উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বৈরী আবহাওয়ার জন্য ভারতের মরণ বাঁধ ফারাক্কাই যে দায়ী তা হাড়ে হাড়ে অনুভব করছে এ অঞ্চলের মানুষ। ১৯৬১ সালের ভারতের গঙ্গা আর এদেশের পদ্মা নদীর উপর মালদায় ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে মুজিব-ইন্দিরা গান্ধীর একটি চুক্তির মাধ্যমে ২১ এপ্রিল এই বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬০ ভাগ পানি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পানির হিস্সা বাংলাদেশ পায়নি। উল্টো ভারত থেকে আসা বাংলাদেশের উপর বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীকে ভারত সরকার শাসন করছে। এই নদী শাসনের ফলে এদেশ মরুর মতো হয়ে যাচ্ছে। মাটির নিচের পানি আরও নিচে নামছে। পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তাই ফারাক্কা চালুর এই দিনটিকে (২১ এপ্রিল) কালো দিন হিসেবে মনে করছে বাংলাদেশের মানুষ। এই দিনটিকে স্মরণ করে রাজশাহীতে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজন করে প্রতিবাদ সমাবেশের। গত শনিবার নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, কয়েক দশক আগেও উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুকনো মৌসুমেও ভরা থাকতো। পানির স্তরও উপরে ছিল। ফসল ফলাতে কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার করতে হত না। কিন্তু কয়েক দশকে ভারত সরকার পদ্মাসহ আন্তর্জাতিক ৫৪টি নদী নানাভাবে শাসন করেছে। তাঁরা নদীগুলোতে বাঁধ তৈরি করে এই অঞ্চলকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারকে ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
বাসদের সমন্বয়ক আলফাজ হোসেন বলেন, ভারত নিজেদের সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বাঁধ দিয়েছিল। এই বাঁধের প্রতিবাদ শুরু থেকেই বাংলাদেশ করে আসছে। ১৯৭৬ সালে মজলুম জননেতা মাওলানা হামিদ খান ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে লং মার্চ করেছিলেন। তখন ভাসানী বলেছিলেন, এই বাঁধ থাকলে এই অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে। আজ এত বছর পর সেই মরুর দিকেই এই অঞ্চল ধাবিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তর নদী তিস্তাতেও বাঁধ দিয়েছে। এই নদীকে ধ্বংস করে ফেলেছে। টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে তারা এদেশের সব নদীকে ধ্বংস করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। অথচ এদেশের সরকার কোনো কিছু করতে পারছে না। এ দেশকে বাঁচাতে হলে আন্তর্জাতিক নদীর উপর বাঁধ তুলে ফেলতে হবে। এ জন্য এদেশের সরকারকে শক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে এদেশের যত ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণও আদায় করতে হবে। এটা সময়ের দাবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন