মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহান একুশে সংখ্যা

পদাবলী

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

প্রেমহীন কান্তার

কে জি মোস্তফা
বানরেরা অতিসুখে শিকড় ধরে ঝুলছ,
বিনুনী বাঁধা বালিকা
বই থেকে মুখ তুলে
দেখছে আলোর মায়া, কচি কলাপাতা,
কাঁচা হলুদের রং, ব্যস্ত পাখি, ঘাস ও ফড়িং।

সহসা বাজিকরের ভোজবাজি-
বহুমুখী সাপের ফণায়
বাঁকে বাঁকে উদ্যত বিষাক্ত দাঁত
যার মুখে প্রতিশ্রুতি
তারই হাতে ছুরি!

একলা পথের পথিক
প্রেমহীন কান্তারে বানর,
নির্দয় প্রান্তরে মানুষ
অক্ষমের হতাশায়
নিজের হাত নিজেই কামড়ায়।

 


যাঁকে দেখি নাই
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
বহুপথ ঘুরে বহু কিছু জেনে
মেনে ও না মেনে
দিশেহারা।

যখন ফিরেছি নিজ মনে
আপন জিজ্ঞাসা
নিজেকেই করেছি নির্জনে
সে বলেছে, তুমিও কী দেখেছ আমাকে?
এই বলে নিশ্চুপ সে দিয়েছে ডুব।

অতল মনের তলে
যে অনল জ্বলে
সে আগুনে পুড়েছে জঞ্জাল।
জিজ্ঞাসা ঘনীভূত বিশ্বাসে

যাঁকে দেখি নাই তাঁরই কাছে
পরম নির্ভরতায় দাঁড়িয়েছি।

 

নদীকাহিনী
আতাহার খান
না, কোথাও নেই দুই পাড়ে মাতাল যৌবন,
চারদিক থেকে খসে পড়ে
ঝরা পাতাদের সাথে আহত বাতাস!
ভীষণ চমকে উঠি, দেখি-
চুরি হয়ে গেছে নদী থেকে গভীর জলের স্রোত।

গুমোট গরম, জনপদে স্বস্তি নেই-
আমাদের বুকের ভিতর
শুধুই জ্বলছে উষ্ণ বালিয়াড়ি!
মাটি ফুড়ে বেরুচ্ছে না জল,
ধীরে ধীরে নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ পাতার ঘ্রাণ।

 

একুশে: অহঙ্কার চিরঞ্জীব
হাসান হাফিজ
তারুণ্যের স্পর্ধা ও রুধির যদি পায়
বর্ণমালা দুঃসাহসে ফুল হয়ে ফুটে উঠতে পারে।
ভাষার মর্যাদা পেতে চাই রক্ত, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ।
বাংলা ভাষা সেই মন্ত্রে অহঙ্কারে ফুঁসে উঠেছিল
অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্র স্বয়ম্ভু ও সার্বভৌম,
বিশ্বজুড়ে সে ঘটনা সঙ্গত কারণে পায় স্বীকৃতি-সুনাম
অমর একুশে আজ শুধুমাত্র বাঙালিরই একচ্ছত্র নয়,
বৃহত্তর মানবমণ্ডলী একই গর্বে স্ফীত, জয়তু একুশ।
সমস্ত ফাল্গুন গান নিবেদিত,চিরঞ্জীব অমর একুশ।

 


মেঘ ও মল্লার
আবদুল হাই শিকদার
শরীয়তুল্লাহ শরীয়তুল্লাহ
শক্ত মাটিতে রাখো কদম,
কারা ডাক দেয় এভাবে আমাকে-
ঘুম ভেঙে যায় নেন না দম।

আল আজহার পিছু পড়ে থাকে,
তত্ত্বের ত্যানা ফেলে পথবাঁকে,
শুনলেন তিনি বুক পেতে পেতে
মানুষের আহাজারি,
শুভ্রতা মাখা হাত দুটি তার
হয়ে ওঠে যেন খোলা তলোয়ার,
সকল আয়েশ খানখান করে
ছাড়লেন ঘরবাড়ি।

শরীয়তুল্লাহ শরীয়তুল্লাহ
আড়িয়াল খাঁর বুক ফাটা ডাক,
ঘুম ভেঙে যায় পথে নেমে দেখে
মানুষে মানুষে যোজন ফাঁক।

শরীয়তুল্লাহ শরীয়তুল্লাহ
পদ্মাবক্ষে মহাতুফান,
শরীয়তুল্লাহ চোখ ভিজে যায়
কীভাবে বাঁচাবে নিযুত প্রাণ।

শরীয়তুল্লাহ নামলেন পথে
মাথার ওপরে ক্রুদ্ধ মেঘ,
পায়ের নিচের জলাভূমিগুলো
দুপায়ে জড়ায় কী উদ্বেগ।

তবু ফিরলেন মানুষের দিকে
কিতাব-টিতাব তাকে তুলে,
নামলেন তিনি মানবভূগোলে
‘মানবসত্য’ বই খুলে।

চললেন তিনি দৃঢ় ধীর পায়ে
আজানে আজানে জাগে মানুষ,
তারাও দাঁড়ালো অপমান ঝেড়ে
যারা ছিলো নিচে পুরো বেহুঁশ।

রাত ভোর হয় কাটে সংশয়,
শরীয়তুল্লাহ স্বপ্নবান,
এতো প্রেম তুমি কোথায় পেয়েছো
ফরাজি যুদ্ধ বিশ্বপ্রাণ।

শরীয়তুল্লাহ শরীয়তুল্লাহ
এই নাম নিতে কত যে সুখ,
আকাশে আকাশে কত যে কোরাস
মুক্তা ফলালো কত ঝিনুক।

এই বদ্বীপে হৃদয় প্রদীপে
তুমি হয়ে আছো ধানের শীষ,
গাছ ফুল পাখি নদী ও মানুষ
তোমাকে পাঠায় শত আশীষ।

 

খাবার টেবিলে
মাহমুদ শফিক
হঠাৎ তুমি মেঘে ঢাকা তারা
শীতার্ত অরণ্যের স্তব্ধতা
পাথরের ভেতরে পাথর
হঠাৎ তুমি ডুমুর পাতার নিচে
অন্ধকার।

হঠাৎ তুমি সবুজ পাতার ইঞ্জিন,
হঠাৎ তুমি অরণ্যকে টেনে
নিয়ে যাও বসন্তের দিকে।

হঠাৎ তুমি শব্দের ভেতরে শব্দ
ঝরনার ভেতরে ঝরনা
হঠাৎ তুমি আপেলের বুকে
বিদ্ধ হয়ে যাওয়া শাণিত ছুরি।

হঠাৎ তুমি খাঁচার ভেতরে পাখি,
খাঁচার শিক কাটতে কাটতে হঠাৎ তুমি
মুক্ত হয়ে উড়ে যাও আকাশে।
হঠাৎ ডানার সাথে মেঘের ঘর্ষণ
লেগে পড়ে যাও মাটিতে।

হঠাৎ তুমি তাম্র যুগের অন্ধকার
সমীহ জাগানো তীর-ধনুক,
হঠাৎ তুমি নিজের মাথাটি
নিজেই ঢুকিয়ে দাও গনগনে চুল্লিতে,
হাঁসের মতো সেদ্ধ করে ফেল
নিজেকে নিজে।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা
করতে থাকি খাবার টেবিলে।

 

বর্ণমালা
কামার ফরিদ
পৃথিবীতে নেমে আসা প্রথম সকাল
হয়তবা এনেছিল শব্দের দ্যুতিময় চলমান রেল
হয়তবা বর্ণেরা ধ্বনিদের ভ্রুণ থেকে উঠে আসা
প্রথম মানব-গন্ধব বৃক্ষসহ নিষিদ্ধ দেয়াল ছুঁয়ে
বিদ্রোহ করেছিল স্বর্গীয় দ্বীপে।

আমাজান অরণ্যে তখন তারাদের উৎসবে
মুখরিত সুন্দরী চাঁদ, পাখিরা সানাই ঠোঁটে
জ্যোৎস্নাকে ধরে রাখে জোনাকের নরম ডানায়।
উৎসব ঘুমিয়ে গেলে নদীর বুকেতে এসে
ঝাঁপ দেয় মাতাল ধীবর, জলের ঘ্রাণের মাঝে
নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে কথা বলে ইলিশের সাথে।

বর্ণেরা উঠে এসে শব্দের হাত ধরে
পায়ে-পায়ে হেঁটে যায় জীবনের পথে
শঙ্খচিলের সাথে শব্দেরা খেলা করে যমুনার চরে
চলাচলে খুঁজে পায় জীবনের সবটুকু ওম
নকশিকাঁথার নিচে টেনে নেয় মানিকের গল্প এবং
লালনের বাউল স্বভাব।

 


যথেষ্ট হয়েছে
মাহবুব হাসান

আর ইতরামি করো না যথেষ্ট হয়েছে।
রক্তাক্ত স্মৃতির ওপর ভ্যালেনটাইনের নামে
ছিটিয়ে দিয়ো না তোমাদের মূর্খ ঘৃণা।

গোলাপের লাল দেখেছো কেবল
দেখোনি তার রক্তাক্ত মুখ!
তাকে যে হত্যা করা হয়েছে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি
সেই নিহত সময় কী তোমাদের রাজনৈতিক স্বভাবে নেই?

যথেষ্ট হয়েছে
ইতিহাস মুছে দিয়ো না ভালোবাসা দিবসের নামে।
একটি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি।
তুমি কি দেখতে পাও না হে
দেখতে পাও না কী একটি শাদা পেরেক তোমার বুকে
ঢুকে যাচ্ছে একুশের মহিমা রক্তাক্ত করে?

তুমি দেখতে পাও না
তুমি অন্ধ
তুমি শুনতে পাও না
কেন না তুমি বধির,
তোমাদের মর্ম ভাড়া করে নিয়ে গেছে বর্ণবাদের দোসর

তুমি মানুষের কান্নার কোনো মানে জানো না!

 

মৃত্যুকে তুচ্ছ করে
অনজন রহমান
মৃত্যুকে তুচ্ছ করে
তোমাদের মাঝে আবার এসে দাঁড়িয়েছি আমি
সবাই তো ধরেই নিয়েছিলো
রাক্ষুসি প্রেমিকা করোনা
হয়তো আমাকে গ্রাসই করেছে...

না না না
ঈশ্বরের দুনিয়ায়
সততা ও ভালোবাসাকে
গ্রাস করা কঠিন।

জেগে ওঠো, জেগে ওঠো মানুষ
পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসো

প্রকৃতি ভালোবাসতে জানে
প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে জানে

এখন চলছে
প্রকৃতির প্রতিশোধের সময়
সাধু সাবধান, সাবধান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন