শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ঈদের ছুটি এখনো শুরু হয়নি। তার আগেই ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। প্রতি ঈদেই শহর বিশেষত রাজধানী থেকে মানুষ দলে দলে গ্রামে যায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে। দু’বছর করোনার কারণে গ্রামে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই যেতে পারেনি। এবার করোনার প্রকোপ না থাকায় বেশির ভাগ শহরপ্রবাসী মানুষ গ্রামে যাবে, এমন ধারণা সহজেই করা যায়। বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও বিমানের টিকেটের জন্য মানুষের প্রচণ্ড ভিড় থেকে অনেকেই আন্দাজ করছে, রাজধানী থেকে অন্তত কোটি খানেক মানুষ গ্রামে যাবে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ঈদযাত্রা কতটা সহজ হবে সেটাই প্রশ্ন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমাদের সড়কের ওপর নির্ভরশীলতাই বেশি। এ জন্য প্রচুর যানবাহন যেমন দরকার, তেমনি রাস্তাঘাট ভালো, যানচলাচল উপযোগী ও যানজটমুক্ত থাকা দরকার। ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় যেসব খবরাখবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে মোটেই আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না। ঘরমুখো যাত্রীদের বড় রকমের ভোগান্তির আশংকাই বরং করা হচ্ছে। রাজধানী থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সড়ক যেমন ভাঙ্গাচোরা, তেমনি লাগাতার চলছে যানজট। সড়ক সংস্কার ও প্রবেশ-সড়ক উন্মুক্ত ও যানজটমুক্ত করার তাকিদ উচ্চারিত হলেও এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের জোরালো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে গোটা রাজধানী শহরে ঈদের বাজারে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট, ফুটপাথ, এমনকি সামান্য খোলা জায়গাতেও বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। মানুষও ঈদবাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। যার সামর্থ্য যেমন, সে অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনছে। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। এইসঙ্গে রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার, মালামালবাহী ছোট যান প্রভৃতিরও যেনো শেষ নেই। সবচেয়ে বেশি রিকশা ও ভ্যান। এগুলোর বেশিরভাগ এসেছে আশপাশের এলাকা বা শহর থেকে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্যাদি কেনাকাটার জন্য যেমন অতিরিক্ত মানুষ এসেছে, তেমনি এসেছে অসংখ্য ভিক্ষুক ও শ্রমজীবী। যানজটের তো কথাই নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ যানজটে আটকে থাকছে। তাদের ভোগান্তি ও কষ্টের সীমা-পরিসীমা নেই।

প্রতি বছরই ঈদের সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীতে যানজট লেগে থাকে। ফলে ঘরমুখো মানুষ যথাসময়ে এর চৌহদ্দি থেকে বের হতে পারে না। এবারও সেটাই লক্ষ করা যাচ্ছে। শহর থেকে বেরিয়েই কি রেহাই আছে? না, তেমন সম্ভাবনা নেই। এবার সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ রকমের যানজট হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। যানজট মানেই ভোগান্তি। এবার তার মাত্রা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের ২৩ জেলার মানুষের ভোগান্তি শুরু হয় টাঙ্গাইল থেকে। এরপর তা চলতে থাকে গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ প্রায়শ লেগেই থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন সময় যানজটের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এই মহাসড়কের সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী অংশ অসংখ্য খানাখন্দকে ভরা। ঢাকা থেকে সিলেট-কিশোরগঞ্জ এলাকায় যাতায়াতকারীরা নরসিংদীর মাধবদী থেকে পাঁচদোনা এলাকাতেই যানজটে আটকে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দির রুটে ফেরি পারাপারের জন্য ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিতে হয়। মহাসড়কগুলোর বেশ কিছুতে উন্নয়ন কাজ চলছে। ফলে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে। মহাসড়কগুলোতে ২৫৬টি অবৈধ হাটবাজার আছে বলে হাইওয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব অবৈধ হাটবাজার যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। মহাসড়কে নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগের অবকাশ আছে। অন্তত ৩০-৩৫টি স্থানে প্রায়ই ডাকাতি হয় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থকড়ি ও মালপত্র লুটে নেয়া হয়। হাইওয়ে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মহাসড়কের অন্তত ১১টি স্থানে ঈদযাত্রায় যানজট প্রকট রূপ নিতে পারে। এগুলো মধ্যে বাইপাইল মোড়, বাইপাইল-ধউর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, সফিপুর বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুরের গোড়াই মোড়, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, নকলা ব্রিজ থেকে হাটিকুমরোল মোড় ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত যাতে সহজ, স্বস্তিকর ও নিরাপদ হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারও তা জানে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থার মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব। রাজধানী এখন লোকারোণ্যে, রিকশা-ভ্যানের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে এবং হকার ও সাময়িক ব্যবসায়ীদের অভয়ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এটা আগে থেকে চিন্তাভাবনা করে ব্যবস্থা নিলে ঠেকানো অসম্ভব হতো না। ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দকে ভরা রাস্তা মেরামত করাও সম্ভব হতো যদি আগেই পদক্ষেপ নেয়া যেতো। যানজট নিরসন, নিদেন পক্ষে সহনশীল পর্যায়ে রাখাও অসম্ভব হতো না যদি রাস্তা-ফুটপাথ দখল মুক্ত করা সম্ভব হতো ও শৃংখলাপূর্ণ যান চলাচল নিশ্চিত করা যেতো। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট প্রকট হওয়ার আশংকার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চয় জানা আছে। যথাসময় ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আশংকা বহাল আছে। রমজানের শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবিলম্বে নেওয়া হোক। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পদক্ষেপ ইতোমধ্যে যা নেয়া হয়েছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন, ঈদের ছুটি শুরু হলে, অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল পুরোদমে আরম্ভ হলে সড়ক-মহাসড়কে অচলাবস্থা নেমে আসবে, যাত্রীদের হয়রানি, বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ চরমে উঠবে। এহেন আশংকার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হওয়ার সঙ্গত কারণ হয়েছে। অবিলম্বে বিষয়টি দেখা ও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এখনো সময় আছে বেশ কিছুটা। আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত সহজ, স্বাভাবিক ও মসৃণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন