শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈদ সংখ্যা

ঈদের অর্থনীতি

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত হয় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর রোজাদার মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহাপুরস্কার। মুসলিম বিশ্বের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর আনন্দের এক বড়ো অনুষঙ্গ। এ দিনটির জন্য মুসলিমদের রয়েছে ভিন্ন আমেজ ও মাহাত্ম্য। এ দিনে প্রতিটি মুসলিম উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকে। ছোট-বড়ো, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ এবং শিশুরা এ আনন্দে অংশগ্রহণ করে। এ আনন্দ উৎসবের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো ঈদের কেনাকাটা। আর কেনাকাটা মানেই হলো অর্থনীতি। কারণ এদিনে ছোট-বড়ো সকলের সাজসজ্জার একটা ব্যাপার থাকে। এ দিনে আনন্দ প্রকাশের একটি মুখ্য বিষয় এ সাজসজ্জা। ঈদ মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পৃথিবীতে মানুষ মাত্রই আল্লাহর গোলাম। আর মানুষ মানুষের বন্ধু ও ভাই; এ চেতনায়ই উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। এটা মুসলিমদের আনন্দ প্রকাশের সৌন্দর্য। আল্লাহর দরবারে মস্তক অবনত করার মাধ্যমে এ দিনের উৎসব শুরু হয়। মুসলিমগণ আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যমে শুরু করে পবিত্র এ দিন। আর সেটি হলো ঈদুল ফিতরের দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ। হাদিসের ভাষ্য হলো, ‘ঈদের প্রথম করণীয় হলো নামাজ।’ (বুখারী: ৯৫১)। ঈদের সকালে নামাযের মাধ্যমেই তাই ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। ছোট-বড়ো সকলেই এ আনন্দে অংশগ্রহণ করে। আর এ আনন্দ বিচ্ছুরিত হয় প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে। ভ্রাতৃত্বের পরম পরশে সিক্ত হয় প্রতিটি মুসলিম জনপদ। ভালোবাসার আলিঙ্গনে দূর হয়ে যায় মনের সকল ক্লেদ। ঈদের দিনে আনন্দ প্রকাশের অন্যতম উপাদান হলো নতুন পোশাক। হাদীসে এসেছে, ‘মহানবী (সা.) এ দিনে নতুন জামা পরতেন।’ (আবু: দাউদ ৩৮৭৮)। তাই পুরো রমজান মাস জুড়ে মুসলিম দেশে পোশাকের বাজার থাকে জমজমাট। মুসলমানগন রোজার ঈদকে সামনে রেখে সাধ্যমত নতুন জামাকাপড় ক্রয় করে। বাংলাদেশের পোশাক মার্কেটগুলো এ সময় জমজমাট থাকে। এ দিনে শিশু-কিশোরদের আনন্দ উৎসবটাই হলো মুখ্য। পরিবারের বড়োরা ছোটদের খুশি রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করে। ছোটদের খুশিতেই তারা খুশি। মহানবী (সা.) ছোটদের খুশি রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। এটিও ঈদ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‹আমি নবীর ঘরে নবীর অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে খেলাধুলা করতাম। নবীর আগমন ঘটলেই তারা লুকিয়ে পড়তেন। আমাকে নবীর সাথে খেলাধুলায় জুড়িয়ে দিয়ে তারা সটকে পড়তেন’। (মুসলিম: ২৩১০)। সৃষ্টিজগতে নারী এবং পুরুষের অবস্থান পাশাপাশি। সুতরাং জাগতিক এ আনন্দ নারী-পুরুষ সমানভাবে উপভোগ করতে পারবে। ইসলাম নারীদের জন্য আনন্দের সুযোগ করে দিয়েছে। সুতরাং সুন্দর পোশাকে নারীদের সাজসজ্জা করতে ইসলামে কোনো বাঁধা নেই। শরীয়ত নির্ধারিত সীমার ভিতর থেকে নারীরা সব ধরনের সাজসজ্জা করতে পারবে। মুসলিম নারীরা এ উপলক্ষে নতুন পোশাক পরিধান করে।

আহার-আপ্যায়ন এদিনের আনন্দের অন্যতম বিশেষ অনুষঙ্গ। ঈদের সকালে কিছু মিষ্টি খেয়ে নামাজে বের হওয়া সুন্নত। এদিনে মুসলিমদের ঘরে সাধ্যমত মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না হয়ে থাকে। মহানবী (সা.) এদিনের সকালে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। (বুখারী: ৯৫৩)। এ দিনে অতিথিদের আপ্যায়ন ও পরিবারের সদস্যের জন্য সাধ্যমত ভালো খাবার থাকা আনন্দের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। হাদিয়া আদান-প্রদান এমনিতেই মানুষকে আনন্দ ও খুশি প্রদান করে। ইসলাম হাদিয়া আদান প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করেছে। হাদীসে এসেছে, ‘তোমরা হাদিয়া দাও এবং ভালোবাসা স্থাপন করো।’ (বুখারী: ৫৯৪)। অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘একবার এক নারী সাহাবী মহানবী (সা.)কে একটি কারুকার্য খচিত কাপড় উপহার দিলেন। তিনি বললেন, আমি নিজ হাতে এটি আপনার জন্য তৈরি করেছি। সুতরাং আপনি গ্রহণ করলে আমি খুশি হবো। নবীজি (সা.) সেটা গ্রহণ করলেন এবং পরিধান করলেন।’ (বুখারী: ১২৭৭)। ঈদের দিনে মুসলিমগণ তাই তাদের আত্মীয় স্বজনকে যথাসাধ্য হাদিয়া প্রদান করে থাকে।

এদিনে আনন্দের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো গরিবের জন্য কেনাকাটা। হাদীসে এসেছে, ‘একবার এক গরিব লোক নবীজির কাছে এসে কিছু চাইলেন। নবীজি (সা.) বললেন, এখন তো আমার দেয়ার মতো অবশিষ্ট কিছু নেই। তবে তুমি কারো কাছে আমার নামে ধার করে নাও। আমি পরবর্তীতে উক্ত ধার পরিশোধ করে দিব। একথা শুনে ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহতো আপনাকে সাধ্যের বাইরে কিছু করতে আদেশ করেন নি। সুতরাং লোকটিকে আমিই কিছু দিয়ে দিই। কথাটি নবীজির পছন্দ হলো না। তখন একজন সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইচ্ছামত দান করতে থাকুন! মহান আরশপতির কাছে কমে যাওয়ার ভয় করবেন না! তার কথায় মহানবী (সা.) খুশি হলেন এবং মুচকি হাসি দিলেন। আর বললেন, আমাকে এমনটিই আদেশ করা হয়েছে।’ (তিরমিজি: ৩৫৫)।

ঈদের আয়োজন-উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা মুসলিম বিশ্বে চলে কেনাকাটার মহোৎসব। প্রতিবছরই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারগুলোতে শুরু হয় কেনাকাটার ধুম। বাংলাদেশের শপিংমলগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। বাংলাদেশের প্রতিটি হাট-বাজারে থাকে ব্যাপক লোকসমাগম। খাবার থেকে পোশাক, সেলুন থেকে পার্লার আর শপিংমল থেকে দর্জিবাড়ি-শুধু ব্যাস্ততা আর ব্যাস্ততা! রোজা, ঈদ ও অর্থনীতি পরস্পর পাশাপাশি এ তিনের অবস্থান। রোজা প্রত্যাগত, ঈদ সমাগত, অর্থনীতির আয়োজনও প্রত্যাশামতো। শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামে আর গঞ্জে-সবখানেই অর্থনীতির কারবার! বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, স্টিমারে, বিমানে লেগুনাতে-সবখানেই শুধু একটা জিনিসের হাকডাক। আর সেটা হলো, অর্থ, অর্থ এবং অর্থ। চারিদিকে শুধু ঈদের আমেজ ও অর্থের ছড়াছড়ি। ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে পুরাতন ঢাকার ইসলামপুর-চকবাজার। সবখানেই চলছে কেনাকাটা; সবখানেই ঈদের আবহ-আমেজ। রোজা যতই বিদায় নিচ্ছে জমজমাট হচ্ছে ইফতার বাজার। পাড়া-মহল্লার বাজার থেকে শুরু করে রাজধানীর শাহী হোটেল-সবখানেই ইফতারের ব্যাপক আয়োজন। এসব কিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। পকেটে আসছে অর্থ, পকেট থেকে যাচ্ছে অর্থ, চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। করোনা মহামারীর কারণে গত ঈদগুলোতে ঈদের বাজার তেমন জমজমাট ছিল না। ফলে অর্থনীতির সূচক ছিল নিম্নগামী। এবারের ঈদে অর্থনীতির বাজার খুবই চাঙ্গা ও জমজমাট। ফলে অর্থনীতির সূচক এবার ঊর্ধ্বমুখী। এবারের ঈদের অর্থনীতির আকার যেকোনো বছরের তুলনায় অনেক বড়ো হবে। প্রথম আলোর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে কয়েক লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশে জাতীয় উৎসব হলো দুটি। ফলে বড়ো অর্থনীতির বাজারও দুটি। আর তাহলো দুই ঈদ। তবে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বাজার অর্থনীতি বেশি চাঙ্গা হয়ে থাকে। এই ঈদে বাংলাদেশের শপিংমল এবং ব্যাংক জগতে সবচেয়ে বড়ো লেনদেন হয়। ব্যবসায়ীদের মতে, এবারের ঈদে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই শপিং মলগুলোতে ধীরে ধীরে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। রোজা যতই ঘনিয়ে আসে, ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করতে থাকে। রোজার শেষ দিন পর্যন্ত দেশের পাড়া-মহল্লার মার্কেট থেকে শুরু করে রাজধানীর নামিদামি সব মার্কেটে এ ভিড় চলমান থাকে। ঈদ চলে যাবার পরেও কেনাকাটা অব্যাহত থাকে। ঈদ পরবর্তী এক সপ্তাহ যাবত মার্কেটগুলোতে ক্রয়-বিক্রয়ের এ আবহ চলমান থাকে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে আমদানি-রফতানি অনেকগুন বেড়ে যায়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ শিল্প কারখানার উৎপাদন গতিশীল হয়। দেশীয় শিল্পের উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যেহেতু উৎসব বড়ো, তাই আয়োজনও বড়ো। এই ঈদে যেমন আয় বাড়ে তেমনি বাড়ে ব্যয়। ফলে দেশের অর্থনীতিতে আসে ব্যাপক গতিশীলতা। গ্রামের শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষগুলো সাধারণত কর্মের জন্য শহরমুখী হয়। ঈদ আগমনের সাথে সাথে এর চিত্র বদলে যায়। কর্মজীবী মানুষগুলো তখন শহর ছেড়ে শিকড়ের টানে, গ্রামের পানে ফিরে আসে। পাড়া-মহল্লার হাট বাজারগুলোতে কয়েকদিনের জন্য জমজমাট কেনাবেচা হয়। ফলে গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারের অর্থনীতি চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হয়। গ্রাম ও শহরের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রভাব অর্থনীতির সূচককে আরো ঊর্ধ্বমুখী করে।

প্রথমআলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে পুরুষ, নারী ও শিশুদের পোশাকের দোকান রয়েছে ২৫ লাখ। এসব দোকানে প্রতিদিন সাধারণত তিন হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আগমনের সাথে সাথে এ বিক্রয় এক লাফে তিন-চার গুণ বেড়ে যায়। তার মানে দাঁড়ায়, এ সময় প্রায় ৯ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়ে থাকে। এ তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, এবছর ২৫ লাখ পোশাকের দোকানে একমাসের বিক্রয়লব্ধ টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। উক্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২২ সালের চাকরিজীবীরা বোনাস তুলেছেন ১২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়ে যাবে দেশের পোশাকের বাজারে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মতে, সরকারি-বেসরকারি সকল কর্মজীবী মানুষের ক্রয় কৃত পোশাকের মূল্য হবে ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রদত্ত তথ্য মতে, এবারের ঈদে সকল ধরনের পোশাক খাত থেকে ব্যবসা হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা। পোশাকের পাশাপাশি ঈদ বাজারের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো খাদ্য দ্রব্য ক্রয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রোজার প্রতিটি দিনে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এবারের ঈদে শুধু খাদ্য সামগ্রী থেকেই ব্যবসা হবে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কসমেটিক্স ও প্রসাধনী থেকে ব্যবসা হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। আর বিত্তশালীদের গহনা ও গাড়ি ক্রয় ঈদ বাজারের অন্যতম ব্যবসা। স্বর্ণালঙ্কার ও ডায়মন্ড গহনা থেকে এবার ব্যবসা হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য থেকে ব্যবসা হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। দেশে ঈদ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি খাতের নাম হলো রেমিটেন্স। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক সংখ্যা প্রায় এক কোটি। প্রতিটি ঈদে তারা ঈদ অর্থনীতিতে বিপুলসংখ্যক টাকা যোগান দিয়ে থাকে। গত মার্চে তাদের প্রেরিত টাকার পরিমাণ ছিল ১৮৬ কোটি ডলার। ঈদ উপলক্ষে এ সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঈদুল ফিতরের অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয় বিত্তশালীদের প্রদত্ত যাকাত ও ফিতরার টাকা। এবার ধনীদের কাছ থেকে যাকাত ও ফিতরার টাকা অর্থনীতির সাথে যোগ হবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এবারের ঈদে ভ্রমণ এবং বিনোদনের খাতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ১৪ লাখ। দোকানের কর্মচারী রয়েছে ৬০ লাখ। বস্ত্রখাতে আছে ৭০ লাখ শ্রমিক। এ বিশাল সংখ্যক জনগণের বোনাস ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। দেশের পরিবহন সমিতি মনে করে, ঢাকা থেকে এবার প্রায় এক কোটি মানুষ গ্রামে গমনাগমন করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গমনাগমন করবে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। বিশাল সংখ্যক জনগণের গমনাগমনে সকল শ্রেণীর পরিবহনে ব্যবস্থা থাকবে প্রায় ৬০কোটি ট্রিপ। আর প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা করে গড় ভাড়া হলে প্রতি ট্রিপে আয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন ফেডারেশন-এর মতে, পরিবহন খাত থেকে বছরে আয় হয় প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এবারের ঈদে এ খাত থেকে ব্যবসা হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি থেকে ব্যবসা হবে চার হাজার কোটি টাকা। ওমরা এর রেজিস্ট্রেশন খাত থেকে আয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য বিভিন্ন খাত থেকে আয় হবে এক হাজার কোটি টাকা। দেশের বিত্তশালীদের মধ্য থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ দেশের বাইরে কেনাকাটা করতে যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে ব্যয় হবে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা।

ঈদুল ফিতরের আগের ও পরের অর্থনীতির মাঝে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। রোজাপূর্ব বাজার অর্থনীতি থাকে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্যকেন্দ্রিক। আর রোজার মাসে বাজারে ভোগ্য-অভোগ্য সব ধরণের পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সুতরাং রোজা ও ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতি বহুমাত্রিকতায় রূপ নেয়। তবে রোজার মাধ্যমে অর্জিত তাকওয়া অর্থনীতিতে খুব একটা প্রভাব প্রতিফলিত হয় না। রোজাদার অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, ফরজ নামাজ পড়ার সময় পায় না। আর ফরজ পর্দাটার ব্যাপারেও হয়ে পড়ে উদাসীন। রোজার মতো যাকাতও ইসলামের একটি ফরজ বিধান। আল কোরআনে রোজা শব্দটি মাত্র তিনবার উল্লেখ হলেও যাকাতের উল্লেখ হয়েছে ৩৩ বার। রোজাদার ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সবাই যাকাত সঠিকভাবে আদায় করে না। বাংলাদেশে ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার জন ব্যক্তি আছে, যারা আয়কর পরিশোধ করে থাকে। এর মধ্যে কিছু অমুসলিম ব্যতিত সকলের উপর যাকাত ফরজ। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আয়করের মতো সকলের কাছ থেকে যদি যাকাত আদায় করা হতো তাহলে যাকাত আদায় হতো প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনন্য উচ্চতায় পৌছে দিতে পারতো।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন