শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহান একুশে সংখ্যা

পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১০:০০ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

মিজানুর রহমান তোতা

সেই চোখ খুঁজি
যে দু’টো চোখ আমাকে সব সময় দেখতো
ইশারায় কাছে ডাকতো
চোখে চোখ রাখতো
ভাব ভাষা হারাতো
অনুভূতি জাগাতো
কথা বলতো হাসাতো রাগাতো
কখনো দুরে ঠেলে দিতো
সে দুটো চোখ হারিয়ে গেছে সুদুরে।
চোখে চোখ রাখার চোখ খুঁজে পাই না
উদভ্রান্তের মতো ছুঁটে চলেছে চোখ বিরামহীন
সুরছন্দে মাতিয়ে রাখতো সেই চোখ তুলনাহীন
কোন চোখ, কী তার রঙ, নৈঃশব্দে পানি পড়তো
মিটিমিটি চোখে দুলাতো হৃদয়
চোখের মতো চোখ খুঁজে পাই না আজো।
তবুও সেই চোখ খুঁজি
সেই চোখ হৃদয়ে গেঁথে রেখেছি, রাখবো অনন্তকাল।

 


১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ঢাকায় শাহাদাত বরণ করেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ ভাষা সংগ্রামী। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। চট্টগ্রামের মাহবুব উল আলম চৌধুরী তখন অসুস্থ; তাঁর শরীরে জলবসন্তের চিহ্ন। সেই অবস্থায় রাত জেগে তিনি লেখেন এই অমর কবিতা: ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতিবাদ সভায় সে কবিতা পড়েন তাঁরই সতীর্থ চৌধুরী হারুণ-উর-রশীদ। পাকিস্তান সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। হুলিয়া জারি করে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ওপর। তিনি এবং তাঁর কবিতা হয়ে যায় ইতিহাস। ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ একুশের প্রথম কবিতা। এখানে দীর্ঘ কবিতাটির অংশবিশেষ ছাপা হলো।

 

মাহবুব উল আলম চৌধুরী
কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি
ওরা চল্লিশজন কিংবা আরো বেশি
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে রমনার রৌদ্রদগ্ধ
কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়
ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য বাংলার জন্য।
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
একটি দেশের মহান সংস্কৃতির মর্যাদার জন্য
আলাওলের ঐতিহ্য
কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের
সাহিত্য ও কবিতার জন্য
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে
পলাশপুরের মকবুল আহমদের
পুঁথির জন্য-
রমেশ শীলের গাঁথার জন্য,
জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাটের’ জন্য।
যারা প্রাণ দিয়েছে
ভাটিয়ালি, বাউল, কীর্তন, গজল
নজরুলের “খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি।”
এ দুটি লাইনের জন্য
দেশের মাটির জন্য,
রমনার মাঠের সেই মাটিতে
কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য ঝরা পাপড়ির মতো
চল্লিশটি তাজা প্রাণ আর
অঙ্কুরিত বীজের খোসার মধ্যে
আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের অসংখ্য বুকের রক্ত।

 

জামালউদ্দিন বারী
মৃত্যুঞ্জয়ী সাহসের উপাখ্যান
একটা সময় ছিল
মানুষেরা গুহায় বসবাস করত
সেই গুহাকে ইমারত বানিয়ে
মানুষ নিজেরাই একেকটা গুহায় পরিণত হয়েছে।
যারা প্রতিদিন আলোকিত হওয়ার কথা বলেন
তাদের কেউ কেউ পুঁতিগন্ধময় অন্ধকার আঁকড়ে থেকে
শৃঙ্খলিত জীবনের সমৃদ্ধির কথা বলেন।
জীবনের দায়বদ্ধতা জীবনেই হবে শোধ
আমরা শুধু মহিমান্বিত জীবনের কথা বলব
বলব পূর্বপুরুষের সংগ্রামের ইতিবৃত্ত
হেরে গিয়েও মৃত্যুঞ্জয়ী সাহসের উপাক্ষ্যান।
আর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই -
উন্মুক্ত শঠতা আর শৃঙ্খলিত স্বাধীনতা
পাশাপাশি সহাবস্থান অসম্ভব
এমন বেঁচে থাকার গ্লানি মুছে যেতে
আমরা বরং আমৃত্যু শেকল ভাঙ্গার গানই গেয়ে যাব।

 

রেশম লতা
একুশ
কুড়িয়ে পাওয়া সুখ, আমার প্রথম স্বর্ণালী অর্জন
শহীদের রক্তে মাখা বাঙালির তেজোদ্দীপ্ত গর্জন
আমার মায়ের মুখের ভাষা এখন বিস্তৃত বিশ্বময়
মাটি ও মমতার গন্ধে আঁটা এই বর্ণমালা অক্ষয়
রবী, নজরুল, রোকেয়া লিখে গেছে এতে অহর্নিশ
গৌরবান্বিত এ বাংলায় আজ দোয়েল বাজায় শীষ!
রফিক, শফিকের গ্যালন রক্তে অর্জিত এ রত্নমনি;
বহিরাগতের বুলিতে কখনো বাঙালি হারতে শিখেনি!
মাথা নোয়াবার নয় বাঙালি দীপ্ত শপথের দিনে
গোটা বিশ্ব নিয়েছে বিস্ময় চোখে বাঙালিরে চিনে
আজ বিশ্বময় উচ্চারিত অ, আ বাংলা ধ্বনি
মিথ্যে হুংকার থমকে গিয়েছে রক্ত গর্জন শুনি
শরীর প্রাণে প্রেরনা যোগায় প্রভাত ফেরির গান
কে আছে আর ক্ষুণ্ন করে জাতীয় গৌরব সম্মান
বাংলার বুকে রচিত হয়েছে সমৃদ্ধ অধ্যায়
সিক্ত আঁখির চিত্রপট ভাসে বিনম্র শ্রদ্ধায়!

 

আলম মাহবুব
উত্থান পর্ব
অতঃপর তুমি বুঝে নাও এভাবেই হয় এভাবেই হবে
গণঅভ্যুত্থান শেষে রক্তপাতের শেষে বিদগ্ধ উত্থান।
এটাই সারসত্য অতএব তুমি আবৃত্তি কর উত্থান পর্ব
মানুষের দুঃখবোধ, মৌনতার এপিটাফ।
আশাহত জীবনের ভাঙনে বাঘের মুখোশ খুল
চূড়ান্ত মুঠোয় স্বপ্নের হালখাতা, প্রতীক্ষিত ভোর।
কোন প্লাটফর্মে এসেছো
প্রত্যাবর্তনের শর্তে কি কেবলই অন্ধের মিছিল?
কি বিস্ময়ে থমকে আছে ফাল্গুন
ঝরা পাতার আর্তনাদে ভুলে যাওয়া যায় না
সূর্যাস্তের পর রাত্রির কোলাহলে দিবসের শিরিষ,
হেমন্তে হেমন্তে রক্তের ভিতরে বাজে
পোড় খাওয়া মানুষের জলছবি সাহসী গোলাপের চারা
দীর্ঘ পথের শেষে এখানে তুমি সবুজ পাতার গন্ধ পাবে
হাতের মুঠোয় শিহরিত জলের কল্লোল
অতঃপর তুমি বুঝে নাও এভাবেই হয় এভাবেই হবে
শুভ্রবিষাদের স্বপ্নগুলো বেলুন হয়ে উড়বে পদ্মফুল।
ভিতরে বাহিরে উন্মোচন কর দিন বদলের কবিতা
ঐন্দ্রজালিক দৃশ্যাবলী ভেঙে চতুরতার নাট্যশালায়
সেই গান গাও শত্রুর মুখে ঘৃণা এঁকে
শান্তিপ্রিয় ইচ্ছেগুলো উড়াও উড়াও পতাকা উড়াও
মানুষের বিজয় উত্থান ভালোবেসে।

 

শিরীন চৌধুরী
একুশে ফেব্রুয়ারি
আবারো এলো ফাল্গুন, এলো বসন্ত
আবারো এলো একুশ।
একুশে ফেব্রুয়ারি।
ভাষা শহীদদের অবদান বিশ্বময়,
স্বর্ণাক্ষরে লেখা তাদের নাম-
সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের
রক্ত ভেঁজা নাম।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে
পারির গান।
একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আসে বর্ণমালার ঐতিহ্য।
বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে
স্বীকৃত ভাষাদিবস উদযাপিত হয়
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন