বঙ্গবন্ধুর খুনী খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী বিতর্কিত শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রহমত উল্লাহকে সুকৌশলে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক। অভিযোগ উঠে অনুষদের অ্যাকাডেমিক সভায় এজেন্ডা বহির্ভূত আলোচনায় এ তৎপরতা চালানো হয়।
জানা যায়, গতকাল সোমবার পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠনের জন্য আইন বিভাগের একটি জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আসিফ নজরুল। সভার শেষদিকে কোনরকম এজেন্ডা ছাড়াই প্রফেসর বোরহান উদ্দিন খান সম্প্রতি প্রফেসর ড. মো. রহমত উল্লাহকে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি আইন সঙ্গত হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে প্রস্তাব করেন যে, আইন বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি থেকে এ ব্যাপারে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়েছে কি না, সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া বা জানতে চাওয়া যায় কি না?
এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রফেসর কার্জন বলেন, প্রথমত, বিষয়টি আজকের সভার এজেন্ডাতে নেই। ফলে এ বিষয়ে কোন আলোচনা-ই হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক বডি। ফলে এ ব্যাপারে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরে একাডেমিক কমিটিতে কোন আলোচনা হতে পারে না। তাছাড়া, সিন্ডিকেট আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির কাছে কোন আইনী মতামত চায়নি।
প্রফেসর কার্জনের বক্তব্যের পরে ড. আসিফ নজরুল, প্রফেসর বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ড. রহমত উল্লাহর পক্ষে ও তাকে পুনর্বাসনের জন্য নানা যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন বলে সুত্র জানায়। এক পর্যায়ে প্রফেসর হাসান তালুকদার বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের দাবি জানান। প্রফেসর কার্জন তাকে সমর্থন করেন। এরপর একাডেমিক কমিটির সভা কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে প্রফেসর হাসান তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, তারা এ বিষয়ে একটা প্রস্তাবনা দিয়েছে। যুক্তিতর্কের বিচারে তা টেকেনি। ফলে তাদের প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে প্রফেসর হাফিজুর রহমান কার্জন ও প্রফেসর বোরহান উদ্দিনের সাথে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও উক্ত সভার সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আসিফ নজরুল।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্য মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশতাকের অবদানের কথা উল্লেখ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রফেসর ড. মো. রহমত উল্লাহ। পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, গতকালের (রোববার) আলোচনাসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোনো শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে থাকি, তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনা কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সবার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সকল প্রকার প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন