নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চলতি এপ্রিলের অর্ধ মাসেই প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রোগী নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) চিকিৎসা নিয়েছেন। বয়স্ক রোগীর পাশাপাশি বাড়ছে শিশু রোগী। একদিকে গরম অন্যদিকে দূষিত পানি পান করার ফলেই ডায়রিয়া বাড়ছে বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. এস কে ফরহাদ।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) থেকে ৮ সদস্যের একটি টিম জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা করছে। এছাড়াও অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাহিরে ১০টি বেড ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডায়রিয়া বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স পারুল বেগম বলেন, কথা বলার সময় নেই। রোগীর স্বজনরা দাঁড়িয়ে আছেন। খাতায় তাদের নাম লেখার সময় পাচ্ছি না। আগের তুলনায় রোগী অনেক বেড়েছে। শয্যা সংখ্যা অনেক কম। এ কারণে এক শয্যায় একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস কে ফরহাদ জানান, গত কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ কারণে আইইডিসিআরের আট সদস্যের একটি টিম কয়েকদিন ধরে এখানে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জে আগত আইইডিসিআর’র আট সদস্যের টিমের তথ্যমতে, সিটি করেপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগের পানির পাইপে লিকেজ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় সোয়ারেজ লাইনের ভেতর দিয়ে পাইপ নেওয়া হয়েছে। এতে পাইপের লিকেজ দিয়ে ড্রেনের দূষিত পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া পানিতে কলেরা রোগের জীবানু পাওয়া গেছে।
রোগী বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলে এসে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও পুরুষ রোগী বেশি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ডা. ফরহাদ বলেন, অতিরিক্ত চাপ সামলাতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার পাশাপাশি বাইরে আরও ১০টি শয্যা সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ২০ শয্যা দিয়ে চাপ সামলানো অসম্ভব হলে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ডটি খালি করে রেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আর গুরুতরদের শুধু ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হচ্ছে।
তিনি সচেতনতা বিষয়ে বলেন, বিশুদ্ধ ও ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ বিষয়ে আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে কথা বলেছি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের দিয়ে মাইকিং করার কথা বলেছি। এছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন