বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ সংখ্যা

ঈদ উল ফিতরের কবিতা : পদাবলি/পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

জা হা না রা আ র জু

পদ্মাপাড়ের গাঁথা

সেই পদ্মা, রূপবতী পদ্মা, ছুঁই ছুঁই করছে এখন
মসজিদ-মাদ্রাসা-ডাকঘর-হাসপাতাল হাট-বাজার-
ফলবতী আম কাঁঠালের বাগান, কবরস্থান, বুকভরা
শস্য-শীষ নিয়ে ডুবে গেছে সাধ্যের ক্ষেত খামার,
সোনাভানের সচ্ছল সংসার, রঙিন ফুল তোলা শিকা,
বেড়ায় টাঙ্গানো জোড়া পাখি ‘সুখে থাক’, ফুলের ওপর
ঝিমধারা কালো ভ্রমর, তুলো আর মাছের আঁশের রাজহাঁস
নিপুণ হাতের সূচিকর্মÑ যে ছবিরা একদিন কথা বলত একান্তে
সুখ দুঃখের কবিতার মতো, ডুবে গেছে সব!
একদা বিত্তশালী যাঁরা ছিলেন মোড়ল-মাতব্বর প্রধান,
কোথায়ও কেউ নেই আর, চলে গেছে দূর দূরান্তে একটি
আশ্রয়ের খোঁজে নতুন জনারণ্যের ভিড়ে, কেউ বা খুঁজে নিয়েছেন
সামান্যতম আশ্রয়Ñ আচ্ছাদন, ঠিকানাহীন বৃত্তে একটি ডেড়ায়Ñ
ঝলমলে এই শহরের পাশে বস্তির ছই ঘরে পড়ে থাকা
ডাস্টবিনের জঞ্জালের মতো! ওরা ফিরে আসে দিনান্তে
এই অস্থায়ী ঠিকানায়, লোনাঘাম জমাট বাঁধে ওই শিড়াওঠা বাদামি চামড়ায়।
দু’মুঠো ভাতের জন্য কিশোর ছেলেটি ঝাঁট দেয় মুখ বুজে
দোকান ঘর, লেখাপড়ার বইখাতা পড়ে থাকে অবহেলায়
ছিন্ন কাঁথায়। কিশোরী কন্যাটি ফুল বিক্রি করে বড় রাস্তার
মোড়ে। হয়তো একদিন বিকৃত লালসার শিকার হয় কোনো এক
মানুষ নামী পশুর থাবায়Ñ ফুলের কুঁড়ির মতো দেহখানি তার
ঝরে যায় অবহেলায়!
একদা সচ্ছল গৃহিণীর হাতে উঠেছে ঘর মোছা বালতি,
কাপড় কাঁচার কর্কশ চাপের হাত নিয়ে ঠিকা ঝি এর
খাতায় উঠেছে নামÑ সেদিনের গৃহকর্তার পায়ের তলায়
রিকশার চাকায় আগুন জ্বলে অবিরামÑ
পেটে জ্বলে তার চেয়েও বেশি ক্ষুধার আগুন বেঁকে গেছে
পিঠ অকালবার্ধক্যের ছোবলে ছোবলে!
এতসব গ্রাস করেও মোহময়ী পদ্মা বয়ে চলে খলবল,
মাঝে মাঝে চর জাগা চর ঝকঝকে রুপোর থালার মতো
মেলে ধরে খেয়ালি বৈভব তারÑ
দীর্ঘদিনের সময়ের সেতু পার হয়ে পদ্মাপাড়ে এসে
চেয়ে থাকি অপলক, কী ভীষণ সংহার আর সৌন্দর্যের
প্রতীক ওই প্রমত্তা নদী, জীবনের ভাঙাগড়ার মতো
নিয়ত ভাঙছে এপার আর ওপারÑ
ক্ষুধার্ত গহŸরে হারিয়ে গেছে কত স্বপ্নের ফুলদল, বাগান, বাথান, জনপদ!
নতুন আশ্বাসে জেগে উঠবে নাকি আবার ওপারের বালুচর
তাই কি ঘরছাড়া মানুষেরা চেয়ে থাকে রুপোলি ঢেউ এর
জলপরীর দিকে, দূরাগত বন্দরে পৌঁছানোর প্রত্যয়ী একদল নাবিকের মতো?

র কি মা হ মু দ
কবি জীবন
(ভাতঘুমের কবি)

কবি জীবন স্বচ্ছন্দবিলাসী অনন্যপ্রত্যয়ী নিঃশঙ্ক
তিনি কোন কালের নন, বরঙ তিনি হবেন ত্রিকালজ্ঞ
কারণ; নিরঙ্কুশ বর্তমান বলে কিছু নেই এই মহাকালে।
তিনি হবেন সর্বজনীন চিত্রকল্প বিনির্মাণের মূর্তপ্রতীক
বহুরৈখিক সা¤প্রতিক শিল্পযুগচেতা অথচ, সদা মফঃস্বলি।
সৌন্দর্য্যবোধ কিম্বা মূল্যবোধের অপমৃত্যু তিনি অগ্রাহ্য করবেন
তিনি এতোটাই সা¤প্রতিকী হবেন যে, ঘুম চোখে হেঁটে যাবেন-
কবরস্থান, মহাশ্মশান, গির্জা, পড়ো বধ্যভূমি কিম্বা কবিতাড্ডায়।

জা হা ঙ্গী র ফি রো জ
একটি শহর ছিল

অতৃপ্তি সারাক্ষণ কাছে কাছে থাকে
তৃপ্তি সে তো প্রেমময় আসে কখনো সখনো
ক্ষণিক সঙ্গ পেয়ে দূরে সে দাঁড়ায়
মাঝখানে যেটুকু বিশ্রাম সেও স্মৃতিকাতরতা
পথশ্রম, ধুলো ওড়ে মনের শহরে।
একটা শহর ছিল বেগানা শহর
তিন প্রহরের ঘড়ি - পথ পেরিয়ে দেখেছি একটি গ্রাম
দুলছে দোদুল দোলায়
মানকচুদের সবুজ পাতার নিচে ।
সেখানে বাঁশ ঝাড়, শুকনো মরা পাতার ক্রন্দন
ছাইয়ের গাদায় বনমোরগের ছানা
জিরিয়ে নিচ্ছে ক্লান্ত পথের ছায়ায়।
স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ডানা থেকে ভয় খসে পড়ে
শিশিরের লাজুক অশ্রুকণায়।
আমাদের প্রেম ভালোবাসা আশা ও নিরাশা
বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেছি সেই
গহীন প্রাচীন আবেগে।
এ আবেগ ধরে রাখি মনে সবুজের বনে
মোরগের ডাকে লাল সূর্য উঠেছে।

সা য়ী দ আ বু ব ক র
রাতের নগরী

রাতের নগরী নেশায় উত্তাল।
নাচে তন্বী স্বপ্নের নারীরা
নগরনাট্যমে। বেসামাল মানুষেরা; ওঠে
উথলে তাদের শিরা-উপশিরা
উন্মাদ উচ্ছ¡াসে। ঠোঁটে বাজে শিস,
প্রাণে কবন্ধ কামনাÑ
নীলপদ্মপায়ে নর্তকীর, ঝরে ঝরে পড়ে সোনা।
এইসব মানুষেরা কেবলি শরীরী;
কেবলি কামান্ধ কায়ার উল্লাসে
বেতাল, বেহুঁশ; এদের স্বপ্নের সিঁড়ি
ওঠে নাই ঊর্ধ্বাকাশে,
উল্টো নেমে গেছে নিচে, বহু নিচে
অথৈ অন্ধকারে ডোবা নরকেরও নিচেÑ
ঘৃণার কিরিচে
যেখানে জন্মান্ধ ডাকিনীরা কাটে চৌপ্রহর
মানুষের অবোধ অন্তর।

দ্বী প স র কা র
বরফকুচির শব্দ

তামাশার বিচি কিনতে যাই প্রেমিকের কাছেÑ
সে দৃষ্টির ভেতর থেকে আনে টুকরো টুকরো বরফকুচি
পাঁজরের পাশ থেকে আনে মহাকালের দা কুড়ালÑ
অতঃপর প্যাপিরাস থেকে অদ্ভূদ কাগজে মুড়িয়ে দেয় তামাশার বিচি,
নিংড়ানো চুপকথার নিমগ্ন চোখ আমার চোখে রাখতেই
বেরিয়ে আসে বরফকুচির ঠাস ঠাস শব্দ
প্রেমিকা চোখে ঘৃণার ঝাঁপি খুলে বসে থাকে
আর আমি তাতে তাড়া খাওযা মাছের মতো দৌড়ে এসে
আটকে যাই আর আটকে যাইÑ

কা জি ম রে জা
বাজে সৃষ্টিতে রক্ত আখরে
(শান্তিদূত জেসিন্ডা আরডার্নকে জানাই সালাম)

রক্ত মুছে যায় শোকে ধুলা জমে
কবর সময়ে মিশে যায়, কখনো বা নতুন নির্মাণে
হৃদয়ের শব্দ অফুরান মানব থেকে মানবে
রক্ত! রক্ত! নূর! নূর! আলো আলো
সব সত্য, নরনারী, এলো এক হয়ে পাশে
এত রক্ত! এত আলো!
ক্রাইস্ট চার্চের মর্ম-আল নূর গাঁথা
পাশে সহোদর আরেক নামাজ ঘর
নিউজিল্যান্ডের মসজিদ থেকে ছড়িয়ে দিলো গীর্জায়Ñ
শোকে আনত প্রধানমন্ত্রীর সহমর্মী হিজাবে
শ্রীলংকায় ঘাতকেরা পরে যাঁকে টলাতে পারেনি
শান্তির বাণীতে ওরা আঁকে কোন ইয়াজিদী ছক!
সব মানুষ একই নরনারী বিভিন্ন ধরনে দেশে দেশে
ঈসা সময়ের পথ বেয়ে যেমন জেসাস
কুমারীর পুষ্প,Ñমেরি, মরিয়ম ধরিত্রীর চির দুঃখিনী মা,
পথের শেষে আরও আলো, শেষে এলো মোহাম্মদ
হাতে হাত ধরে জয়ী হতে ইনসান
এলো একে একে, এক হতে
সহমর্মী হিজাবের হাত ধরে অকুস্থলে এক হয়ে পাশে
বাজে সৃষ্টিতে রক্ত আখরে সময়ের ডমরু
নিরাশ হয়েছে কোন নবী কোন কালে
তাঁদের ছাত্র মানব মÐলী এক হতে জানে!

সা জ্জা দু র র হ মা ন
সাইক্লোনিক বাঁশি

তার চারপাশে কেউ নেই।
সে বসে আছে আকাশ বিছানায়
তার পাদু’টো প্রশস্ত পূর্ব-পশ্চিম
হাতের ওপর সূর্যরশ্মি অগ্নিগিরি।
সে ক্ষুদিরামের ফাঁঁসির ছবি আঁকে।
অপলক চেয়ে থাকে কম্পিত মঞ্চের দিকে
তার ঠোঁট কাঁপে, পাহাড়চূড়া যেভাবে নড়তে থাকে।
তার হাতের রেখা গলে গলে মাটিতে পড়ে, চারাগাছ হয়।
গাছগুলো দেখে সে হাসে, মনে করে অগ্ন্যুৎপাত।
তার গলনাংশে অত্যাচারের বিষম খায়;
চিবুক খিমচে ধরে কামাল পাশাকে ডাকে
কামাল পাশা জল হয়ে গলাধকরণ হলো
কিছু স্বস্তি বিহংগ হয় ছাদ-বাগানে।
অকস্মাৎ নাভিমূলে একটি আক্রোশ চেঁচিয়ে ওঠে
হৃদয়ের ঝিলি­তে কথা বলে ওমর খৈয়াম শেখ সাদী।
এক বিশেষ পেয়ালা’ সাকী বুদ্ হয় তার মনস্তত্ত¡ গিলে খেয়ে
কবির ভেতরে বিদ্রোহের ফেনায়িত অগনতি দাবীদাওয়া,
কবির চির উন্নত শিখর হিমাদ্রী শির নিসৃত করে চিরায়ত বানী।

জা মা ল উ দ্দি ন বা রী
সন্ত হয়ে বেঁচে থাকা

এই কপট নাগরিক জীবনে পা’ রাখার আগে
কোন একদিন আমি সন্ত হতে চেয়েছিলাম
এই সব রঙিন ভোগবাদি স্বপ্নযাত্রা
এই সব ঝকমারি সভ্যতার পোশাকি লেবাস
ক্ষুদ্র মনে হয় তুচ্ছ মনে হয়।
‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
সেই বৈরাগি অন্তর এখন গৃহবাসি বেদুইন
এই ঘর এই ব্যস্ততায় অন্তরীণ সন্যাস
এখনো শূন্য মনে হয় রিক্ত মনে হয়।
সুন্দর সবুজ প্রকৃতি প্রেমময় প্রাণিত বন্ধন
এই ঋণ কখনো শোধ হবে না বুঝি,
আবার নিজের নিবিড় সান্নিধ্যে
নিজেকে সন্ত সাজিয়ে অবিরাম
প্রেমে ও প্রার্থনায় বেঁচে থাকা
মর্ত্য মৃত্যু ও অবিনশ্বর ঠিকানা খুঁজি।

ই স মা ঈ ল মু ফি জী
মুক্তি ও স্মৃতির ফারাক

ক্ষমতার দ্বন্ধে দ্বন্ধে ধরণী ধপাস
দ্বিধায় বিভক্ত হচ্ছে তাই শান্তির আকাশ
অমাবস্যা আর পূর্ণিমার সমতল প্রকাশ
পড়শি ফকির ভায়া এক অন্ধের মতোই
অন্ধকার হাতে শুধু শত্রুকেই তালাশ
নুসরাতের বোরকায় জ্বলে ভাদ্রের আগুন
বেঁচে থাকার আকুতি দুচোখ জুড়ে
জাতির চোখে হতাশা, কান্নার মহোৎসব
তবু দেখি মিছিলে মুক্তির মোহনা
শ্লোগানে শ্লোগানে তাই কেঁপেছে রাজপথ
খোলে কিনা ভাগ্যের রথ, খেলন্তি খিলান
কী যেনো আড়াল করার মিথ্যে বাহানা
নারীর কান্নায় শরম নেই কথায় হন হালাক
লজ্জাবতীর প্রকৃতি অনেকের অজানা
কী করে বুঝবে বলো মুখ ঢাকার কারিনা
আর ক্যামনে বুঝাই বলো মুক্তি ও স্মৃতির ফারাক?

মো হা ¤ §দ মা সু দ
পথের গল্প

ক.
জীবন কথা বলবে- জল-রঙে,
জীবন-আলপনা আঁকবে
ঝরা পাখির পালক-ধুলায়।
খ.
অগ্নিপথও হয়েছিল চলার সমুদ্র
একেকটি রাতের নিঃস্তব্ধতা মুক্তি দিয়ে।
আমার হয়ে উঠা কথায়- আমি চলে যাই; গভীরে।
প্রতিটি রাত অগ্নি-উপ্যতকার গর্ভধারিণী।
গ.
জীবন অনুভ‚তির খÐ-প্রস্তর ধ্বসে পড়ে,
তারপরও লেগে থাকা ধুলো-
জীবনকে জাগিয়ে তোলে এবং
জীবন ধ্বংস হয় মহাপ্রলয় হয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন