বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খাদ্যের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৮ এএম

আমরা কী খাচ্ছি? বর্তমানে খাবারে ভেজালের এত বেশি আধিক্য যে, এই প্রশ্ন এখন সকলের মাঝে। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত হওয়া প্রতিটি পণ্যের কয়েক পর্যায়ে রয়েছে মাত্রারিক্ত ভেজালের কারবার। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস কোনটাই আজ বিশুদ্ধ নয়। প্যাকেটজাত যেসব খাবার পাওয়া যায় সেগুলোর একটিও নিরাপদ নয়। এসব ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সেবন করছে। সেই জীবন রক্ষাকারী ঔষধেও ভেজাল। কোথায় নেই ভেজাল? চারিদিকে এত বেশি ভেজালের ছড়াছড়ি, তাতে দেশের জনগণ আজ ফ্রেশ খাবারের স্বাদ ভুলে গেছে। এটা এখন হলফ করে বলা যায়, বর্তমানে কেউ ইচ্ছা করলেও বেশি মূল্য দিয়ে নিরাপদ খাদ্য কিনতে পারবেনা। বিশ্বের অন্য কোন দেশে খাবারে বিষ মেশানোর রীতি আছে কিনা আমার জানা নেই। জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তেমন কিছু গোচরে আসেনি। সবখানেই শুধু বাংলাদেশের খাদ্যে বিষক্রিয়ার ছড়াছড়ি। এককথায়, ভেজাল আজ দেশের মানুষের মস্তিষ্কে ও রক্তে মিশে গেছে।

শাকসবজি ও ফলমূলে উৎপাদনের সময় মাত্রারিক্ত পরিমানে কীটনাশক ও হরমোন ব্যবহার করা হয়। সেগুলো আবার দীর্ঘদিন টাটকা ও সতেজ রাখতে ব্যবহৃত হয় ফরমালিনসহ ক্ষতিকর কেমিক্যাল। এছাড়া দ্রুত বাড়তে ব্যবহৃত হয় অনিয়ন্ত্রিত মাত্রার হরমোন। মাছ অল্প সময়ে বড় করার জন্য ব্যবহার করা হয় হরমোনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের মোটাতাজা করতে খাওয়ানো হয় বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল। এরপরে এগুলো জনগণের ক্রয় করার পরে রান্না করে খাওয়ার উপযোগী করতে যে তেল ও মশলা ব্যবহৃত হয় সেগুলোও স্বাস্থ্যকর নয়। ভেজালে ভরা। সয়াবিন বা পাম অয়েলের সাথে মেশানো হয় পশুর চর্বি। মশলায় মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর উপাদান। মোটা চাল ছাঁটাই করে চিকন করা হয়। যেটার কোনরকম স্বাস্থ্য উপকারিতা তো নেইই, বরং ভাতের যেটুকু উপকারি গুণ চাল ছাঁটাই করার পরে সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ভালো দেখানো এবং অধিক দামে বিক্রির উদ্দেশে এমনটি করা হচ্ছে। এসব ভেজাল খেতে খেতে মানুষের শরীর আর নিতে পারছে না। এরপর দেখা দিচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক ধরনের সব রোগবালাই। দীর্ঘদিন ধরে এসব খাবার গ্রহণে খুব অল্প বয়সেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে নানান শারীরিক জটিলতায়।

দেশের আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা বিভিন্ন খাবারের দোকানে মুখরোচক নানান ধরনের খাবার বিক্রি হয়। এসব খাবারের ভিতর পুরি, সিঙ্গাড়া, চপ, সমুচা, বেগুনি, পিঁয়াজি, বার্গার, পিজ্জা সবারই খুব প্রিয়। আর সে কারনেই শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সবারই এসব খাবারের প্রতি ঝুঁকতে দেখা যায়। কিন্তু খাওয়ার আগে আমরা কেউ একটিবারও এসকল খাবারের স্বাস্থ্যগত মান নিয়ে ভাবি না। দেশের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র, দর্শনীয় স্থান, স্কুল-কলেজের সামনে অপেক্ষারত মুখরোচক এসকল খাবার তৈরি হয় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। খাবার তৈরি থেকে বিক্রির প্রতিটা ধাপে বিশুদ্ধতার কোনরকম নিয়মনীতি মানা হয় না। উপরন্তু এসকল খাবারের কোনো রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা তো নেইই বরং উল্টো এগুলো নানারকম জটিল রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

ঢাকার শাহবাগে শিশুপার্কের সামনে দেখতাম নানা রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে হকাররা অতি বিনয়ের সাথে দর্শনার্থীদের ডাকত। এসব খাবারের দোকানে বেশি শোভা পেত, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, বিভিন্ন আচার, চিপস ইত্যাদি। খোলা পরিবেশে এসব খাবার তৈরি করা তো হচ্ছেই, সেইসাথে রাস্তার ধুলোবালি অবাধে তার সাথে মিশে যাচ্ছে। এছাড়া এসব খাবারের একটিরও কোনরকম উপকারিতা নেই। উপরন্তু আছে নানা ধরনের মারাত্মক রকমের সব স্বাস্থ্য ঝুঁকি। দেশের একটা জাতীয় শিশুপার্কের সামনে শিশুদের খাবারের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সেদেশের শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থেকেই যায়। এরপরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় চিড়িয়াখানা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্কসহ সকল দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে একই রকম খাবারের আধিক্য দেখা যায়। বাচ্চারা এসব মুখরোচক খাবারের প্রতি বেশি ঝোঁকে। নানা রকম স্বাদ বর্ধিতকরণ উপকরণ মিশিয়ে এগুলো বাচ্চাদের কাছে অতি লোভনীয় করা হয়। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া তেলে এসব খাবার ভাজা হয়। একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, যেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। এই তেলের কারণে কলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে কার্ডিওভ্যাস্কুলার সমস্যার সূত্রপাত হয়, যার কারণে পরবর্তীতে বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। ভাজা খাবারের তেলে থাকে ট্রান্স ফ্যাট, যা শরীরে এলডিএলের মাত্রা বাড়ায়। এই এলডিএল খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে চিহ্নিত। যে কারণে ধমনীতে রক্ত প্রবাহে বাধা তৈরি হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পথেও ঝালমুড়ি, ফুচকা, পানিপুরি, ভেলপুরি, সবজিরোল, বার্গার, সিংগাড়া, সমুচা, চাটনিসহ নানা অস্বাস্থ্যকর খাবারের আধিক্য দেখা যায়। নানা রকমের স্বাদ বর্ধিতকরণ উপকরণ মিশিয়ে এসব খাবার অতি লোভনীয় করা হয়। এসব খাবার একবার খাওয়ার পরে বাচ্চাসহ বড়দের সবার আরও বেশি খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। সেজন্য সহসাই বাচ্চারা একদিন খাওয়ার পরে পরেরদিন আবার এসব খাবারের প্রতি আসক্তি দেখায়। তখন অভিভাবকদের নিষেধের পরেও বাচ্চাদের আর থামানো যায়না। এদিকে প্রতিদিন এসব খাবার খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের শরীরেও কোলেস্টেরল মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সাথে খুদামন্দা, বাসার খাবারে অনীহা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাসহ আস্তে আস্তে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

এসব খাবারের ব্যাপারে সবার আগে সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। বাচ্চাদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে অনীহা করে তুলতে হবে। বাচ্চাদের টিফিনের প্রয়োজন হলে অভিভাবকদের বাড়ি থেকে সেগুলো প্রস্তুত করে দিতে হবে। রাস্তার পাশে, ফুটপাতে বা স্কুলগেটে বিক্রি করা অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলার জন্য বাচ্চাদের আগে অভিভাবকদের সচেতনতা অতীব জরুরি। সেইসাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যালয়ের আশাপাশের যেকোন অস্থায়ী দোকানে খাবার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। যদি খাবার সাপ্লাই দিতেই হয় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। বাইরের কোনো খাবারের অনুমোদন দিলেও সেগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার প্রস্তুত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তদারকি করতে হবে।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্থ ও নিরোগ জীবন সকলের কাম্য। অসৎ ব্যবসায়ীদের এই বাস্তব সত্যগুলোকে অন্তর দিয়ে অনুধাবন করতে শিখতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে হলে খাবারে ভেজাল বন্ধ করতে হবে। খাবারের সাথে যে বিষ আমরা খাচ্ছি মানবদেহে তার ক্ষতিকর প্রভাব হয়ত আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারছি না। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটার মারাত্মক প্রভাব বুঝা যাবে। এই খাদ্যে ভেজাল মেশানোর লাগাম যদি এখুনি টেনে ধরা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে এটা আমাদের পুরো জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, যেমন সকল বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানের প্রবেশদ্বারে, ভিতরে, পাবলিক পরিবহনে খোলা খাবার বিক্রির যে হিড়িক সেটা বন্ধ করতে হবে। যদি খাবার বিক্রি করাই লাগে তাহলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার তৈরি ও বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণেরও মনে রাখতে হবে, উন্মুক্ত স্থানের এসব খাবারের একটিও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এসব খাবারের প্রস্তুত প্রণালী স্বচক্ষে না দেখে বা স্বাস্থ্য গুণাগুণ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে গ্রহণ না করায় ভালো।
আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। সুস্থ সবল সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া অতীব জরুরি। কিন্তু আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অবক্ষয়-অনৈতিকতার মাত্রা এমন খারাপ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে সেখানে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করা হয় না। এক কথায়, রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের মানুষের পচনটা ধরেছে মাথায়। আর এই মাথার পচন রোধ করতে হলে মাথা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। প্রকৃত বাস্তবতা রীতিমত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। খাবার ও ওষুধ মানুষের জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় দুইটি উপাদান। কিন্তু অধিক মুনাফা লাভের আশায় মানুষ এসব জীবন রক্ষাকারী উপাদানে বিষ মেশাতে শুরু করেছে। যেটা মানুষের অতি নিকৃষ্ট ও নিচু মন-মানসিকতার পরিচয় বহন করে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চাই কঠোর আইনের প্রয়োগ। ফল পাকাতে ও সেগুলোকে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিক্যাল, যেমন- কার্বাইড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং, ফরমালিন, প্যারাথিয়নসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যালের আমদানি, সংরক্ষণ, মজুদকরণ, বিতরণ, ব্যবহার ও উন্মুক্ত বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। বিদেশ থেকে যেসব কেমিক্যাল আমদানি করা হয় সেগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত উপায়ে দেশের বাজারে ছাড়তে হবে। পাশাপাশি জনগণকে ভেজালমুক্ত খাবার ক্রয় ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। খাবারে এসব কেমিক্যালের ভয়াবহ দিক সম্পর্কে জনগণকে যথাযথ সভা সেমিনারের মাধ্যমে বোঝানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

চাহিদার তুলনায় দেশের চাষযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ নগণ্য। সেক্ষেত্রে, বাড়তি জনগণের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হাইব্রিড সবজি চাষ, মাংস উৎপাদন অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। কিন্তু হাইব্রিড সকল উৎপাদনে যেন নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় হরমোন, কীটনাশক ও অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। যত্রতত্র এসব কেমিক্যালের বিক্রির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এছাড়া উৎপাদিত খাবারের মান যাচাই, অবৈধ কারখানা সিলগালা, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারের বিরুদ্ধে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং খাদ্যে বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে মানবদেহের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিক্রেতা, ক্রেতা তথা জনগণের বিভিন্ন সভা, সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
ajoymondal325@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন