মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

ফেরি পারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি আরিচা-পাটুরিয়া ঘাট

শাহজাহান বিশ্বাস, আরিচা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ঈদের আগে বাসের টিকেট সংকট, বাড়তি ভাড়া আদায়, মহাসড়কে যানজটে আটকে পড়াসহ রাস্তায় নানা ধরনের বিড়ম্বনার কারণে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন। শুক্র ও শনিবার দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি এবং আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শত শত যাত্রী মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফলে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে ছোট গাড়ি বিশেষ করে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের চাপ দেখা গেছে। পাটুরিয়া ঘাটে সকাল ১০টার পরে বাসের চাপও ছিল অনেক।
বিআইডব্লিউটিসি’র হিসেব অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছোট বড় মিলে ১ হাজার ৪শ’ ৭৫টি যানবাহন পার করা হয়েছে। পাটুরিয়া ঘাটে দুপুরের পর থেকে বাসের চাপ না থাকলেও ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিনের পুরানো লক্কর, ঝক্কর মার্কা স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। এবার ঈদের আগে এ দু’টি নৌরুটে ফেরি না বাড়ালে চরম ভোগান্তিতে পড়ার আশংকা করছেন এসব পথে চলাচলকারী যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীরা। যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে আরো ফেরি বাড়ানো দরকার বলে তারা মনে করছেন। রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭টি জেলার সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। এ দু›টি নৌরুটে যাত্রী এবং যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে সারা বছরই যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদের ভোগান্তি লেগেই আছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ২টি কে-টাইপ (ছোট) ও ১টি ডাম্ব মোট ৩টি ফেরি রয়েছে। এসব ফেরি লোড-আনলোডের জন্য আরিচায় ২টি এবং কাজিরহাটে ২টি ঘাট রয়েছে। এ নৌরুটে যানবাহন এবং যাত্রী বাড়লেও ফেরি বাড়নো হয়নি। স্বল্প সংখ্যক ফেরি দিয়ে এ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় এ নৌরুটে কমপক্ষে নতুন চারটি ফেরি দরকার বলে জানিয়েছেন ফেরি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২৩টি ফেরি ছিল। এর মধ্যে একটি ফেরি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী। এছাড়া গত ২৭ অক্টোবরে রো রো ফেরি শাহ আলী এবং গত প্রায় এক মাস ধরে রো রো ফেরি গোলাম মওলা এবং ছোট ফেরি শাপলা শালুককে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। মেরামত শেষে উক্ত ফেরিগুলো অদ্যবধিও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌবহরে যুক্ত হয়নি। ঈদের আগে আসবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে ফেরি কর্তৃপক্ষের।
ওপার দৌলতদিয়ায় ৭টি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে ৪টি। বাকী তিনটি ঘাটের ২টি ঘাট গত ২০১৯ সালে নদী ভাঙণে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ২ নং ঘাটটি সচল থাকলেও বেশি খাড়া হওয়ায় ওখানে ফেরি ভীড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা বলে ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ওই ঘাট দিয়ে যানবাহন লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। এতে দেখা গেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ৫টি করে ঘাট থাকলে ব্যবহার হচ্ছে ৪টি করে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাগুরাগামী যাত্রী আব্দুল হক বলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকুরি করি। ঈদের আগে রাস্তায় যানজট এবং বাড়তি ভাড়াসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনার কারণে আগে থেকেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
বিআইডব্লিউটিসির সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, যে সব ফেরির সামান্য ত্রুটি দেখা দেয় সেসব ফেরি এখানে স্থানীয় ভাসমান কারখানায় এনে মেরামত করা হয়। রজনীগন্ধা ও বনলতা নামের দু’টি ইউটিলিটি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে।
ঘাট রক্ষানাবেক্ষনকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের ঘাটের কোনো সমস্যা নেই। ফেরি লোড-আনলোডের জন্য পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় ৫টি করে ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে পন্টুন সমস্যার কারণে পাটুরিয়ায় ১টি ঘাট বন্ধ এবং দৌলতদিয়ায় ৫টি ঘাটই সচল রয়েছে কিন্তু ২ নং ঘাটটি সচল থাকা সত্ত্বেও কি কারণে ওই ঘাটে ফেরি ভীড়ানো হয় না তা আমার জানা নেই। তাই ফেরি লোড-আনলোডের জন্য দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাট ব্যবহার হচ্ছে। এদিকে আরিচায় ২টি এবং কাজিরহাটে ২টি মোট চারটি ঘাটই সচল রয়েছে। আশা করি ঈদের সময় ঘাট নিয়ে কেনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। দু’টি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় সাময়িক মেরামতে রয়েছে। ঈদের আগে আরো দু’টি ইউটিলিটি ফেরি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সাথে আরো ২টি রো-রো ফরি যুক্ত হলে ভাল হতো। মেরামতে থাকা ফেরিগুলো এ নৌবহরে যুক্ত হলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন