ময়মনসিংহের নান্দাইলে নারী ফুটবলারকে (১৭) জোড়পুর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. ফয়সাল ফকিরের (৩৬) বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়সাল ফকিরকে গাজিপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে পৌর শহরের পাছপাড়া গ্রামের লাল মিয়া ফকিরের ছেলে।
তবে ভিকটিম পরিবারের অভিযোগ, আমরা ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও ওসি ‘ধর্ষণ চেষ্টার’ অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহা: আহমার উজ্জামান বলেন, ভিকটিম যদি ধর্ষণের অভিযোগ করে থাকে। আর সেই অভিযোগের পর যদি ‘ধর্ষণ চেষ্টার’ মামলা হয়। তাহলে তদন্ত করে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে পৌর শহরের নান্দাইল সরকারী শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের পিছনে এই ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরদিন ২৩ এপ্রিল ওই নারী ফুটবলার নিজে বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন থানায়।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, আমি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে ‘ধর্ষন চেষ্টার’ মামলা রজু করেছেন।
তবে নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে এবং আসামী ফয়সাল ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়ছে। ওসি আরও বলেন, ভিকটিমের কথা মতই মামলা রজু হয়েছে, কোন ব্যতিক্রম হয়নি।
ভুক্তভোগী ওই নারী ফুটবলার সাংবাদিকদের জানান, ফয়সাল পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়া পুর্ব থেকেই পরিচিত। ঘটনার দিন সকালে ফয়সাল ফোন করে বলে, উপবৃত্তির ফরমে স্বাক্ষর দিতে হবে, তাড়াতাড়ি নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে আস। এমন কথা শুনে সরল বিশ্বাসে আমি কলেজের গেইটে গিয়ে তাকে ফোন করি। ফোন করলে আমাকে কলেজের পিছনে যেতে বলে। আমি কলেজের পিছনে যেতেই মুখ চেপে ধরে ফয়সাল।
এ সময় চিৎকার করলে আশপাশে দুই তিন জন মানুষ আসতে চাইলে ফয়সাল তাদের চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিলে তারা পালিয়ে। পরে কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম আমার চিৎকার শুনে কাছে আসতে চাইলে তাকেও চাকু দেখিয়ে ভয় দেখালে সেও চলে যায়। পরে ফয়সাল ও তার দুই সঙ্গী আমাকে কলেজের পুরাতন বিল্ডিংয়ের চিপায় নিয়ে জোড়পুর্বক ধর্ষণ করলে তার সঙ্গীরা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এ ঘটনার পর আমি চলে যেতে চাইলে ফয়সাল হুমকি দিয়ে বলে যে ‘কাউকে এই ঘটনা জানালে ধর্ষনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হবে।’
পরে বাড়িতে ফিরে মা বাবাকে বিষয়টি জানিয়ে গত ২৩ এপ্রিল সকালে আমি থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করি। কিন্তু ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও ওসি সাহেব মামলার কোন কপি দেয়নি এবং অভিযোগ কোন প্রকার তদন্ত করেনি। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম জানান, ওই দিন শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় কলেজে আমার ডিউটি ছিল না। তবে আমি গরুর ঘাস কাঁটতে এসে কলেজের পিছনে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি ফয়সাল ওই মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। এ সময় আমি এগিয়ে যেতে চাইলে ফয়সাল আমাকে চাকু দেখিয়ে হুমকি দিলে ভয়ে আমি চলে যাই।
এ সময় আমার মোবাইলে টাকা না থাকায় কলেজের বাইরে গিয়ে টাকা লোড দেই। পরে অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত স্যারকে বিষয়টি জানাই।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সরকারী শহীদ আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত। তিনি বলেন, বিষয়টি পিয়ন আব্দুর রহিম ওই দিনই আমাকে ফোন করে জানায়। তবে ঘটনাটি আমি কাউকে বলিনি।
প্রসঙ্গত, ভিকটিম নারী ফুটবলার জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ২০১৭ রানার আপ ও ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও বিপিএল লীগে আনোয়ারা স্পোটিং ক্লাব, ময়মনসিংহ কাচিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে দীর্ঘদিন যাবত খেলাধুলা করে আসছে। সে তার কৃতিত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসানের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা ও রুপার মেডেল গ্রহন করেন। এছাড়াও অসংখ্য সার্টিফিকেট ও মেডেল জিতেছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন