শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ

প্রশাসন নীরব

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাস্তার পাশেই ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন আনোয়ার মিয়া। দাহ্য পদার্থ এভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করার নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই বিক্রি করছে, আমিও করছি। এতে দোষের কি? উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি। লাইসেন্স আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা দিয়া কিনা আনি, টাকায় বিক্রি করি। আমার মাল আমি বিক্রি করি আবার লাইসেন্স কিয়ের? এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে অবৈধ জ¦ালানি তেল বিক্রেতা আনোয়ার মিয়া।

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও সড়কের মোড়ে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, অকটেন, পেট্রোলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। কোনো ধরনের নীতিমালা না মেনে এভাবে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
রূপগঞ্জে অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার ও পেট্রোল-অকটেন। প্রত্যন্ত গ্রামের ছোট মুদি দোকান থেকে শুরু করে সেলুনেও মিলছে এসব দাহ্য পণ্য। এভাবে যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ বিক্রির কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ঢাকা বিভাগীয় বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্র জানায়, খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১২ কেজির ১০টি পর্যন্ত এলপিজি সিলিন্ডার মজুদ রাখতে পারবেন। পেট্রোল বা ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই হাজার লিটার পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন। তবে আবাসিক এলাকায় এ ব্যবসা নিষিদ্ধ।
সরেজমিন উপজেলার ইছাখালি, বাঘবেড়, মুড়াপাড়া, চনপাড়া, কুদুর মার্কেট, নগরপাড়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ও পেট্রোলসহ নানা দাহ্য পদার্থ।
বিভিন্ন দোকানে এক কিংবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল ভরে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ওইসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপণ যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জানা নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। হাটবাজার কিংবা আবাসিক এলাকায় এ ব্যবসার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন বলেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে অনুমোদনহীন এসব দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জ্বালানি অধিদফতরের আইন অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠানে তেল ও গ্যাস বিক্রি করবে, তাদের বিক্রির স্থানকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হয়। আইন অনুযায়ী তেল-গ্যাস বিক্রির স্থানে কমপক্ষে ফ্লোর পাকাসহ আধা পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। এ ছাড়া থাকতে হবে জ্বালানি অধিদফতরের অনুমোদন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব শর্তের একটিও নেই উপজেলার গ্যাস ও খোলা তেল ব্যবসায়ীদের। এ ব্যবসায়ীরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এদিকে ভেজাল তেল বিক্রি ও পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সব অসাধু দোকানির বিরুদ্ধে। অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় যত্রতত্র রাস্তার পাশে বা অলিগলিতে গড়ে উঠেছে এসব দোকান।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার, পাড়া-মহল্লা, মুদি, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স, এমনকি ওষুধের দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এখানকার ছোট-বড় বাজারে শতাধিক গ্যাসের দোকান রয়েছে। এসবের বেশির ভাগের লাইসেন্স নেই। একটু লাভের আশায় ফুটপাতে কড়া রোদে ফেলেও রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। অনেকের ট্রেড লাইসেন্সও নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই তাকে ফায়ার, পরিবেশ ও বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স নিতে হবে। নীতিমালা মেনে ব্যবসা করতে হবে। সড়কের ধারে সাজিয়ে রেখে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা বিপজ্জনক। এ ছাড়া যত্রতত্র পেট্রোল বা দাহ্য পদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দাহ্য পদার্থ ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা আছে। যত্রতত্র বিক্রির সুযোগ নেই। আমার কাছে লিখিত দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লাইসেন্স পরিদর্শক বলেন, দাহ্যপদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে অবশ্যই ফায়ার লাইসেন্স নিতে হবে। যত্রতত্র এসব বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। খুচরা মার্কেটে যত্রতত্র যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল অকটেন ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে তার ৯৮ শতাংশই অবৈধ। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে গ্যাস সরবরাহের আগে বিস্ফোরক লাইসেন্স আছে কি না তা দেখে নেয়া উচিত। বিনা লাইসেন্সে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এলপিজি বা দাহ্যপদার্থ বিক্রি করতে না পারে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যদি সহযোগিতা করে তাহলে কাজটা আমাদের জন্য সহজ হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন