তিন যুগ পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশনটি। স্টেশনটি চালু হলে প্লাটফর্মে দাঁড়াবে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী সব ধরনের ট্রেন। নতুন করে প্লাটফর্ম নির্মাণসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ময়মনসিংহ শহর পর্যন্ত একটি শাটল ট্রেন চালু করা হবে।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) বাকৃবি রেলওয়ে স্টেশন পুনরায় চালু করার কার্যক্রম হিসেবে নতুন করে প্লাটফর্ম নির্মাণের উদ্দেশ্যে বাকৃবিতে পরিদর্শন করতে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল। দলটির প্রধান হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) জেনারেল ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এসময় তারা স্টেশনটি পরিদর্শন করে প্লাটফর্মটির নকশা এবং বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করে নিয়ে যান বলে জানা যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেন এবং সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম।
জানা যায়, সারা দেশ থেকে আসা প্রায় সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। এছাড়া ক্যাম্পাসের পাশেই রয়েছে কয়েকটি গ্রাম। যেখানে বসবাস করে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন টিকিট চেকার (টিটি) উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনের কেবিনের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তিনি নিহত হন। এরপর ৩৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে সারা দেশে রেলস্টেশনগুলো। পরে বাকি সব রেলস্টেশন চালু হলেও প্রায় তিন যুগ ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত রেলস্টেশনটি।
এলাকাবাসীরা জানান, রেলস্টেশনটি চালু হলে সবার ভোগান্তিই অনেকটা কমে যাবে। কারণ ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে আশপাশের জেলার সড়ক ব্যবস্থা বেহালের কারণে রেলপথই এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবার পছন্দ রেলপথ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হক মুন্না বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ক্যাম্পাসের এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে ঢাকায় যেতে হয়। সকালে পরীক্ষা থাকলে ভোর রাতে ক্যাম্পাস থেকে ময়মনসিংহ স্টেশনে যেতে হয় । আবার পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা থেকে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। মধ্যরাতে ময়মনসিংহ স্টেশনে থেকে ক্যাম্পাসে আসতে হয় যা চাকরি পরিক্ষার্থীদের জন্য বেশ অনিরাপদ ও কষ্টকর। ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্টেশনটি পুনরায় চালু হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শাহেদ হোসেন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রেলস্টেশন, অথচ ট্রেনে ওঠার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় কিলোমিটার যানজটের মধ্য দিয়ে শহরে যেতে হয়। চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভোরের ঢাকাগামী ট্রেন ধরতে পারতাম না আমরা। ট্রেনে সিট পেতে হলে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন আগে শহরের ময়মনসিংহ স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। স্টেশনটি চালু হলে আমরা ক্যাম্পাস থেকেই ঢাকাগামী ট্রেনে উঠতে পারব। আমি এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ.কে.এম জাকির হোসেন বলেন, অনেক প্রতিক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। বাকৃবিতে অবস্থিত রেল স্টেশনটির আধুনিকায়নের কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। আজকে আমাদের অনুরোধে বাংলাদেশ রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ পরিদর্শনে এসেছিলেন। প্লাটফর্মটির ডিজাইনসহ সব বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। আশাকরি খুব দ্রুত আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কৰ্মচারিসহ সকলে ক্যাম্পাস থেকেই আন্তঃনগর ট্রেনসহ সকল ট্রেনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবে। একটি শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহর পর্যন্ত চলার বিষয়ে মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। আশা করি সেটিও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন