শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ সংখ্যা

পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

রোজাকে দরকার

আবদুল হাই শিকদার

সকল কিছু বক্র যখন কে করে সব সোজা?
রমজানের পর্দা তুলে হাসেন তখন রোজা!

ঘর দরোজা মলিন হলে করাতে হয় রঙ,
তলোয়ারকে রাখতে তাজা ছাড়াতে হয় জং।
ব্যায়াম ট্যায়াম না করালে শরীর মহাশয়,
কেমন করে পাঠ ও খেলায় হবে গো ফার্স্টবয়!

বাগান জুড়ে গোলাপ বেলি চায়তো সবাই খুব,
নিয়মিত পানি ও সার না দিলে সব চুপ।
বসন্তদের আসার খবর দখিন হাওয়া আনে,
বাণীর ভিতর সুরের জাদু, সুরই বাণীর প্রাণে।

আকাশে চাঁদ আছে বলেই আকাশ চমৎকার,
ঘরের বাতি জ্বাললে তবেই পালায় অন্ধকার।
সালতামামী শেষ করে তাই নতুন অভিযান,
রোজাই ছড়ায় ব্যর্থ বুকে বিশ্বজয়ের গান।

সমতা আর মমতাময় মানুষকে বার বার
করেন যিনি, তারই জন্য রোজাকে দরকার।

 


যদি পারো, পথ দেখাও
মাহমুদ শফিক

পথের মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছি,
কোনদিকে যাবো ঠিক নেই,
যেতেও পারি, আবার না-ও যেতে পারি,
তবে ফিরে যাবার কোনো ইচ্ছা নেই,
যেতে পারি অনেক গভীরে, নিচের দিকে,
আমাকে গ্রাস করেছে চন্দ্রাহত
কেরানির অহঙ্কার, কে যেন সুকৌশলে
ঢুকে গেছে আমার অভ্যন্তরে, তাই
আঙুরের মতো ভেতরে জমেছে মধুর
নির্যাস, আমার কোনো শত্রু নেই,
তবু কাঁটালতার মতো আমাকে জড়িয়ে
ধরেছে ভয়ার্ত অন্ধকার।
ভেতরে ভেতরে শুধু হারাবার ভয়,
দ্বিধা ও সংশয়, কে যেন শাবল-গাঁইতি
দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে ঢুকে পড়েছে আমার গৃহে,
নিয়ে গেছে সবকিছু, সস্পূর্ণ শূন্য আমি,
মুখের ওপর আমার পড়েছে অশত্থ গাছের ছায়া,
হঠাৎ জ্বলে উঠেছে আমার শরীর,
গড়িয়ে গড়িয়ে পড়েছে নির্জনতা,
পথের মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছি,
কোনদিকে যাবো ঠিক নেই,
পাখি হয়ে উড়ে যেতে চাই, ডানা নেই বলে
দাঁড়িয়ে আছি পথের মোড়ে,
ধরে আছি তৃণের লাবণ্য, উর্বর বীজতলা,
অজানা রহস্যে উথলে উঠেছে বুক,
প্রবল ভাটার টানে নেমে গেছে সমুদ্রের
লোনা জল,
লাল কাঁকড়ার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছি আমি
পথের মোড়ে, যদি পারো পথ দেখাও।

 

আমি বানাই
মাহবুব হাসান
আমি যা বানাই
তার কোনো রূপাকার নেই, যেন খুঁটি ছাড়া আকাশ!
তোমরা কী আকাশ দেখো না?
ওই সীমাহীন অলৌকিক সম্পদের জল
আর ফোটার ভেতরে পরাবাস্তব জীবনের নৌকা বাইচ
আমি দেখি!
কেন না আল্লাহ আমাকে দুটি চোখ দিয়েছেন
আর খুঁটিহীন মন।
তোমরা কী তোমার রবের দৃঢ় ঘোষণা শোননি?
আমি যা বানাই
তার কোনো সহোদর নেই!

মাত্র ১ সেকেন্ডের জীবন!
তা নিয়ে হাজার রজনীর গল্প ফাঁদো,
অথচ তুমি জানো না
বৃষ্টির ফোটার সমান তোমার পৃথিবী জীবন!

এই নিয়ে এতো কামড়া-কামড়ি,
ক্ষমতার দরে
চড়চড়ে চৈত্রের রোদের ঘূর্ণি ওঠে বাওকুড়ানি বিকেলে!
তোমাদের আস্ফালনের ফোকড়ে
দারিদ্র খিলখিল হাসির ঝলক দেয়,
তোমরা তার কিছুই বোঝো না।

আমি যা বানাই
বস্তুর অধিক কিছু পরাবাস্তব আলোর ইশারা।

 


তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছি
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
বহুপথ ঘুরে বহু কিছু জেনে
মেনে ও না মেনে দিশেহারা

যখন ফিরেছি নিজ মনে
আপন জিজ্ঞাসা
নিজেকেই করেছি নির্জনে
সে বলেছে, তুমিও কী দেখেছ আমাকে?
এই বলে নিশ্চুপ সে দিয়েছে ডুব।

অতল মনের তলে
যে অনল জ্বলে
সে আগুনে পুড়েছে জঞ্জাল।

জিজ্ঞাসা ঘনীভূত বিশ্বাসে
যাঁকে দেখি নাই তাঁরই কাছে
পরম নির্ভরতায় দাঁড়িয়েছি।

 

 

কোন সীমানায়
কামার ফরিদ
এই গাঁয়েতে সকাল হলে সবুজ দোয়েল মর্ত মাতায়
টল্কে পড়ে শিশির ভেজা দুর্বা-ঘাসের সবুজ পাতায়
সকাল হলে এই গাঁয়েতে গাঁয়ের বধূ ঘোমটা মাথায়
স্নানটি সেরে ঘরকে ফেরে স্বপ্ন চোখে কিসের মায়ায়!
এই গাঁয়েতে ভোর-সকালে রাখাল ছেলে গরুর পালে
বাঁশির সুরে ফুলকুমারী পথকে চলে দাদ্রা তালে
সকাল হলে এই গাঁয়েতে গুড়-পাটালির গন্ধ ভাসে
বিন্নি-চালের পায়েশ-পিঠা ঘর থেকে ঘর কেবল হাসে।
এখন কেন সেই গাঁয়েতে একতারা সুর আর বাজে না
হিজলবনে এখন কেন হংস-মিথুন আর ডাকে না
মনের মাঝে লালন ফকির আজ কেন নেই শুদ্ধ ধারায়
হাসন রাজা হারিয়ে গেল কোন সুদুরের কোন সীমানায়!
কেউ জানে না কেউ বলে না এই অবেলায়-
একমুঠো রোদ কোথায় হারায়!

 

একগুঁয়ে মাঝি
হাসান হাফিজ
মন পোড়ে?
বৃষ্টি ওড়ে?
মনের তো ডানা নাই,
কীভাবে বৈদেশ যাবে
বন্ধুয়ার খোঁজ পাবে
প্রশ্ন এইটাই।

বৃষ্টি পড়ছে
আছড়ে পড়ছে
মৃত্তিকার আলিঙ্গনে
এবং সম্ভোগে
সার্থকতা জলের প্রেমের।
দেখেছ প্রেমের মড়া?
কোনোদিন ডুবেছে সে জলে?

মন পোড়ে?
আহা বাহা পুড়ুক জ্বলুক
পোড়াই নিয়তি
বাহক দুর্গতি
ছিল যে কপালে লেখা
কীভাবে খণ্ডাবে?
মনের বৈরাগী মাঝি
ফিরে আসতে নয় রাজি
চড়েছে সে একগুঁয়ে
ভাঙাচোরা ডিঙি নৌকায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন