয়া-বিশেষ করে আহলি কিতাবের লোকদের কাছে- সম্পূর্ণ জায়েয বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন